★★★ভগবান ভক্তের অধিন
#শ্রীখন্ড নিবাসী মুকুন্দ দাসের একমাত্র পুত্রের বয়স মাত্র বারো বছর। এই বারো বছরের শিশু, মুকুন্দ দাস আর ঘরের বিগ্রহ গোপীনাথ, এই হলো মুকুন্দের সংসার।
মুকন্দ দাস একজন কবিরাজ।
বাবা আগেকার সময়ে তো ডাক্তার ছিল না, গ্রামের কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে কবিরাজকে ডাকা হতো।
একদিন গ্রামে একজন অসুস্থ হওয়ায় মুকুন্দ দাসের ডাক পড়ে গেল। মুকুন্দ দাস গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে যে আমি একা মানুষ কোন দিকে যাব!!!
একদিকে আমার ঘরে গোপিনাথের সেবা আরেকদিকে আমার গ্রামের একজন অসুস্থ। গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তখন বাবাকে চিন্তিত দেখে বারো বছরের শিশু বলছে বাবা তুমি বসে বসে কি ভাবছ? ছেলের কথা শুনে বাবা বলছে, দেখ বাবা আমি একটা চিন্তায় পড়েছি একদিকে আমার ঘরে গোপিনাথের সেবা ঠিক দুপুর বেলায়, আবার এইদিকে গ্রামের একজন অসুস্থ, আমার ডাক পড়েছে সেখানে যেতে হবে।
#আমি যে কি করবো এটাই ভাবছি, ছোট্ট পুত্র বলছে বাবা তুমি এক কাজ করো-গ্রামের কাজটা তো আর আমি করতে পারব না, ঔ কবিরাজি তো আমি পারব না ,তুমি চলে যাও গ্রামের কাজে আর আমি ঘরে বিগ্রহ সেবা ,গোপিনাথের সেবা আমি দিয়ে দেবো। এই কথা শুনে বাবা বলছে ওরে খোকা ভগবানের সেবা বললেই তো আর সেবা দেওয়া যায় না, তাকে সেবা দিতে গেলে অনেক মন্ত্র তন্ত্র জানতে হয় ,সেবা দেবার সময় নিবেদন মন্ত্র, সেবার পরে আসমানী মন্ত্র। তুই তো কোন মন্ত্র তন্ত্র জানিস না কি করে পূজা দিবি বল?
#ছোট্ট বালক বলছে বাবা আমি না হয় তোমার মতো মন্ত্র তন্ত্র জানিনা ,কিন্তু বাবা আমি যদি ভক্তিভরে ভালোবেসে গোপিনাথের সেবা দিই তিনি কি আমার সেবা নেবেন না?
মুকন্দ দাস চিন্তা করছে কথাটা তো ঠিক ,মন্ত্র নাইবা জানলো যদি হৃদয়ে ভক্তি থাকে ,ভক্তিভরে যদি সেবা দেয় ভগবান নিশ্চয়ই সেবা নেবেন। বাবা বলছে যাক বাবা তুই আমাকে বাঁচালি। শোন আমি না রান্নাটা করতে পারি নি, রান্নাঘরের সব কিছু গোছানো আছে তুই একটু কোন রকম রান্না করে আজকের সেবা টা দিয়ে দিস।
ঠিক আছে বাবা আমি গোপিনাথের সেবা দিয়ে দেবো। তুমি কোন চিন্তা করোনা। তুমি চলে যাও গ্রামের কাজে। বাবাকে পাঠিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গেছে গোপীনাথ এর জন্য রান্না করতে।
কিন্তু ছোট্ট বার বছরের শিশু সে তো রান্না করতে জানে না,রন্ধনশালায় গিয়ে দেখে সব কিছু গোছানো আছে কিন্তু রান্না হয়নি। তাই সমস্ত কিছু একসাথে এক পাত্রে দিয়ে রান্না বসিয়ে দিয়েছে। রান্না বসিয়ে দিয়ে বলছে, শুনো গোপীনাথ আজ কিন্তু বাবা ঘরে নেই, আমি যেমন করে রান্না করবো সেই ভাবেই তোমাকে সেবা নিতে হবে। রান্না শেষ করে একটা পাত্রের মধ্যে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেছে,মন্দিরে প্রবেশ করে গোপীনাথ কে ডাকছে গোপীনাথ ওগো গোপীনাথ রান্না কেমন হয়েছে?
জানিনা আজ বাবা ঘরে নেই আজ আমি রান্না করেছি তোমার জন্য। তুমি কিন্তু একটু কষ্ট করে সেবা করে নেবে। কারন আমি তো কোনদিন রান্না করিনি জানিনা কেমন হয়েছে আজ একটু কষ্ট করে সেবা করে নাও, কালকে বাবা এসে তোমায় ভালো করে রান্না করে সেবা দেবে।
ডাকছে- কিন্তু গোপীনাথ তো আর আসছে না। ডাকছে ও গোপীনাথ দাঁড়িয়ে আছো যে, তাড়াতাড়ি এসো তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। কত কষ্ট হয়েছে জানো রান্না করতে আমার। আমি তো কোনদিন রান্না করিনি, এস শিগগির এসে সেবা করে নাও।এত ডাকছে তবুও গোপীনাথ আসছে না।
#হে ভক্তগণ,
#আমরাও তো ভগবানের সেবা দিই, গোবিন্দ আসেকি? তিনি সেবা নেন কি?
বালক চিন্তা করছে কি হলো প্রতিদিন তো বাবা সেবা দেয়, কই আজ কেন আসছে না?
কি হলো দেখিতো!!!
চারদিকে খুঁজতে খুঁজতে দেখল মন্দিরের দরোজাটা খোলা।
ও এইতো বাবা প্রতিদিন সেবা দেবার সময় দরজা বন্ধ করে সেবা দেয়, আজকে দরজা খোলা তাই তুমি আসছো না... তাই মনে হয়। গোপীনাথ ,ঔ দেখো দরজা বন্ধ করে দিয়েছি আর এসে সেবা করে নাও।
ওগো কখন থেকে ডাকছি তোমায় তুমি কি শুনতে পাও না? আমার কি কষ্ট হয় না? কখন থেকে তোমায় ডাকছি এসো গোপীনাথ, তুমি জানো কত কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করেছি?
এসো তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। গোপীনাথ ওগো একবার এসে সেবা নিয়ে যাও গোপীনাথ। গোপীনাথ গোপীনাথ গোপীনাথ বলে কাঁদছে আর গোপীনাথ কে ডাকছে।
ছোট্ট ছেলেটি বলছে কি মনে করছো ,আমি কখন থেকে তোমায় ডাকছি, শুনো গোপীনাথ আমি যখন না সেবা নিই, তখন আমার বাবা আমাকে জোর করে খাওয়ায়। আজ তুমি আসবে নাতো দাড়াও। মন্দির থেকে বাহিরে গিয়ে খুঁজে খুঁজেএকটা লাঠি যোগাড় করলো।
লাঠিটা হাতে করে নিয়ে মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করে বলছে গোপীনাথ দেখতে পারছ আমার হাতে কি আছে?
আমি যখন না খাই আমার বাবা আমায় মেরে মেরে খাওয়ায়। যদি তুমি ভালো চাও তবে চলে এসো। কি ভেবেছ আজ বাবা ঘরে নেই তাই আসবে না!!! আমার কি কষ্ট হয় না? যদি ভালো চাও চলে এসো। তা না হলে এই লাঠি দিয়ে তোমার মেরে মেরে নিয়ে আসবো। ভক্ত যেইনা লাঠির ভয় দেখিয়েছে মা ভগবান কি আর দূরে থাকতে পারে।হরিবল হরিবল।
পাথরের মূর্তি ভগবান মনে মনে বলছে ভক্ত তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো? আমাকে লাঠির ভয় দেখাচ্ছ? আর তোমাকে লাঠির ভয় দেখাতে হবে না, এইতো চলে আসছি।
পাথর থেকে সচল মূর্তি ধারণ করে এক পা দু পা করে পাতা আসনে বসেছে। রঘুনন্দন মনে মনে চিন্তা করছে দেখেছো এত সময় ডাকছি তখন আর আসছিলেনা যেইনা লাঠির ভয় দেখেছি তখনই চলে আসছে। রঘুনন্দন বলছে শিগগিরই সেবা করে নাও। আজ আমি রান্না করেছি জানিনা কেমন হয়েছে?
তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। ভগবান এক মুষ্টি হাতে নিয়ে বলছে ভক্ত তুমি জানোনা ভক্ত এতদিন তোমাদের ঘরে আমি আছি ,কিন্তু এমন অমৃত এর আগে কখনো সেবা করিনি। আমার ভক্ত আমার জন্য রান্না করেছে সে কি কখনো খারাপ হতে পারে?
ভগবান বলছে এ তো অমৃত। এমন খাবার আমি আগে কখনো সেবা করিনি। ভগবানের সেবা করছে, রঘুনন্দন পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেবা করতে করতে প্রায় শেষ হয়ে গেছে আর নেই। একটুখানি গোপীনাথের হাতে আছে ঠিক তখন রঘুনন্দন দেখে গোপিনাথের হাতটা চেপে ধরেছে। গোপীনাথ তুমি কেমন বলতো আগে তো আসছিলে না। আগে তো আসছিলে না ,এসেছো ঠিক আছে, সেবা করছো করো, কিন্তু তাই বলে সবটুকু সেবা করে নেবে!!!
এখনো তো আমি আর আমার বাবা বাকি আছি, রান্না করে সবটুকু যে তোমায় ধরে দিয়েছি ,আমাদের জন্য একটু রেখে দাও।
ভগবান বলছেন জানো আজ না তোমার হাতের রান্না পেয়ে আমার কারো কথা মনে ছিলনা। ঠিক আছে যতটুকু আছে ততটুকু তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি।
ওমা আনমান করে বিগ্রহে গিয়ে মিলিত হয়েছে গোপীনাথ। পাত্রে তো বেশি ছিল না যতটুকু ছিল রঘুনন্দন সেইটুকু সেবা করে পাত্রটি ধৌত করে তুলে রেখেছে।
যথাসময়ে মুকন্দ দাস বাড়ি ফিরেছে। ছেলেকে ডাকছে রঘুনন্দন আমি যে বলে গিয়েছিলাম গোপীনাথের সেবা দিতে দিয়েছিস বাবা? হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা সেবা দিয়েছি। তোমার কোন চিন্তা করতে হবে না বাবা। আমি সেবা দিয়ে দিয়েছি তোমার গোপীনাথের।
এবার আমাকে একটু প্রসাদ দেতো বাবা।
#প্রসাদ?? #প্রসাদ নেই বাবা। কেন? কোন বন্ধু বা আত্মীয় এসেছিল? নাকি কোন ভক্ত এসেছিল? কেউ আসেনি বাবা। কে আসবে? তোমার গোপীনাথ তো সব সেবা করে ফেলেছিল। ভাগ্যিস আমি হাতটা চেপে ধরেছিলাম বলে আমার জন্য একটুকু রেখে দিয়েছিল। যেটুকু রেখেছিল সেইটুকুই আমি সেবা করে নিয়েছি বাবা।
#মুকুন্দদাস মনে মনে ভাবছে যে এতদিন আমি সেবা দিই ,কোনদিন গোপীনাথ সেবা করে না, আর আজ আমি ঘরে নাই আজ সেবা করে নিল? মিথ্যে কথা!!! আমার পুত্র মিথ্যে কথা বলছে। কারণ সে তো পাথরের মূর্তি / বিগ্রহ সে তো এসে বলবে না ও মুকুন্দ আমি সেবা করিনি তোমার ছেলেই প্রসাদ সবটুকু সেবা করেছে। সে তো পাথর সে তো কথা বলতে পারেনা।
হে ভক্তগন,
#যার যেমন ভাগ্য মা। মুকুন্দ দাস সারাজীবন পাথর এর বিগ্রহ ভেবে চিরকাল সেবা দিয়েছে। আর তার ছেলে ররঘুনন্দন দাস সেবা দিয়েছে আপনজন/ নিজের জন ভেবে। সে জানে আমি যেমন বাবার সন্তান এই গোপীনাথ ও আমার বাবার সন্তান। তাইতো সে দেখা পেল মুকন্দদাস দেখা পেল না।
#মুকন্দ দাসের মনের সন্দেহ মনেই থেকে গেল। পরেরদিন মুকন্দ দাস ছেলেকে পরীক্ষা করার জন্য বলছে রঘুনন্দন তুইতো ভালো পূজা দিতে শিখেছিস বাবা, জানিস বাবা গ্রামে আজও যেতে হবে। তাই তুই এক কাজ করিস। আজ আর রান্না করতে হবে না ঘরে নাড়ু তৈরি করা আছে গোপীনাথ নাড়ু সেবা করতে ভালোবাসে। তুই একটু নাড়ুটা দিয়ে সেবা দিয়ে দিস। রঘুনন্দন বলছে ঠিক আছে বাবা তুমি কোন চিন্তা করো না, আমি ঠিক সময় মতো গোপিনাথের সেবা দিয়ে দিব।
একটা পাত্রে নাড়ু সাজিয়ে দিয়ে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করছে। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে গোপীনাথ কে ডাকছে গোপীনাথ ও গোপিনাথ আমাকে চিনতে পারছ তো? কালকে এসেছিলাম আজ কিন্তু এত ডাকতে পারবো না। শিগগিরি চলে এসো। বাবা বলেছে তুমি নাকি নাড়ু সেবা করতে ভালোবাসো। তাই বাবা তোমার জন্য নাড়ু করে রেখেছিল সেটাই এনেছি তাড়াতাড়ি এসে সেবা করে নাও।
ওমা ভগবান পাথরের ভিগ্রহ থেকে সচল মূর্তি ধারণ করে বলছে, ভক্ত আর তোমাকে ডাকতে হবে না। কোন ভক্ত যদি আমাকে একবার ডাকার মত ডাকে আমি এক ডাকেই সারা দিই। সারা জনম ডাকা লাগেনা গো। কোন ভক্তের ডাক যদি আমার কানে একবার পৌঁছায় আমি জনম জনম তাকে ভুলি না। আর তোমাকে ডাকতে হবে না। এইতো আমি চলে এসেছি।
পাতা আসনে বসে বলছে ভক্ত তুমি আমার জন্য নাড়ু করেছ? না না আমি করিনি। আমার বাবা তৈরি করেছে। গোপিনাথ মনে মনে বলছে বাবাই তৈরি করুক আর যেই তৈরি করুক আমার ভক্তের তো হাতের ছোঁয়া লেগে আছে।
একটা নাড়ু নিয়ে যেইনা বদনে দিয়েছে গোপীনাথ ঠিক সেইসময় রঘুনন্দন পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কালকের মত আজও আমি দাঁড়িয়ে থাকি আর একটু একটু করে গোপীনাথ সব সেবা করে নেবে। আজ আর তা হতে দেব না। আজ গোপীনাথ ও সেবা করবে আমিও সেবা করব। সেই না বললে গোপিনাথের পাত্র থেকে একটা নাড়ু তুলে নিয়েছে আর তুলে নিয়ে বদনে দিয়েছে। যেই না ভালো লেগেছে অর্ধেকটা সেবা করেছে আর অর্ধেকটা এঠু নাড়ু গোপীনাথের বদনে ধরেছে, আর রঘুনন্দন বলছে সেবা করে দেখো গোপীনাথ, আমার বাবা তৈরি করেছে তোমার জন্য ,কত সুন্দর হয়েছে কত সুস্বাদু হয়েছে।
ওমা অন্ধ ভালোবাসা। এই মধুর প্রেম। ভগবান অঝোর নয়নে কাঁদছে আর মনে মনে বলছে-আর ভগবানকে কাঁদতে দেখে রঘুনন্দন মনে মনে ভাবছে আমি মনে হয় এঠো নাড়ু দিয়েছি বলে গোপীনাথ কাঁদছে?
ও গোপীনাথ তুমি কাঁদছো ,আমি এঠো নাড়ু দিয়েছি তাই তুমি কাঁদছো? ঠিক আছে তুমি কেঁদোনা আমি আর তোমাকে আমার এঠো নাড়ু দেবো না। কেন জানো আমি তোমাকে আমার এঠো নাড়ু দিয়েছিলাম? আমার যে ভালো লেগেছিল। তাই তোমায় আমি আমার এঠু নাড়ু দিয়েছিলাম। তুমি কেঁদোনা গোপীনাথ।
ভগবান বলছে ভক্ত তুমি আমাকে এঠো নাড়ু দিয়েছো বলে আমি কাঁদছি না। আমি কাঁদছি কেন জানো ভক্ত? তুমি যদি আমায় তোমার এঠো নাড়ু খাইয়ে দিতে পারো, আমি কি আমার প্রসাদি নাড়ু তোমাকে খাইয়ে দিতে পারি না ? রঘুনন্দন বলছে নিশ্চয়ই,ভগবান বলছে তুমি আমাকে খাইয়ে দাও, আর আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। ভক্ত ভগবানের মধুর মিলন, মধুর ভালোবাসা, মধুর প্রেম।
মুকুন্দ দাস মন্দিরের আড়ালে চুপিচুপি লুকিয়ে আছে সে আর সহ্য করতে পারছে না।
হঠাৎ সে শুনতে পেল মন্দিরের ভিতরে আমার পুত্র ছাড়াও একজনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, তবে কে সে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছে, আর যেই না দরজা খুলেছে ভগবান অর্ধনাড়ু রেখেই পাথরের মূর্তিতে অবস্থান নেন। মুকুন্দ দাস ছুটে গিয়ে সন্তানকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলছে, ওরে রঘুনন্দন এতদিনে সেবা আমার অযোগ্য হলো বাবা। আমি ভগবান কে সেবা দিয়েছি পাথরের মূর্তি / বিগ্রহ ভেবে আর তুই সেবা দিয়েছিস আপনজন ভেবে। তাইতো তুই তার দেখা পেলি আমি পেলাম না। আয় বাবা আমার বুকে আয়। এতদিনের আমার অযোগ্য দেহ যোগ্য করি।
হে ভক্তগণ,----
আমিও তো ভগবান কে ভালবাসি, সেবা দেই। কিন্তু আমার যে গোবিন্দ কে দর্শন করার প্রেমের নয়ন/ জ্ঞানের নয়ন/ ভক্তির নয়ন নেই। আমিতো তার যুগল চরণ দেখতে পেলাম না। আমি তো তার কোনদিন রুপখানি দর্শন করি নি। আমি তো কখনো তার চরণে নূপুরের শব্দ শুনতে পারি নি, আমিতো তার মুখের বাঁশীর ধ্বনি শুনতে পারিনি । আমার অন্তরে কৃষ্ণ চরণে সেবা করার অনুরাগ নেই।
হরে কৃষ্ণ,,,,,,,,,,,,
#শ্রীখন্ড নিবাসী মুকুন্দ দাসের একমাত্র পুত্রের বয়স মাত্র বারো বছর। এই বারো বছরের শিশু, মুকুন্দ দাস আর ঘরের বিগ্রহ গোপীনাথ, এই হলো মুকুন্দের সংসার।
মুকন্দ দাস একজন কবিরাজ।
বাবা আগেকার সময়ে তো ডাক্তার ছিল না, গ্রামের কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে কবিরাজকে ডাকা হতো।
একদিন গ্রামে একজন অসুস্থ হওয়ায় মুকুন্দ দাসের ডাক পড়ে গেল। মুকুন্দ দাস গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে যে আমি একা মানুষ কোন দিকে যাব!!!
একদিকে আমার ঘরে গোপিনাথের সেবা আরেকদিকে আমার গ্রামের একজন অসুস্থ। গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তখন বাবাকে চিন্তিত দেখে বারো বছরের শিশু বলছে বাবা তুমি বসে বসে কি ভাবছ? ছেলের কথা শুনে বাবা বলছে, দেখ বাবা আমি একটা চিন্তায় পড়েছি একদিকে আমার ঘরে গোপিনাথের সেবা ঠিক দুপুর বেলায়, আবার এইদিকে গ্রামের একজন অসুস্থ, আমার ডাক পড়েছে সেখানে যেতে হবে।
#আমি যে কি করবো এটাই ভাবছি, ছোট্ট পুত্র বলছে বাবা তুমি এক কাজ করো-গ্রামের কাজটা তো আর আমি করতে পারব না, ঔ কবিরাজি তো আমি পারব না ,তুমি চলে যাও গ্রামের কাজে আর আমি ঘরে বিগ্রহ সেবা ,গোপিনাথের সেবা আমি দিয়ে দেবো। এই কথা শুনে বাবা বলছে ওরে খোকা ভগবানের সেবা বললেই তো আর সেবা দেওয়া যায় না, তাকে সেবা দিতে গেলে অনেক মন্ত্র তন্ত্র জানতে হয় ,সেবা দেবার সময় নিবেদন মন্ত্র, সেবার পরে আসমানী মন্ত্র। তুই তো কোন মন্ত্র তন্ত্র জানিস না কি করে পূজা দিবি বল?
#ছোট্ট বালক বলছে বাবা আমি না হয় তোমার মতো মন্ত্র তন্ত্র জানিনা ,কিন্তু বাবা আমি যদি ভক্তিভরে ভালোবেসে গোপিনাথের সেবা দিই তিনি কি আমার সেবা নেবেন না?
মুকন্দ দাস চিন্তা করছে কথাটা তো ঠিক ,মন্ত্র নাইবা জানলো যদি হৃদয়ে ভক্তি থাকে ,ভক্তিভরে যদি সেবা দেয় ভগবান নিশ্চয়ই সেবা নেবেন। বাবা বলছে যাক বাবা তুই আমাকে বাঁচালি। শোন আমি না রান্নাটা করতে পারি নি, রান্নাঘরের সব কিছু গোছানো আছে তুই একটু কোন রকম রান্না করে আজকের সেবা টা দিয়ে দিস।
ঠিক আছে বাবা আমি গোপিনাথের সেবা দিয়ে দেবো। তুমি কোন চিন্তা করোনা। তুমি চলে যাও গ্রামের কাজে। বাবাকে পাঠিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গেছে গোপীনাথ এর জন্য রান্না করতে।
কিন্তু ছোট্ট বার বছরের শিশু সে তো রান্না করতে জানে না,রন্ধনশালায় গিয়ে দেখে সব কিছু গোছানো আছে কিন্তু রান্না হয়নি। তাই সমস্ত কিছু একসাথে এক পাত্রে দিয়ে রান্না বসিয়ে দিয়েছে। রান্না বসিয়ে দিয়ে বলছে, শুনো গোপীনাথ আজ কিন্তু বাবা ঘরে নেই, আমি যেমন করে রান্না করবো সেই ভাবেই তোমাকে সেবা নিতে হবে। রান্না শেষ করে একটা পাত্রের মধ্যে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেছে,মন্দিরে প্রবেশ করে গোপীনাথ কে ডাকছে গোপীনাথ ওগো গোপীনাথ রান্না কেমন হয়েছে?
জানিনা আজ বাবা ঘরে নেই আজ আমি রান্না করেছি তোমার জন্য। তুমি কিন্তু একটু কষ্ট করে সেবা করে নেবে। কারন আমি তো কোনদিন রান্না করিনি জানিনা কেমন হয়েছে আজ একটু কষ্ট করে সেবা করে নাও, কালকে বাবা এসে তোমায় ভালো করে রান্না করে সেবা দেবে।
ডাকছে- কিন্তু গোপীনাথ তো আর আসছে না। ডাকছে ও গোপীনাথ দাঁড়িয়ে আছো যে, তাড়াতাড়ি এসো তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। কত কষ্ট হয়েছে জানো রান্না করতে আমার। আমি তো কোনদিন রান্না করিনি, এস শিগগির এসে সেবা করে নাও।এত ডাকছে তবুও গোপীনাথ আসছে না।
#হে ভক্তগণ,
#আমরাও তো ভগবানের সেবা দিই, গোবিন্দ আসেকি? তিনি সেবা নেন কি?
বালক চিন্তা করছে কি হলো প্রতিদিন তো বাবা সেবা দেয়, কই আজ কেন আসছে না?
কি হলো দেখিতো!!!
চারদিকে খুঁজতে খুঁজতে দেখল মন্দিরের দরোজাটা খোলা।
ও এইতো বাবা প্রতিদিন সেবা দেবার সময় দরজা বন্ধ করে সেবা দেয়, আজকে দরজা খোলা তাই তুমি আসছো না... তাই মনে হয়। গোপীনাথ ,ঔ দেখো দরজা বন্ধ করে দিয়েছি আর এসে সেবা করে নাও।
ওগো কখন থেকে ডাকছি তোমায় তুমি কি শুনতে পাও না? আমার কি কষ্ট হয় না? কখন থেকে তোমায় ডাকছি এসো গোপীনাথ, তুমি জানো কত কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করেছি?
এসো তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। গোপীনাথ ওগো একবার এসে সেবা নিয়ে যাও গোপীনাথ। গোপীনাথ গোপীনাথ গোপীনাথ বলে কাঁদছে আর গোপীনাথ কে ডাকছে।
ছোট্ট ছেলেটি বলছে কি মনে করছো ,আমি কখন থেকে তোমায় ডাকছি, শুনো গোপীনাথ আমি যখন না সেবা নিই, তখন আমার বাবা আমাকে জোর করে খাওয়ায়। আজ তুমি আসবে নাতো দাড়াও। মন্দির থেকে বাহিরে গিয়ে খুঁজে খুঁজেএকটা লাঠি যোগাড় করলো।
লাঠিটা হাতে করে নিয়ে মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করে বলছে গোপীনাথ দেখতে পারছ আমার হাতে কি আছে?
আমি যখন না খাই আমার বাবা আমায় মেরে মেরে খাওয়ায়। যদি তুমি ভালো চাও তবে চলে এসো। কি ভেবেছ আজ বাবা ঘরে নেই তাই আসবে না!!! আমার কি কষ্ট হয় না? যদি ভালো চাও চলে এসো। তা না হলে এই লাঠি দিয়ে তোমার মেরে মেরে নিয়ে আসবো। ভক্ত যেইনা লাঠির ভয় দেখিয়েছে মা ভগবান কি আর দূরে থাকতে পারে।হরিবল হরিবল।
পাথরের মূর্তি ভগবান মনে মনে বলছে ভক্ত তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো? আমাকে লাঠির ভয় দেখাচ্ছ? আর তোমাকে লাঠির ভয় দেখাতে হবে না, এইতো চলে আসছি।
পাথর থেকে সচল মূর্তি ধারণ করে এক পা দু পা করে পাতা আসনে বসেছে। রঘুনন্দন মনে মনে চিন্তা করছে দেখেছো এত সময় ডাকছি তখন আর আসছিলেনা যেইনা লাঠির ভয় দেখেছি তখনই চলে আসছে। রঘুনন্দন বলছে শিগগিরই সেবা করে নাও। আজ আমি রান্না করেছি জানিনা কেমন হয়েছে?
তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। ভগবান এক মুষ্টি হাতে নিয়ে বলছে ভক্ত তুমি জানোনা ভক্ত এতদিন তোমাদের ঘরে আমি আছি ,কিন্তু এমন অমৃত এর আগে কখনো সেবা করিনি। আমার ভক্ত আমার জন্য রান্না করেছে সে কি কখনো খারাপ হতে পারে?
ভগবান বলছে এ তো অমৃত। এমন খাবার আমি আগে কখনো সেবা করিনি। ভগবানের সেবা করছে, রঘুনন্দন পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেবা করতে করতে প্রায় শেষ হয়ে গেছে আর নেই। একটুখানি গোপীনাথের হাতে আছে ঠিক তখন রঘুনন্দন দেখে গোপিনাথের হাতটা চেপে ধরেছে। গোপীনাথ তুমি কেমন বলতো আগে তো আসছিলে না। আগে তো আসছিলে না ,এসেছো ঠিক আছে, সেবা করছো করো, কিন্তু তাই বলে সবটুকু সেবা করে নেবে!!!
এখনো তো আমি আর আমার বাবা বাকি আছি, রান্না করে সবটুকু যে তোমায় ধরে দিয়েছি ,আমাদের জন্য একটু রেখে দাও।
ভগবান বলছেন জানো আজ না তোমার হাতের রান্না পেয়ে আমার কারো কথা মনে ছিলনা। ঠিক আছে যতটুকু আছে ততটুকু তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি।
ওমা আনমান করে বিগ্রহে গিয়ে মিলিত হয়েছে গোপীনাথ। পাত্রে তো বেশি ছিল না যতটুকু ছিল রঘুনন্দন সেইটুকু সেবা করে পাত্রটি ধৌত করে তুলে রেখেছে।
যথাসময়ে মুকন্দ দাস বাড়ি ফিরেছে। ছেলেকে ডাকছে রঘুনন্দন আমি যে বলে গিয়েছিলাম গোপীনাথের সেবা দিতে দিয়েছিস বাবা? হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা সেবা দিয়েছি। তোমার কোন চিন্তা করতে হবে না বাবা। আমি সেবা দিয়ে দিয়েছি তোমার গোপীনাথের।
এবার আমাকে একটু প্রসাদ দেতো বাবা।
#প্রসাদ?? #প্রসাদ নেই বাবা। কেন? কোন বন্ধু বা আত্মীয় এসেছিল? নাকি কোন ভক্ত এসেছিল? কেউ আসেনি বাবা। কে আসবে? তোমার গোপীনাথ তো সব সেবা করে ফেলেছিল। ভাগ্যিস আমি হাতটা চেপে ধরেছিলাম বলে আমার জন্য একটুকু রেখে দিয়েছিল। যেটুকু রেখেছিল সেইটুকুই আমি সেবা করে নিয়েছি বাবা।
#মুকুন্দদাস মনে মনে ভাবছে যে এতদিন আমি সেবা দিই ,কোনদিন গোপীনাথ সেবা করে না, আর আজ আমি ঘরে নাই আজ সেবা করে নিল? মিথ্যে কথা!!! আমার পুত্র মিথ্যে কথা বলছে। কারণ সে তো পাথরের মূর্তি / বিগ্রহ সে তো এসে বলবে না ও মুকুন্দ আমি সেবা করিনি তোমার ছেলেই প্রসাদ সবটুকু সেবা করেছে। সে তো পাথর সে তো কথা বলতে পারেনা।
হে ভক্তগন,
#যার যেমন ভাগ্য মা। মুকুন্দ দাস সারাজীবন পাথর এর বিগ্রহ ভেবে চিরকাল সেবা দিয়েছে। আর তার ছেলে ররঘুনন্দন দাস সেবা দিয়েছে আপনজন/ নিজের জন ভেবে। সে জানে আমি যেমন বাবার সন্তান এই গোপীনাথ ও আমার বাবার সন্তান। তাইতো সে দেখা পেল মুকন্দদাস দেখা পেল না।
#মুকন্দ দাসের মনের সন্দেহ মনেই থেকে গেল। পরেরদিন মুকন্দ দাস ছেলেকে পরীক্ষা করার জন্য বলছে রঘুনন্দন তুইতো ভালো পূজা দিতে শিখেছিস বাবা, জানিস বাবা গ্রামে আজও যেতে হবে। তাই তুই এক কাজ করিস। আজ আর রান্না করতে হবে না ঘরে নাড়ু তৈরি করা আছে গোপীনাথ নাড়ু সেবা করতে ভালোবাসে। তুই একটু নাড়ুটা দিয়ে সেবা দিয়ে দিস। রঘুনন্দন বলছে ঠিক আছে বাবা তুমি কোন চিন্তা করো না, আমি ঠিক সময় মতো গোপিনাথের সেবা দিয়ে দিব।
একটা পাত্রে নাড়ু সাজিয়ে দিয়ে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করছে। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে গোপীনাথ কে ডাকছে গোপীনাথ ও গোপিনাথ আমাকে চিনতে পারছ তো? কালকে এসেছিলাম আজ কিন্তু এত ডাকতে পারবো না। শিগগিরি চলে এসো। বাবা বলেছে তুমি নাকি নাড়ু সেবা করতে ভালোবাসো। তাই বাবা তোমার জন্য নাড়ু করে রেখেছিল সেটাই এনেছি তাড়াতাড়ি এসে সেবা করে নাও।
ওমা ভগবান পাথরের ভিগ্রহ থেকে সচল মূর্তি ধারণ করে বলছে, ভক্ত আর তোমাকে ডাকতে হবে না। কোন ভক্ত যদি আমাকে একবার ডাকার মত ডাকে আমি এক ডাকেই সারা দিই। সারা জনম ডাকা লাগেনা গো। কোন ভক্তের ডাক যদি আমার কানে একবার পৌঁছায় আমি জনম জনম তাকে ভুলি না। আর তোমাকে ডাকতে হবে না। এইতো আমি চলে এসেছি।
পাতা আসনে বসে বলছে ভক্ত তুমি আমার জন্য নাড়ু করেছ? না না আমি করিনি। আমার বাবা তৈরি করেছে। গোপিনাথ মনে মনে বলছে বাবাই তৈরি করুক আর যেই তৈরি করুক আমার ভক্তের তো হাতের ছোঁয়া লেগে আছে।
একটা নাড়ু নিয়ে যেইনা বদনে দিয়েছে গোপীনাথ ঠিক সেইসময় রঘুনন্দন পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কালকের মত আজও আমি দাঁড়িয়ে থাকি আর একটু একটু করে গোপীনাথ সব সেবা করে নেবে। আজ আর তা হতে দেব না। আজ গোপীনাথ ও সেবা করবে আমিও সেবা করব। সেই না বললে গোপিনাথের পাত্র থেকে একটা নাড়ু তুলে নিয়েছে আর তুলে নিয়ে বদনে দিয়েছে। যেই না ভালো লেগেছে অর্ধেকটা সেবা করেছে আর অর্ধেকটা এঠু নাড়ু গোপীনাথের বদনে ধরেছে, আর রঘুনন্দন বলছে সেবা করে দেখো গোপীনাথ, আমার বাবা তৈরি করেছে তোমার জন্য ,কত সুন্দর হয়েছে কত সুস্বাদু হয়েছে।
ওমা অন্ধ ভালোবাসা। এই মধুর প্রেম। ভগবান অঝোর নয়নে কাঁদছে আর মনে মনে বলছে-আর ভগবানকে কাঁদতে দেখে রঘুনন্দন মনে মনে ভাবছে আমি মনে হয় এঠো নাড়ু দিয়েছি বলে গোপীনাথ কাঁদছে?
ও গোপীনাথ তুমি কাঁদছো ,আমি এঠো নাড়ু দিয়েছি তাই তুমি কাঁদছো? ঠিক আছে তুমি কেঁদোনা আমি আর তোমাকে আমার এঠো নাড়ু দেবো না। কেন জানো আমি তোমাকে আমার এঠো নাড়ু দিয়েছিলাম? আমার যে ভালো লেগেছিল। তাই তোমায় আমি আমার এঠু নাড়ু দিয়েছিলাম। তুমি কেঁদোনা গোপীনাথ।
ভগবান বলছে ভক্ত তুমি আমাকে এঠো নাড়ু দিয়েছো বলে আমি কাঁদছি না। আমি কাঁদছি কেন জানো ভক্ত? তুমি যদি আমায় তোমার এঠো নাড়ু খাইয়ে দিতে পারো, আমি কি আমার প্রসাদি নাড়ু তোমাকে খাইয়ে দিতে পারি না ? রঘুনন্দন বলছে নিশ্চয়ই,ভগবান বলছে তুমি আমাকে খাইয়ে দাও, আর আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। ভক্ত ভগবানের মধুর মিলন, মধুর ভালোবাসা, মধুর প্রেম।
মুকুন্দ দাস মন্দিরের আড়ালে চুপিচুপি লুকিয়ে আছে সে আর সহ্য করতে পারছে না।
হঠাৎ সে শুনতে পেল মন্দিরের ভিতরে আমার পুত্র ছাড়াও একজনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, তবে কে সে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছে, আর যেই না দরজা খুলেছে ভগবান অর্ধনাড়ু রেখেই পাথরের মূর্তিতে অবস্থান নেন। মুকুন্দ দাস ছুটে গিয়ে সন্তানকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলছে, ওরে রঘুনন্দন এতদিনে সেবা আমার অযোগ্য হলো বাবা। আমি ভগবান কে সেবা দিয়েছি পাথরের মূর্তি / বিগ্রহ ভেবে আর তুই সেবা দিয়েছিস আপনজন ভেবে। তাইতো তুই তার দেখা পেলি আমি পেলাম না। আয় বাবা আমার বুকে আয়। এতদিনের আমার অযোগ্য দেহ যোগ্য করি।
হে ভক্তগণ,----
আমিও তো ভগবান কে ভালবাসি, সেবা দেই। কিন্তু আমার যে গোবিন্দ কে দর্শন করার প্রেমের নয়ন/ জ্ঞানের নয়ন/ ভক্তির নয়ন নেই। আমিতো তার যুগল চরণ দেখতে পেলাম না। আমি তো তার কোনদিন রুপখানি দর্শন করি নি। আমি তো কখনো তার চরণে নূপুরের শব্দ শুনতে পারি নি, আমিতো তার মুখের বাঁশীর ধ্বনি শুনতে পারিনি । আমার অন্তরে কৃষ্ণ চরণে সেবা করার অনুরাগ নেই।
হরে কৃষ্ণ,,,,,,,,,,,,
No comments:
Post a Comment