|| কালী ||
" ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভূজাম ।
কালীকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম ।।"
দশমহাবিদ্যাগণের প্রথমা দেবী হলেন কালী ।
ইনি আদ্যাশক্তি অপরাজিতা।
মহাভাগবত পুরাণমতে ইনার বিধ্বংসী রূপ মহাকালী নামে খ্যাতা । মহাকালের মহাশক্তি ইনি ।
'কালী' হলো 'কাল' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ । 'কাল' শব্দের অর্থ 'সময়' এবং অপর অর্থে 'মৃত্যু'
কালকে কলন (রচনা) করেন যিনি , তিনিই কালী । ঘোর কৃষ্ণবর্ণা ত্রিনয়নী এই দেবীর উগ্র ও সৌম্য , দুই রূপই সিদ্ধিপ্রদায়িনী । কালী মহামায়ার আদিরূপ । তিনি রূপে রূপান্তরে সহস্রনরূপা হন ।
দেবী কালীকার বুৎপত্তি নানাভাবে প্রসিদ্ধ ।
শম্ভ-নিশুম্ভ বধের জন্য পার্বতী ছলনাশ্রয়ী হলেন । ধারণ করলেন দেবী কৌশিকীর অপার লাবণ্যময়ী রূপ । সেই রূপে মোহিত হয়ে অসুরদ্বয় তাকে বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণ করলে দেবী তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যে পুরুষ তাকে সন্মুখসমরে পরাজিত করতে পারবে তাকেই তিনি বরমাল্য প্রদান করবেন।
অতঃপর এমন আপ্তবাক্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অসুর নৃপতিদ্বয় যুদ্ধ সূচনা করলেন । সেই যুদ্ধের সেনাপতি নির্বাচিত হলেন মহাক্রূর রক্তবীজ ! যার অলৌকিক ক্ষমতা এই যে, তার রক্তবিন্দু ভূমিষ্ঠ হলেই জন্ম নেবে সমান শক্তিশালী অপর একটি রক্তবীজ। এই দৈত্য দলনে অক্ষম চন্ডিকা (কৌশিকী) মহাক্রোধে তৃতীয় নয়ন উন্মীলিত করলেন এবং সেখান থেকে নিগর্ত হতে থাকা ত্যেজঃজ্যোতিপুঞ্জ থেকে আবির্ভূতা হলেন কালীকা । করালবদনা কৃষ্ণাঙ্গী মুন্ডমালাবিভূষিতা এই দেবীর রূপে দানবসেনা সন্ত্রস্ত হলো । তিনি ভয়ালরূপা দৈত্যদলনী হয়ে অবতীর্ণা হলেন রণভূমে । তার রক্ত পিপাসু জিহ্বা দ্বারা শত শত অসুর সেনা ভক্ষণ করতে শুরু করলেন তিনি। একেকটা ফুৎকারে নিশ্চিহ্ন হতে লাগলো অগণিত অসুর।
অবশেষে তিনি পৌঁছালেন রক্তবীজের নিকট। তার মুখ্য আয়ুধ খড়্গ দ্বারা বারংবার রক্তবীজের মুন্ডচ্ছেদ করলেও রক্ত মাটিতে পরা মাত্র জন্ম নিতে থাকলো নবজীবনপ্রাপ্ত হাজার হাজার রক্তবীজ । অতঃপর কালী রক্ত পান করার সিদ্ধান্ত নিলেন । একের পর এক রক্তবীজকে হত্যা করে তাদের শরীরের সমস্ত রক্ত পান করে চললে দেবী ।
অন্তীম রক্তবীজ দমন করে তিনি উন্মাদিনী হয়ে উঠলেন। তার জিঘাংসা বর্ধিত হলো । এবং রক্তের অঞ্জলী প্রাপ্তির আশায় তিনি মহাপ্রলয় শুরু করে দিলেন।
শুরু হলো ত্রিলোক কাপানো মহাকালীর লাস্য । অর্থাৎ দেবী যে ভঙ্গিতে নৃত্যপ্রদর্শন করেন তাকে বলা হয় লাস্য । যেমন পরমপুরুষের নৃত্য তান্ডব, তেমনি পরমাপ্রকৃতির নৃত্য হলো লাস্য।
এই লাস্যরতা আলুলায়িতকুন্তলা দেবীকে শান্ত না করা হলে সংসার রসাতলে যাবে , সেই আশঙ্কায় মহাদেব রণভূমে অবতীর্ণ হলেন । এবং দেবীর নৃত্য-কক্ষপথে শয়ন করলেন । দেবী নাচ করতে করতে অখেয়ালে শিবের বুকে তার ডান পা স্থাপন করলেন লজ্জায় তার লোলজিহ্বা বাহির করলেন । এই সর্বজনবিদিত সর্বজনীন রূপটি দক্ষিণাকালী রূপে পূজিত ।
কালীকাপুরাণের অপর একটি উপাখ্যানে পাওয়া যায় ভিন্ন একটি কাহিনী ।
সংসারযাপনে দাম্পত্যকলহ হরগৌরীর নিত্য সাথী । একদা শিবের প্রতি ভীষণ অভিমানে দেবী নদীর তীরে নিরালায় চলে যান ।শিব খুঁজতে খুঁজতে দেবীর কাছে এলে , দেবীর দুই আয়তাক্ষীর কাজল থেকে জন্ম নিলেন কালী । এবং বারংবার শিবের গতিরোধ করতে থাকলেন নানান ছলনায়। মহাদেব নিরুপায় হয়ে কালীর সামনে আত্মসমর্পণ করলেন এবং দেবীর আত্মপরিচয় ব্যক্ত করতে বললেন। দেবী কালী পতির আত্মসমর্পণে তুষ্ট হয়ে মেঘবর্ণা রূপ ত্যাগ করে গৌরী রূপে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং যুগলের পূণর্মিলন ঘটলো ।
ইনি মূলত অনার্য দেবী এবং প্রধান তান্ত্রিক দেবী । সপ্তদশ শতকে নবদ্বীপ এলাকায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম এই দক্ষিণাকালী রূপে পুজোর প্রচলন করেন বঙ্গদেশে ।
এবং আগমশাস্ত্রীয় মতে নিষ্ক্রিয় পুরুষ ও সক্রিয় প্রকৃতি, তাই দেবীর পদতলে ভোলার অবস্থান ।
মহামায়ার এই ভয়ংকর রূপ মাতৃস্নেহে পরিপূর্ণা । তিনি সৃষ্টি, তিনি স্থিতি আবার তিনিই লয় । তিনি ধাত্রী । তিনি বিধ্বংসী । অর্থাৎ সময়ের সমস্ত ধারাবাহিকতা এনার অঙ্গুলি নির্দেশনায় চলে । তাই তিনি আদ্যাশক্তি দেবী কালী ।।
" ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভূজাম ।
কালীকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম ।।"
দশমহাবিদ্যাগণের প্রথমা দেবী হলেন কালী ।
ইনি আদ্যাশক্তি অপরাজিতা।
মহাভাগবত পুরাণমতে ইনার বিধ্বংসী রূপ মহাকালী নামে খ্যাতা । মহাকালের মহাশক্তি ইনি ।
'কালী' হলো 'কাল' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ । 'কাল' শব্দের অর্থ 'সময়' এবং অপর অর্থে 'মৃত্যু'
কালকে কলন (রচনা) করেন যিনি , তিনিই কালী । ঘোর কৃষ্ণবর্ণা ত্রিনয়নী এই দেবীর উগ্র ও সৌম্য , দুই রূপই সিদ্ধিপ্রদায়িনী । কালী মহামায়ার আদিরূপ । তিনি রূপে রূপান্তরে সহস্রনরূপা হন ।
দেবী কালীকার বুৎপত্তি নানাভাবে প্রসিদ্ধ ।
শম্ভ-নিশুম্ভ বধের জন্য পার্বতী ছলনাশ্রয়ী হলেন । ধারণ করলেন দেবী কৌশিকীর অপার লাবণ্যময়ী রূপ । সেই রূপে মোহিত হয়ে অসুরদ্বয় তাকে বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণ করলে দেবী তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যে পুরুষ তাকে সন্মুখসমরে পরাজিত করতে পারবে তাকেই তিনি বরমাল্য প্রদান করবেন।
অতঃপর এমন আপ্তবাক্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অসুর নৃপতিদ্বয় যুদ্ধ সূচনা করলেন । সেই যুদ্ধের সেনাপতি নির্বাচিত হলেন মহাক্রূর রক্তবীজ ! যার অলৌকিক ক্ষমতা এই যে, তার রক্তবিন্দু ভূমিষ্ঠ হলেই জন্ম নেবে সমান শক্তিশালী অপর একটি রক্তবীজ। এই দৈত্য দলনে অক্ষম চন্ডিকা (কৌশিকী) মহাক্রোধে তৃতীয় নয়ন উন্মীলিত করলেন এবং সেখান থেকে নিগর্ত হতে থাকা ত্যেজঃজ্যোতিপুঞ্জ থেকে আবির্ভূতা হলেন কালীকা । করালবদনা কৃষ্ণাঙ্গী মুন্ডমালাবিভূষিতা এই দেবীর রূপে দানবসেনা সন্ত্রস্ত হলো । তিনি ভয়ালরূপা দৈত্যদলনী হয়ে অবতীর্ণা হলেন রণভূমে । তার রক্ত পিপাসু জিহ্বা দ্বারা শত শত অসুর সেনা ভক্ষণ করতে শুরু করলেন তিনি। একেকটা ফুৎকারে নিশ্চিহ্ন হতে লাগলো অগণিত অসুর।
অবশেষে তিনি পৌঁছালেন রক্তবীজের নিকট। তার মুখ্য আয়ুধ খড়্গ দ্বারা বারংবার রক্তবীজের মুন্ডচ্ছেদ করলেও রক্ত মাটিতে পরা মাত্র জন্ম নিতে থাকলো নবজীবনপ্রাপ্ত হাজার হাজার রক্তবীজ । অতঃপর কালী রক্ত পান করার সিদ্ধান্ত নিলেন । একের পর এক রক্তবীজকে হত্যা করে তাদের শরীরের সমস্ত রক্ত পান করে চললে দেবী ।
অন্তীম রক্তবীজ দমন করে তিনি উন্মাদিনী হয়ে উঠলেন। তার জিঘাংসা বর্ধিত হলো । এবং রক্তের অঞ্জলী প্রাপ্তির আশায় তিনি মহাপ্রলয় শুরু করে দিলেন।
শুরু হলো ত্রিলোক কাপানো মহাকালীর লাস্য । অর্থাৎ দেবী যে ভঙ্গিতে নৃত্যপ্রদর্শন করেন তাকে বলা হয় লাস্য । যেমন পরমপুরুষের নৃত্য তান্ডব, তেমনি পরমাপ্রকৃতির নৃত্য হলো লাস্য।
এই লাস্যরতা আলুলায়িতকুন্তলা দেবীকে শান্ত না করা হলে সংসার রসাতলে যাবে , সেই আশঙ্কায় মহাদেব রণভূমে অবতীর্ণ হলেন । এবং দেবীর নৃত্য-কক্ষপথে শয়ন করলেন । দেবী নাচ করতে করতে অখেয়ালে শিবের বুকে তার ডান পা স্থাপন করলেন লজ্জায় তার লোলজিহ্বা বাহির করলেন । এই সর্বজনবিদিত সর্বজনীন রূপটি দক্ষিণাকালী রূপে পূজিত ।
কালীকাপুরাণের অপর একটি উপাখ্যানে পাওয়া যায় ভিন্ন একটি কাহিনী ।
সংসারযাপনে দাম্পত্যকলহ হরগৌরীর নিত্য সাথী । একদা শিবের প্রতি ভীষণ অভিমানে দেবী নদীর তীরে নিরালায় চলে যান ।শিব খুঁজতে খুঁজতে দেবীর কাছে এলে , দেবীর দুই আয়তাক্ষীর কাজল থেকে জন্ম নিলেন কালী । এবং বারংবার শিবের গতিরোধ করতে থাকলেন নানান ছলনায়। মহাদেব নিরুপায় হয়ে কালীর সামনে আত্মসমর্পণ করলেন এবং দেবীর আত্মপরিচয় ব্যক্ত করতে বললেন। দেবী কালী পতির আত্মসমর্পণে তুষ্ট হয়ে মেঘবর্ণা রূপ ত্যাগ করে গৌরী রূপে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং যুগলের পূণর্মিলন ঘটলো ।
ইনি মূলত অনার্য দেবী এবং প্রধান তান্ত্রিক দেবী । সপ্তদশ শতকে নবদ্বীপ এলাকায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম এই দক্ষিণাকালী রূপে পুজোর প্রচলন করেন বঙ্গদেশে ।
এবং আগমশাস্ত্রীয় মতে নিষ্ক্রিয় পুরুষ ও সক্রিয় প্রকৃতি, তাই দেবীর পদতলে ভোলার অবস্থান ।
মহামায়ার এই ভয়ংকর রূপ মাতৃস্নেহে পরিপূর্ণা । তিনি সৃষ্টি, তিনি স্থিতি আবার তিনিই লয় । তিনি ধাত্রী । তিনি বিধ্বংসী । অর্থাৎ সময়ের সমস্ত ধারাবাহিকতা এনার অঙ্গুলি নির্দেশনায় চলে । তাই তিনি আদ্যাশক্তি দেবী কালী ।।
No comments:
Post a Comment