Thursday, April 30, 2020

শ্রীশ্রী নৃসিংহ চর্তুদশী

শ্রীশ্রী নৃসিংহ চর্তুদশী ব্রত মহোৎসব
অাগামি ৬ মে ২০২০ইং  রোজ বুধবার *২৩ বৈশাখ  গোধূলি লগ্ন পযর্ন্ত  নির্জলা উপবাস।

১০০০ টা ব্রত পালন করলে যে পূণ্য হয়, একটা নৃসিংহ চতুর্দশী কেউ ভক্তি ভরে করলে তার সেই পূণ্য হয় ।।
.
হিরণ্যকশিপুর কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মা তাকে দর্শন দেই ও তার কাছে বর চাইলেন, অমরত্ব বর। কিন্তু ব্রহ্মা বললেন হে হিরণ্যকশিপুর তুমি যে বর চেয়েছ সেটা অামি দিতে পারব না। কারণ অামি নিজেই অমরত্ব না, তাই তুমি এমন বর চাও যা অামি দিতে পারব ।।
.
তখন হিরণ্যকশিপুর চিন্তা করল অামি এমন বর চাইব যা অামাকে কেউ হত্যা করতে পারবে না, তখন হিরণ্যকশিপুর বর চাইতে লাগলেন যে,, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, অাপনি যদি অামার অভীষ্ট বরই দান করতে চান, তবে এই বর দেন যাতে অাপনার কোন সৃষ্টির কোনও প্রাণী বা পথে, ঘাটে,দিনের বেলা,রাতের বেলা, ঘরে, বাইরে, জল, ভূমি,বা অাকাশে, কোনও পশু,বা কোনও অস্ত্রের দ্বারা এসবের দ্বারা অামাকে বধ করতে না পারে,, বা ব্যাধিগ্রস্ত বা জরাগ্রস্ত না হই। ব্রহ্মা বলল তথাস্তু ।।
.
তারপর শুরু হল হিরণ্যকশিপুরের অত্যাচার দেবতাদের ওপর। তখন ভগবানের লীলা শুরু হল তার শুদ্ধ ভক্তের ম্যাধমে প্রহল্লাদ মহারাজ। তাই ভগবানের ভক্ত অাবির্ভূত হয়ে প্রহল্লাদ মহারাজ বিষ্ণুদেবের অারাধনা করছিল, তখন তার পিতা তাকে বলত লাগে তোমার ভগবান, কে??
.
সে বলত অামার ভগবান বিষ্ণুদেব, তখন হিরণ্যকশিপুর ক্ষীপত হয়ে বলতে লাগল যে অামি তোমার জন্মদাতা পিতা তাই অামি তোমার ভগবান,, কিন্তু প্রহল্লাদ বলল না তুমি অামার ভগবান না, অামার ভগবান বিষ্ণুদেব তিনি জগতপালক শ্রীহরি তিনি জগতের পিতা ও বিধাতা তুমি, ত কেবল অামার এই জড়জগতের পিতা, অার বিষ্ণুদেব অামার নিত্য পিতা ।।
.
তখন হিরণ্যকশিপুর তার ছেলেকে পাহাড় থেকে ফেলে দেই, হাতির পায়ের নিচে দেই, জলন্ত অগ্নিতে নিহ্মেপ করে অার প্রহল্লাদ শুধু তার প্রভু বিষ্ণুদেবকে শরণ করতে থাকে ।।
.
কথায় অাছে না,(যে মারে কৃষ্ণ রাখেকে, রাখে কৃষ্ণ মারেকে) ভগবান যদি চাই তাহলে পৃথিবীর কোন শক্তি তাকে হত্যা করতে পারবে?? না। তাই যখন কোন কিছুর দ্বারা সম্ভব হল না তখন প্রহল্লাদকে কারাগারে নিহ্মেপ করল শিকল দিয়ে বেধে রাখল অার মারতে লাগল অার প্রহল্লাদ শুধু শ্রীহরিকে ডাকতে লাগল ।।
.
তখন হিরণ্যকশিপুর এসে বলল অাজ তকে কে বাচাই দেখী তর ভগবান কোথায়,, তখন বৈকুণ্ঠধামে মা লহ্মীদেবী বলল হে প্রভু এখন কি হবে প্রহল্লাদকে কে রহ্মা করবে হিরণ্যকশিপুর, ত অমরত্ব মত বর লাভ করেছে তাকে কে হত্যা করবে?
.
তোমার ভক্তকে রহ্মা করবে কে?, তখন ভগবান বলেন যে অমরত্ব মত বর পেয়েছে কিন্তু অমর না অার প্রহল্লাদকে রহ্মা করবে তার ভক্তি, তার ভক্তি তাকে হিরণ্যকশিপুর হাত থেকে রহ্মা করবে,,তখন হিরণ্যকশিপুর বলল তর ভগবান কি এখানে অাছে প্রহল্লাদ বলল হা অামার প্রভু সর্বতই বিরাজমান এখানেও অাছে, এই বলে হিরণ্যকশিপুর সে ঘরের চৌকাঠে পিলারে অাঘাত করতে লাগে ।।
.
তখন হঠাৎ সে স্তম্ভ থেকে বের হয়ে অাসে ভক্তের ভগবান শ্রীহরি ভগবান বিষ্ণুদেব তখন হিরণ্যকশিপুর বর অনুসারে তাকে বধ করতে লাগলেন,, যে ঘরেও না বাইরেও না ঘরের চৌকাঠে কোন নর না পশুও না কিন্তু অর্ধেক পশু ও মানুষ নরসিংহ, কোন অস্ত্রের দ্বারা না, কিন্তু নখের দ্বারা বধ করা হয়েছে, সকালে না রাতেও না, কিন্তু গোধূলি লগ্নে অর্ধেক দিনও রাত মানে সন্ধায়, জলেও না মাটিতে না অাকাশেও না ।।
.
কিন্তু হাটুতে রেখে নখের দ্বারা বধ করে তাহলে চিন্তা করে দেখেন প্রভুর লীলা জগতেকে বোঝতে পারে যে ভক্তের ডাকে ভগবান তার ভক্তকে যেকোন উপায়ে রহ্মা করে এমন কি ভগবানের এই রুপ দেখে দেবতারা ও ব্রহ্মাণ্ড কেপে ওঠে এ কি রুপ হঠাৎ এই রুপের অাবির্ভাব কেউ বোঝতে পারেনি ।।
.
ভগবানের এই রুপকে দেবতারাও পর্যন্ত শান্ত করতে পারেনি তখন দেবতারা বলল একমাত্র একজন পারে সে তার ভক্ত প্রহল্লাদ তখন প্রহল্লাদ প্রভুর কাছে স্তব, প্রার্থনা করতে লাগে তখন প্রভু ভক্তের প্রার্থনাই শান্ত হয় ও তাকে কোলে তোলে নেই ও প্রভু বলে হে ভক্ত প্রহল্লাদ অামি তোমাকে দর্শন দিয়েছি এখন তুমি কি বর চাও প্রার্থনা কর অামার কাছে অামি তোমাকে বর দেব ।।
.
তখন ভক্ত কি অার কিছু চাওয়ার অাছে যে জগতের প্রভু তার সামনে তবুও ভগবান বলল তুমি একটা বর চাও যেহুতো অামি তোমার সামনে প্রকট হয়েছি তখন ভক্ত প্রহল্লাদ বলতে লাগল প্রভু তুমি অামার পিতাকে মুক্তি দাও যেহুতো তিনি অামার জড়জগতে পিতা ।।
.
তখন ভগবান বলল হে ভক্ত প্রহল্লাদ তথাস্তু কিন্তু তোমার শুধু এই পিতা মুক্তি লাভ করবে না যে গৃহে তোমার মত শুদ্ধ বৈষ্ণব ভক্ত হবে তার, ২১/কোল অাপনা থেকে উদ্ধার হবে, পিতৃকুল ১০/কোল,মাতৃকুল ১০/কোল, ও নিজের এক কোল মুক্তি লাভ করবে ।।হরিবল।।
.
এই নৃসিংহ ব্রত যে পালন করবে, তার জন্ম-মৃত্যুময় সংসারে থেকে রহ্মা পাবে, অার যিনি ব্রতদিন ব্রত লঙ্ঘন করে,চন্দ্র-সূর্য যতদিন থাকবে ততদিন নরক যাতনা ভোগ করবে। অামার এই ব্রত প্রভাবে অপুত্রক ভক্তপুত্র লাভ করে, দরিদ্র ধনশালী হয়,তেজস্কামী তেজঃলাভ করে, রাজ্যকামী রাজ্য পায়, অায়ুষ্কামী দীর্ঘায়ু পাই। ভক্তিতে বিশ্বাস এই মাত্র চাই সংসার যোনিতে নাহি কোন অার বস্তু তাহার উপর । জয় নৃসিংহ দেব ভগবান এর জয়, হে নৃসিংহ দেব ভগবান আপনি কৃপা করুন বিশ্ব বাসিকে।
জয় নৃসিংহ দেব ভগবান।।

রাম,বুদ্ধ, কল্কি

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের/বিষ্ণুর অবতার: মৎস(মাছ), কুর্ম(কচ্ছপ), বরাহ, নৃসিংহ(নর-সিংহ), বামন, পরশুরাম(পরশু অর্থাৎ
কুঠার সহ রাম), রাম,বুদ্ধ, কল্কি।

#মৎস্য (মাছ) হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর প্রথম অবতার।মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ। মৎস্যের উর্ধ্বশরীর চতুর্ভূজ বিষ্ণুর এবং নিম্নাঙ্গ একটি মাছের।
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি, বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।

#কূর্ম অবতারে বিষ্ণু কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
কূর্ম অবতারে বিষ্ণু ক্ষীরোদসাগরে সমুদ্র মন্থনের সময় মন্দর পর্বতকে নিজের পিঠে ধারণ করেন। এভাবে বিষ্ণু, মন্দর পর্বত ও বাসুকি নাগের সাহায্যে সমুদ্র মন্থন সংঘটিত হয়।

#বরাহ অবতারে শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
বরাহ অবতারে দেখা যায় রাক্ষস হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীর উপর নানা রকম অত্যাচার করলে পৃথিবী বিষ্ণুর কাছে রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান। বরাহ বা বন্য শুকরের রূপ ধরে বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেন। এই বরাহ অবতারে পৃথিবীর সাথে বিষ্ণুর বিবাহ হয়।

#নৃসিংহের অবতারে বিষ্ণু সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
ভাগবত পুরাণ-এ বর্ণিত নৃসিংহের কাহিনিটি: নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহ হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। দাদার হত্যার প্রতিশোধ মানসে তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এই জাতীয় প্রবল ক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন।তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন:
হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না।আমাকে এমন বর দিন যে বরে আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না; দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না।আমাকে এমন বর দিন যে বরে শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে কোনো জীবিত বা মৃত সত্তার হাতে আমার মৃত্যু হবে না; কোনো উপদেবতা, দৈত্য বা পাতালের মহানাগ আমাকে হত্যা করতে পারবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে কেউই হত্যা করতে পারে না; তাই আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।আমাকেও বর দিন যাতে আমারও কোনো প্রতিযোগী না থাকে।এমন বর দিন যাতে সকল জীবসত্তা ও প্রভুত্বকারী দেবতার উপর আমার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং আমাকে সেই পদমর্যাদার উপযুক্ত সকল গৌরব প্রদান করুন।
এছাড়া আমাকে তপস্যা ও যোগসাধনার প্রাপ্তব্য সকল সিদ্ধাই প্রদান করুন, যা কোনোদিনও আমাকে ত্যাগ করবে না।'
হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তাঁর প্রাসাদ আক্রমণ করেন।দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়।
হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা।প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন।

হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন।
তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।ভাগবত পুরাণ-এ আরও বলা হয়েছে:
হিরণ্যকশিপুকে বধ করার পর সকল দেবতাই নৃসিংহদেবের ক্রোধ নিবারণে ব্যর্থ হন। নৃসিংহকে শান্ত করতে শিব প্রথমে বীরভদ্রকে প্রেরণ করেন। বীরভদ্র ব্যর্থ হল। বিফল হন স্বয়ং শিবও।
সকল দেবগণ তখন তাঁর পত্নী লক্ষ্মীকে ডাকেন; কিন্তু লক্ষ্মীও স্বামীর ক্রোধ নিবারণে অক্ষম হন।
তখন ব্রহ্মার অনুরোধে প্রহ্লাদ এগিয়ে আসেন। ভক্ত প্রহ্লাদের স্তবগানে অবশেষে নৃসিংহদেব শান্ত হন। প্রত্যাবর্তনের পূর্বে নৃসিংহদেব প্রহ্লাদকে রাজা করে দেন।
#বামনের রূপে বিষ্ণু ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন।
বামনঅবতারঃ অদিতি ও কশ্যপের পুত্র বামন। তিনি দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম। ইনি ইন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রূপেও পরিচিত।পরাক্রমী রাক্ষসরাজ বালি, যিনি প্রহ্লাদের নাতি-যোড় করে ইন্দ্রের অমরাবতী হরণ করলে বিষ্ণু বামন অবতারে আবির্ভূত হন। রাজা বালি গুরু শুক্রাচার্যের সাহায্যে অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করলেন।খর্বাকার বামন হাতে বাঁশের ছত্র নিয়ে অতিথি হয়ে সেখানে আমন্ত্রিত হলেন। বামন রাজার কাছে তিনপদ জমি প্রার্থনা করলেন। গুরু শুক্রাচার্যের নিষেধ সত্তেও ছোট বালক ভেবে রাজা তা দিতে অঙ্গিকার করেন।তখন বিষ্ণু স্বরূপে এসে একপদে পৃথিবী, অপরপদে আকাশ অধিকার করেন। তিনি তৃতীয়পদ কোথায় রাখবেন রাজাকে প্রশ্ন করলে রাজা বালি সমস্ত বুঝতে পারেন এবং বিষ্ণুর সামনে নিজের মস্তক নত করে সেখানে বামনরূপী বিষ্ণুর তৃতীয় চরণ রাখার অনুরোধ করেন।
#পরশুরাম, পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।
পরশুরাম অবতারঃ আদিকালে জলের মধ্যেই ঘটেছিল প্রথম প্রাণের সঞ্চার। জলচর প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তত্কালীন প্রাণিজগতে ঈশ্বরের উপস্থিতি তাই মত্স্যরূপেই ছিল স্বাভাবিক।
ক্রমে ক্রমে স্থলভাগেও প্রাণীর অস্তিত্ব প্রসারিত হলো। সৃষ্টি হলো উভয়চর প্রাণীর। ঈশ্বর পৃথিবীতে এলেন কুর্ম হয়ে।প্রাণিজগতে জলের তুলনায় স্থলভাগের প্রাধান্য ও বৈচিত্র্য বাড়তে লাগল। ঈশ্বর এলেন স্থলচর প্রাণী বরাহ হয়ে।স্থলচর প্রাণিকুলে পশুত্ব ভেদ করে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকল মনুষ্যত্বের স্ফুরণ। সৃষ্টির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা তখন নৃসিংহ। অর্ধেক নর অর্ধেক পশু।তারপর এলো ক্ষুদে মানুষের যুগ। বামন অবতার জানিয়ে দিলেন ত্রিভুবনে মানুষের পদস্পর্শ ঘটার দিন আগত।এভাবেই বিবর্তনের পঞ্চম ধারা অতিক্রম করে বিষ্ণু এলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে।তিনিই পরশুরাম। এরই মধ্যে প্রাণিজগতে স্বাভাবিক মানুষের আবির্ভাবই শুধু ঘটেনি, মানবজাতি সত্যযুগ অতিক্রম করে এসেছে। ঘর বেঁধেছে, সংসার করতে শিখেছে, শিখেছে সমাজ গড়তে, রাজ্য চালাতে, আত্মরক্ষা করতে এবং আক্রমণ চালাতে। পরশুরামের হাতে তাই হরধনু।

পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট।এই নগরীতে গাধি নামে চন্দ্রবংশীয় একজন রাজা ছিলেন। গাধির ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে।গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র পরবর্তী সময়ে সাধনা বলে মহর্ষি হয়ে জগত আলোকিত করেন। ক্ষত্রীয়কুলে জন্ম হলেও মহর্ষির স্বীকৃতিলাভের জন্য বশিষ্ঠ মুনির সঙ্গে বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্ব পৌরাণিক কাহিনীর এক চমত্কার সংযোজন।সেই দ্বন্দ্বে বশিষ্ঠ মুনি ছিলেন অটল এবং নির্বিকার। দ্বন্দ্ব চলাকালীন ধীরে ধীরে বিশ্বামিত্রের মধ্যে ক্ষত্রীয় সুলভ ক্রোধের প্রশমন এবং ব্রহ্মতেজের স্ফুরণ ঘটে।বিশ্বামিত্রের বোন সত্যবতী ছিলেন অসামান্য রূপসী। সত্যবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ভৃগুবংশীয় এক ব্রাহ্মণ সন্তান রিচিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে রিচিক মুনির ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জমদগ্নি নামে এক পুত্রের জন্ম হয়।এই ঋষি জমদগ্নিই হচ্ছেন পরশুরামের বাবা। ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্রসন্তানদের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট; অর্থাত্ পঞ্চম পুত্র।

একদিন পরশুরামের মা রেণুকাদেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধর্বরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরীগণসহ)।পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকাদেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে রেণুকাদেবী কলস
ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান।তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাতৃহত্যার আদেশ দেন।প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান।কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন।পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি।কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই রইল। শত চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারলেন না তিনি। পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পাপ মুক্তির উপায়ের কথা।
পিতা বললেন, তুমি মাতৃহত্যা ও স্ত্রীলোক হত্যা—এই দুই পাপে আক্রান্ত হয়েছ, তাই তোমাকে তীর্থে তীর্থে ঘুরতে হবে, যে তীর্থের জলের স্পর্শে তোমার হাতের কুঠার খসে যাবে;মনে রাখবে সেই তীর্থই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান।পিতার কথা মতো পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মকুণ্ডের পুণ্য জলে স্নান করে তাঁর হাতের কুঠার খসে গেল।পরশুরাম মনে মনে ভাবলেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে।তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন।
লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি।
ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার অন্তর্গত
সোনারগাঁওয়ে এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এ জন্য এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ।এরপর এ জলধারা কোমল মাটির বুকচিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।

#রাম অবতারে অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।

রামচন্দ্র প্রাচীন ভারতের কিংবদন্তী রাজা। হিন্দু ধর্মে রামকে বিষ্ণু দেবতার সপ্তম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়।রাম দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত হিন্দুধর্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ও দেবতাগুলির একটি।
রামের চরিত্রের সবচেয়ে ব্যাপক বিবরণ পাওয়া যায় রামায়ণ নামের মহাকাব্যে।অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তাঁর স্ত্রী কৌশল্যার ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে রামের জন্ম হয়। হিন্দুধর্মে রামকে পুরুষোত্তম
মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রামের স্ত্রী হলেন সীতা। সীতাকে হিন্দুরা লক্ষ্মী দেবীর একজন অবতার ও ত্রুটিহীনা নারীর রূপায়ন হিসেবে গণ্য করে।

#ভগবান কৃষ্ণঃ  দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ হলেন শ্রীকৃষ্ণ।শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।গীতায় বলা হয়েছে যে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সজ্জনের রক্ষার জন্য তিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন
করেন। তাঁর এই আগমন ঘটে কখনও মনুষ্যরূপে, কখনও বা মনুষ্যেতর প্রাণিরূপে এবং একেই বলা হয় অবতার।কৃষ্ণের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় বৈদিক সাহিত্যে। ঋগ্বেদে একাধিকবার কৃষ্ণের উল্লেখ আছে। কৃষ্ণকে দেবকীপুত্র
বলা হয়েছে। মহাভারত , বিভিন্ন পুরাণ , শ্রীমদ্ভাগবত এবং বৈষ্ণবকাব্যে যে কৃষ্ণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তাঁর আবির্ভাব দ্বাপর যুগে।প্রচলিত ঐতিহ্য অনুসারে মাতুল কংসের কারাগারে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণের জন্ম। তাঁর জন্মসূত্রে এ দিনটি
প্রতিবছর জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়।

#বুদ্ধ, কলিযুগে অবতীর্ণ হন।
বুদ্ধ অবতারে বিষ্ণু অসুরী শক্তির বিনাশ ঘটানোর জন্য আবির্ভূত হন। ইনিই গৌতম বুদ্ধ-বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা।

#দশম অবতার হচ্ছে কল্কি। তিনি এখনও অবতীর্ণ হননি।হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

#কল্কি অবতারঃ কল্কি বিষ্ণুর ভবিষ্যৎ অবতার মানা হয়। পুরাণকথা অনুসারে কলিযুগ পাপে পূর্ণ হলে বিষ্ণু দুষ্টের দমনের জন্য কল্কি অবতারে আবির্ভূত হবেন। কল্কি অবতার কলিযুগ অবসানের জন্য হবে। যখন কলিযুগে মানুষ
ধর্মপথ ত্যাগ করবে তখন ইনি প্রকাশ পাবেন।

#হরে কৃষ্ণ কৃপা করে আমাদের এই পেইজে লাইক এবং শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন।
হরে কৃষ্ণ।।

শাস্ত্রমতে তুলসীর মাহাত্ম্য

◆◆শাস্ত্রমতে তুলসীর মাহাত্ম্য★★★

তুলসী কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে ধরাতলে তরুরূপে জন্মগ্রহণ করেন । কার্ত্তিক মাসে তুলসীপাতা দিয়ে যাঁরা নারায়ণ পূজা করেন এবং দর্শন, স্পর্শন, ধ্যান, প্রণাম, অর্চ্চন, রোপন ও সেবন করেন, তাঁরা কোটি সহস্র যুগ হরিগৃহে বাস করেন । যাঁরা তুলসীবৃক্ষ রোপন করেন, এবৃক্ষের মূল যতবিস্তৃত হতে থাকে,তত যুগ সহস্র পরিমাণ তাঁদের পুন্য বির্স্তৃত হতে থাকে । তুলসী পাতা দিয়ে যিনি নারায়ণ পূজা করেন, তাঁর জন্মার্জ্জিত পাতক বিনষ্ট হয় । বায়ু তুলসী গন্ধ নিয়ে যে দিকে প্রবাহিত হয়, সেদিক পবিত্র হয় । তুলসীবনে পিতৃশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হলে তা পিতৃপুরুষদের খুব প্রীতিপ্রদ হয় । সে গৃহে তুলসীতলের মৃত্তিকা থাকে, সে গৃহে যম কিস্কর প্রবেশ করতে পারে না । তুলসী তলে প্রদীপ জ্বালালে  বৈষ্ণব পদ লাভ হয় । যার গৃহে তুলসী কানন থাকে, সে গৃহ তীর্থস্বরূপ ।নর্ম্মদা ও গোদাবরী নদীতে স্থানে যে পুন্য হয় তুলসীবন সংসর্গে সে ফল লাভ হয় । যিনি তুলসী মঞ্জুরী দিয়ে বিষ্ণুপূজা করেন, তাঁর আর পুর্ণজন্ম হয় না অর্থাৎ মোক্ষ লাভ হয় ।

■■বিজ্ঞানমতে তুলসীর মাহাত্ম্য।।★★

 শুধু পুজো-অর্চনাতেই লাগে না ৷ তুলসী পাতার অনেক গুণ রয়েছে ৷ আয়ুর্বেদে তুলসীকে ভেষজের আখ্যা দেওয়া হয় ৷ চলুন এই ভেষজের গুণগুলো জেনে নিই ৷

★জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।

★কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন।
★পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷
★মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান।
★ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে।
★শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালা কমবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে, সেখানে কোন দাগ থাকবে না।
★ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান।
বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান।
★প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন। উপকার পাবেন।
★ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান।
★এছাড়াও অম্বল, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগে তুলসী খুবই উপকারী।

গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সম্পর্কে জানা যায়

হরে কৃষ্ণ,
       গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সম্পর্কে জানা যায়
      – ঈশ্বর,জীব,প্রকৃতি, কাল ও কর্ম ।

গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে । গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার এমনকি গীতায় এমন কিছু আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫ থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ । গীতায় আছে ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ----
ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক,
সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক,
অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক ।

 গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে --
প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্ম ষটক,
মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তি ষটক,
আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞান ষটক ।

 যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছরেরও আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন । গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা মাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন ।

গীতাতে মাং এবং মামেব কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার আর যুক্ত আছে ৪৯ বার । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন । গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ । ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায় । ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও গীতা বলেছে ।

 জয় শ্রী কৃষ্ণ।।

রাম,বুদ্ধ, কল্কি

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের/বিষ্ণুর অবতার: মৎস(মাছ), কুর্ম(কচ্ছপ), বরাহ, নৃসিংহ(নর-সিংহ), বামন, পরশুরাম(পরশু অর্থাৎ
কুঠার সহ রাম), রাম,বুদ্ধ, কল্কি।

#মৎস্য (মাছ) হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর প্রথম অবতার।মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ। মৎস্যের উর্ধ্বশরীর চতুর্ভূজ বিষ্ণুর এবং নিম্নাঙ্গ একটি মাছের।
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি, বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।

#কূর্ম অবতারে বিষ্ণু কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
কূর্ম অবতারে বিষ্ণু ক্ষীরোদসাগরে সমুদ্র মন্থনের সময় মন্দর পর্বতকে নিজের পিঠে ধারণ করেন। এভাবে বিষ্ণু, মন্দর পর্বত ও বাসুকি নাগের সাহায্যে সমুদ্র মন্থন সংঘটিত হয়।

#বরাহ অবতারে শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
বরাহ অবতারে দেখা যায় রাক্ষস হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীর উপর নানা রকম অত্যাচার করলে পৃথিবী বিষ্ণুর কাছে রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান। বরাহ বা বন্য শুকরের রূপ ধরে বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেন। এই বরাহ অবতারে পৃথিবীর সাথে বিষ্ণুর বিবাহ হয়।

#নৃসিংহের অবতারে বিষ্ণু সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
ভাগবত পুরাণ-এ বর্ণিত নৃসিংহের কাহিনিটি: নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহ হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। দাদার হত্যার প্রতিশোধ মানসে তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এই জাতীয় প্রবল ক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন।তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন:
হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না।আমাকে এমন বর দিন যে বরে আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না; দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না।আমাকে এমন বর দিন যে বরে শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে কোনো জীবিত বা মৃত সত্তার হাতে আমার মৃত্যু হবে না; কোনো উপদেবতা, দৈত্য বা পাতালের মহানাগ আমাকে হত্যা করতে পারবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে কেউই হত্যা করতে পারে না; তাই আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।আমাকেও বর দিন যাতে আমারও কোনো প্রতিযোগী না থাকে।এমন বর দিন যাতে সকল জীবসত্তা ও প্রভুত্বকারী দেবতার উপর আমার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং আমাকে সেই পদমর্যাদার উপযুক্ত সকল গৌরব প্রদান করুন।
এছাড়া আমাকে তপস্যা ও যোগসাধনার প্রাপ্তব্য সকল সিদ্ধাই প্রদান করুন, যা কোনোদিনও আমাকে ত্যাগ করবে না।'
হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তাঁর প্রাসাদ আক্রমণ করেন।দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়।
হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা।প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন।

হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন।
তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।ভাগবত পুরাণ-এ আরও বলা হয়েছে:
হিরণ্যকশিপুকে বধ করার পর সকল দেবতাই নৃসিংহদেবের ক্রোধ নিবারণে ব্যর্থ হন। নৃসিংহকে শান্ত করতে শিব প্রথমে বীরভদ্রকে প্রেরণ করেন। বীরভদ্র ব্যর্থ হল। বিফল হন স্বয়ং শিবও।
সকল দেবগণ তখন তাঁর পত্নী লক্ষ্মীকে ডাকেন; কিন্তু লক্ষ্মীও স্বামীর ক্রোধ নিবারণে অক্ষম হন।
তখন ব্রহ্মার অনুরোধে প্রহ্লাদ এগিয়ে আসেন। ভক্ত প্রহ্লাদের স্তবগানে অবশেষে নৃসিংহদেব শান্ত হন। প্রত্যাবর্তনের পূর্বে নৃসিংহদেব প্রহ্লাদকে রাজা করে দেন।
#বামনের রূপে বিষ্ণু ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন।
বামনঅবতারঃ অদিতি ও কশ্যপের পুত্র বামন। তিনি দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম। ইনি ইন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রূপেও পরিচিত।পরাক্রমী রাক্ষসরাজ বালি, যিনি প্রহ্লাদের নাতি-যোড় করে ইন্দ্রের অমরাবতী হরণ করলে বিষ্ণু বামন অবতারে আবির্ভূত হন। রাজা বালি গুরু শুক্রাচার্যের সাহায্যে অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করলেন।খর্বাকার বামন হাতে বাঁশের ছত্র নিয়ে অতিথি হয়ে সেখানে আমন্ত্রিত হলেন। বামন রাজার কাছে তিনপদ জমি প্রার্থনা করলেন। গুরু শুক্রাচার্যের নিষেধ সত্তেও ছোট বালক ভেবে রাজা তা দিতে অঙ্গিকার করেন।তখন বিষ্ণু স্বরূপে এসে একপদে পৃথিবী, অপরপদে আকাশ অধিকার করেন। তিনি তৃতীয়পদ কোথায় রাখবেন রাজাকে প্রশ্ন করলে রাজা বালি সমস্ত বুঝতে পারেন এবং বিষ্ণুর সামনে নিজের মস্তক নত করে সেখানে বামনরূপী বিষ্ণুর তৃতীয় চরণ রাখার অনুরোধ করেন।
#পরশুরাম, পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।
পরশুরাম অবতারঃ আদিকালে জলের মধ্যেই ঘটেছিল প্রথম প্রাণের সঞ্চার। জলচর প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তত্কালীন প্রাণিজগতে ঈশ্বরের উপস্থিতি তাই মত্স্যরূপেই ছিল স্বাভাবিক।
ক্রমে ক্রমে স্থলভাগেও প্রাণীর অস্তিত্ব প্রসারিত হলো। সৃষ্টি হলো উভয়চর প্রাণীর। ঈশ্বর পৃথিবীতে এলেন কুর্ম হয়ে।প্রাণিজগতে জলের তুলনায় স্থলভাগের প্রাধান্য ও বৈচিত্র্য বাড়তে লাগল। ঈশ্বর এলেন স্থলচর প্রাণী বরাহ হয়ে।স্থলচর প্রাণিকুলে পশুত্ব ভেদ করে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকল মনুষ্যত্বের স্ফুরণ। সৃষ্টির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা তখন নৃসিংহ। অর্ধেক নর অর্ধেক পশু।তারপর এলো ক্ষুদে মানুষের যুগ। বামন অবতার জানিয়ে দিলেন ত্রিভুবনে মানুষের পদস্পর্শ ঘটার দিন আগত।এভাবেই বিবর্তনের পঞ্চম ধারা অতিক্রম করে বিষ্ণু এলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে।তিনিই পরশুরাম। এরই মধ্যে প্রাণিজগতে স্বাভাবিক মানুষের আবির্ভাবই শুধু ঘটেনি, মানবজাতি সত্যযুগ অতিক্রম করে এসেছে। ঘর বেঁধেছে, সংসার করতে শিখেছে, শিখেছে সমাজ গড়তে, রাজ্য চালাতে, আত্মরক্ষা করতে এবং আক্রমণ চালাতে। পরশুরামের হাতে তাই হরধনু।

পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট।এই নগরীতে গাধি নামে চন্দ্রবংশীয় একজন রাজা ছিলেন। গাধির ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে।গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র পরবর্তী সময়ে সাধনা বলে মহর্ষি হয়ে জগত আলোকিত করেন। ক্ষত্রীয়কুলে জন্ম হলেও মহর্ষির স্বীকৃতিলাভের জন্য বশিষ্ঠ মুনির সঙ্গে বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্ব পৌরাণিক কাহিনীর এক চমত্কার সংযোজন।সেই দ্বন্দ্বে বশিষ্ঠ মুনি ছিলেন অটল এবং নির্বিকার। দ্বন্দ্ব চলাকালীন ধীরে ধীরে বিশ্বামিত্রের মধ্যে ক্ষত্রীয় সুলভ ক্রোধের প্রশমন এবং ব্রহ্মতেজের স্ফুরণ ঘটে।বিশ্বামিত্রের বোন সত্যবতী ছিলেন অসামান্য রূপসী। সত্যবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ভৃগুবংশীয় এক ব্রাহ্মণ সন্তান রিচিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে রিচিক মুনির ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জমদগ্নি নামে এক পুত্রের জন্ম হয়।এই ঋষি জমদগ্নিই হচ্ছেন পরশুরামের বাবা। ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্রসন্তানদের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট; অর্থাত্ পঞ্চম পুত্র।

একদিন পরশুরামের মা রেণুকাদেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধর্বরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরীগণসহ)।পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকাদেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে রেণুকাদেবী কলস
ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান।তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাতৃহত্যার আদেশ দেন।প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান।কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন।পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি।কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই রইল। শত চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারলেন না তিনি। পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পাপ মুক্তির উপায়ের কথা।
পিতা বললেন, তুমি মাতৃহত্যা ও স্ত্রীলোক হত্যা—এই দুই পাপে আক্রান্ত হয়েছ, তাই তোমাকে তীর্থে তীর্থে ঘুরতে হবে, যে তীর্থের জলের স্পর্শে তোমার হাতের কুঠার খসে যাবে;মনে রাখবে সেই তীর্থই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান।পিতার কথা মতো পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মকুণ্ডের পুণ্য জলে স্নান করে তাঁর হাতের কুঠার খসে গেল।পরশুরাম মনে মনে ভাবলেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে।তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন।
লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি।
ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার অন্তর্গত
সোনারগাঁওয়ে এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এ জন্য এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ।এরপর এ জলধারা কোমল মাটির বুকচিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।

#রাম অবতারে অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।

রামচন্দ্র প্রাচীন ভারতের কিংবদন্তী রাজা। হিন্দু ধর্মে রামকে বিষ্ণু দেবতার সপ্তম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়।রাম দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত হিন্দুধর্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ও দেবতাগুলির একটি।
রামের চরিত্রের সবচেয়ে ব্যাপক বিবরণ পাওয়া যায় রামায়ণ নামের মহাকাব্যে।অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তাঁর স্ত্রী কৌশল্যার ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে রামের জন্ম হয়। হিন্দুধর্মে রামকে পুরুষোত্তম
মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রামের স্ত্রী হলেন সীতা। সীতাকে হিন্দুরা লক্ষ্মী দেবীর একজন অবতার ও ত্রুটিহীনা নারীর রূপায়ন হিসেবে গণ্য করে।

#ভগবান কৃষ্ণঃ  দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ হলেন শ্রীকৃষ্ণ।শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।গীতায় বলা হয়েছে যে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সজ্জনের রক্ষার জন্য তিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন
করেন। তাঁর এই আগমন ঘটে কখনও মনুষ্যরূপে, কখনও বা মনুষ্যেতর প্রাণিরূপে এবং একেই বলা হয় অবতার।কৃষ্ণের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় বৈদিক সাহিত্যে। ঋগ্বেদে একাধিকবার কৃষ্ণের উল্লেখ আছে। কৃষ্ণকে দেবকীপুত্র
বলা হয়েছে। মহাভারত , বিভিন্ন পুরাণ , শ্রীমদ্ভাগবত এবং বৈষ্ণবকাব্যে যে কৃষ্ণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তাঁর আবির্ভাব দ্বাপর যুগে।প্রচলিত ঐতিহ্য অনুসারে মাতুল কংসের কারাগারে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণের জন্ম। তাঁর জন্মসূত্রে এ দিনটি
প্রতিবছর জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়।

#বুদ্ধ, কলিযুগে অবতীর্ণ হন।
বুদ্ধ অবতারে বিষ্ণু অসুরী শক্তির বিনাশ ঘটানোর জন্য আবির্ভূত হন। ইনিই গৌতম বুদ্ধ-বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা।

#দশম অবতার হচ্ছে কল্কি। তিনি এখনও অবতীর্ণ হননি।হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

#কল্কি অবতারঃ কল্কি বিষ্ণুর ভবিষ্যৎ অবতার মানা হয়। পুরাণকথা অনুসারে কলিযুগ পাপে পূর্ণ হলে বিষ্ণু দুষ্টের দমনের জন্য কল্কি অবতারে আবির্ভূত হবেন। কল্কি অবতার কলিযুগ অবসানের জন্য হবে। যখন কলিযুগে মানুষ
ধর্মপথ ত্যাগ করবে তখন ইনি প্রকাশ পাবেন।

#হরে কৃষ্ণ কৃপা করে আমাদের এই পেইজে লাইক এবং শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন।
হরে কৃষ্ণ।।

রাম,বুদ্ধ, কল্কি

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের/বিষ্ণুর অবতার: মৎস(মাছ), কুর্ম(কচ্ছপ), বরাহ, নৃসিংহ(নর-সিংহ), বামন, পরশুরাম(পরশু অর্থাৎ
কুঠার সহ রাম), রাম,বুদ্ধ, কল্কি।

#মৎস্য (মাছ) হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর প্রথম অবতার।মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ। মৎস্যের উর্ধ্বশরীর চতুর্ভূজ বিষ্ণুর এবং নিম্নাঙ্গ একটি মাছের।
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি, বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।

#কূর্ম অবতারে বিষ্ণু কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
কূর্ম অবতারে বিষ্ণু ক্ষীরোদসাগরে সমুদ্র মন্থনের সময় মন্দর পর্বতকে নিজের পিঠে ধারণ করেন। এভাবে বিষ্ণু, মন্দর পর্বত ও বাসুকি নাগের সাহায্যে সমুদ্র মন্থন সংঘটিত হয়।

#বরাহ অবতারে শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
বরাহ অবতারে দেখা যায় রাক্ষস হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীর উপর নানা রকম অত্যাচার করলে পৃথিবী বিষ্ণুর কাছে রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান। বরাহ বা বন্য শুকরের রূপ ধরে বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেন। এই বরাহ অবতারে পৃথিবীর সাথে বিষ্ণুর বিবাহ হয়।

#নৃসিংহের অবতারে বিষ্ণু সত্যযুগে অবতীর্ণ হন।
ভাগবত পুরাণ-এ বর্ণিত নৃসিংহের কাহিনিটি: নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহ হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। দাদার হত্যার প্রতিশোধ মানসে তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি মনে করেন, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এই জাতীয় প্রবল ক্ষমতা প্রদানে সক্ষম। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন।তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন:
হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না।আমাকে এমন বর দিন যে বরে আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না; দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না।আমাকে এমন বর দিন যে বরে শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না।
আমাকে এমন বর দিন যে বরে কোনো জীবিত বা মৃত সত্তার হাতে আমার মৃত্যু হবে না; কোনো উপদেবতা, দৈত্য বা পাতালের মহানাগ আমাকে হত্যা করতে পারবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে কেউই হত্যা করতে পারে না; তাই আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।আমাকেও বর দিন যাতে আমারও কোনো প্রতিযোগী না থাকে।এমন বর দিন যাতে সকল জীবসত্তা ও প্রভুত্বকারী দেবতার উপর আমার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং আমাকে সেই পদমর্যাদার উপযুক্ত সকল গৌরব প্রদান করুন।
এছাড়া আমাকে তপস্যা ও যোগসাধনার প্রাপ্তব্য সকল সিদ্ধাই প্রদান করুন, যা কোনোদিনও আমাকে ত্যাগ করবে না।'
হিরণ্যকশিপু যখন মন্দার পর্বতে তপস্যা করছিলেন, তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণ তাঁর প্রাসাদ আক্রমণ করেন।দেবর্ষি নারদ হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী কায়াদুকে রক্ষা করেন। দেবর্ষি দেবগণের নিকট কায়াদুকে ‘পাপহীনা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নারদ কায়াদুকে নিজ আশ্রমে নিয়ে যান। সেখানে কায়াদু প্রহ্লাদ নামে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।নারদ প্রহ্লাদকে শিক্ষিত করে তোলেন। নারদের প্রভাবে প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়।
হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা।প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি ক্ষুদ্রতম যষ্টিটিতেও আছেন।

হিরণ্যকশিপু ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন।
তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখরাঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।ভাগবত পুরাণ-এ আরও বলা হয়েছে:
হিরণ্যকশিপুকে বধ করার পর সকল দেবতাই নৃসিংহদেবের ক্রোধ নিবারণে ব্যর্থ হন। নৃসিংহকে শান্ত করতে শিব প্রথমে বীরভদ্রকে প্রেরণ করেন। বীরভদ্র ব্যর্থ হল। বিফল হন স্বয়ং শিবও।
সকল দেবগণ তখন তাঁর পত্নী লক্ষ্মীকে ডাকেন; কিন্তু লক্ষ্মীও স্বামীর ক্রোধ নিবারণে অক্ষম হন।
তখন ব্রহ্মার অনুরোধে প্রহ্লাদ এগিয়ে আসেন। ভক্ত প্রহ্লাদের স্তবগানে অবশেষে নৃসিংহদেব শান্ত হন। প্রত্যাবর্তনের পূর্বে নৃসিংহদেব প্রহ্লাদকে রাজা করে দেন।
#বামনের রূপে বিষ্ণু ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন।
বামনঅবতারঃ অদিতি ও কশ্যপের পুত্র বামন। তিনি দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম। ইনি ইন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রূপেও পরিচিত।পরাক্রমী রাক্ষসরাজ বালি, যিনি প্রহ্লাদের নাতি-যোড় করে ইন্দ্রের অমরাবতী হরণ করলে বিষ্ণু বামন অবতারে আবির্ভূত হন। রাজা বালি গুরু শুক্রাচার্যের সাহায্যে অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করলেন।খর্বাকার বামন হাতে বাঁশের ছত্র নিয়ে অতিথি হয়ে সেখানে আমন্ত্রিত হলেন। বামন রাজার কাছে তিনপদ জমি প্রার্থনা করলেন। গুরু শুক্রাচার্যের নিষেধ সত্তেও ছোট বালক ভেবে রাজা তা দিতে অঙ্গিকার করেন।তখন বিষ্ণু স্বরূপে এসে একপদে পৃথিবী, অপরপদে আকাশ অধিকার করেন। তিনি তৃতীয়পদ কোথায় রাখবেন রাজাকে প্রশ্ন করলে রাজা বালি সমস্ত বুঝতে পারেন এবং বিষ্ণুর সামনে নিজের মস্তক নত করে সেখানে বামনরূপী বিষ্ণুর তৃতীয় চরণ রাখার অনুরোধ করেন।
#পরশুরাম, পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।
পরশুরাম অবতারঃ আদিকালে জলের মধ্যেই ঘটেছিল প্রথম প্রাণের সঞ্চার। জলচর প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তত্কালীন প্রাণিজগতে ঈশ্বরের উপস্থিতি তাই মত্স্যরূপেই ছিল স্বাভাবিক।
ক্রমে ক্রমে স্থলভাগেও প্রাণীর অস্তিত্ব প্রসারিত হলো। সৃষ্টি হলো উভয়চর প্রাণীর। ঈশ্বর পৃথিবীতে এলেন কুর্ম হয়ে।প্রাণিজগতে জলের তুলনায় স্থলভাগের প্রাধান্য ও বৈচিত্র্য বাড়তে লাগল। ঈশ্বর এলেন স্থলচর প্রাণী বরাহ হয়ে।স্থলচর প্রাণিকুলে পশুত্ব ভেদ করে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকল মনুষ্যত্বের স্ফুরণ। সৃষ্টির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা তখন নৃসিংহ। অর্ধেক নর অর্ধেক পশু।তারপর এলো ক্ষুদে মানুষের যুগ। বামন অবতার জানিয়ে দিলেন ত্রিভুবনে মানুষের পদস্পর্শ ঘটার দিন আগত।এভাবেই বিবর্তনের পঞ্চম ধারা অতিক্রম করে বিষ্ণু এলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে।তিনিই পরশুরাম। এরই মধ্যে প্রাণিজগতে স্বাভাবিক মানুষের আবির্ভাবই শুধু ঘটেনি, মানবজাতি সত্যযুগ অতিক্রম করে এসেছে। ঘর বেঁধেছে, সংসার করতে শিখেছে, শিখেছে সমাজ গড়তে, রাজ্য চালাতে, আত্মরক্ষা করতে এবং আক্রমণ চালাতে। পরশুরামের হাতে তাই হরধনু।

পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট।এই নগরীতে গাধি নামে চন্দ্রবংশীয় একজন রাজা ছিলেন। গাধির ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে।গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র পরবর্তী সময়ে সাধনা বলে মহর্ষি হয়ে জগত আলোকিত করেন। ক্ষত্রীয়কুলে জন্ম হলেও মহর্ষির স্বীকৃতিলাভের জন্য বশিষ্ঠ মুনির সঙ্গে বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্ব পৌরাণিক কাহিনীর এক চমত্কার সংযোজন।সেই দ্বন্দ্বে বশিষ্ঠ মুনি ছিলেন অটল এবং নির্বিকার। দ্বন্দ্ব চলাকালীন ধীরে ধীরে বিশ্বামিত্রের মধ্যে ক্ষত্রীয় সুলভ ক্রোধের প্রশমন এবং ব্রহ্মতেজের স্ফুরণ ঘটে।বিশ্বামিত্রের বোন সত্যবতী ছিলেন অসামান্য রূপসী। সত্যবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ভৃগুবংশীয় এক ব্রাহ্মণ সন্তান রিচিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে রিচিক মুনির ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জমদগ্নি নামে এক পুত্রের জন্ম হয়।এই ঋষি জমদগ্নিই হচ্ছেন পরশুরামের বাবা। ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্রসন্তানদের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট; অর্থাত্ পঞ্চম পুত্র।

একদিন পরশুরামের মা রেণুকাদেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধর্বরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরীগণসহ)।পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকাদেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে রেণুকাদেবী কলস
ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান।তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাতৃহত্যার আদেশ দেন।প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান।কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন।পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি।কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই রইল। শত চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারলেন না তিনি। পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পাপ মুক্তির উপায়ের কথা।
পিতা বললেন, তুমি মাতৃহত্যা ও স্ত্রীলোক হত্যা—এই দুই পাপে আক্রান্ত হয়েছ, তাই তোমাকে তীর্থে তীর্থে ঘুরতে হবে, যে তীর্থের জলের স্পর্শে তোমার হাতের কুঠার খসে যাবে;মনে রাখবে সেই তীর্থই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান।পিতার কথা মতো পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মকুণ্ডের পুণ্য জলে স্নান করে তাঁর হাতের কুঠার খসে গেল।পরশুরাম মনে মনে ভাবলেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে।তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন।
লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি।
ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার অন্তর্গত
সোনারগাঁওয়ে এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এ জন্য এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ।এরপর এ জলধারা কোমল মাটির বুকচিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।

#রাম অবতারে অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হলেন বিষ্ণু।

রামচন্দ্র প্রাচীন ভারতের কিংবদন্তী রাজা। হিন্দু ধর্মে রামকে বিষ্ণু দেবতার সপ্তম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়।রাম দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত হিন্দুধর্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ও দেবতাগুলির একটি।
রামের চরিত্রের সবচেয়ে ব্যাপক বিবরণ পাওয়া যায় রামায়ণ নামের মহাকাব্যে।অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তাঁর স্ত্রী কৌশল্যার ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে রামের জন্ম হয়। হিন্দুধর্মে রামকে পুরুষোত্তম
মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রামের স্ত্রী হলেন সীতা। সীতাকে হিন্দুরা লক্ষ্মী দেবীর একজন অবতার ও ত্রুটিহীনা নারীর রূপায়ন হিসেবে গণ্য করে।

#ভগবান কৃষ্ণঃ  দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ হলেন শ্রীকৃষ্ণ।শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।গীতায় বলা হয়েছে যে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সজ্জনের রক্ষার জন্য তিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন
করেন। তাঁর এই আগমন ঘটে কখনও মনুষ্যরূপে, কখনও বা মনুষ্যেতর প্রাণিরূপে এবং একেই বলা হয় অবতার।কৃষ্ণের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় বৈদিক সাহিত্যে। ঋগ্বেদে একাধিকবার কৃষ্ণের উল্লেখ আছে। কৃষ্ণকে দেবকীপুত্র
বলা হয়েছে। মহাভারত , বিভিন্ন পুরাণ , শ্রীমদ্ভাগবত এবং বৈষ্ণবকাব্যে যে কৃষ্ণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তাঁর আবির্ভাব দ্বাপর যুগে।প্রচলিত ঐতিহ্য অনুসারে মাতুল কংসের কারাগারে ভাদ্রমাসের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণের জন্ম। তাঁর জন্মসূত্রে এ দিনটি
প্রতিবছর জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়।

#বুদ্ধ, কলিযুগে অবতীর্ণ হন।
বুদ্ধ অবতারে বিষ্ণু অসুরী শক্তির বিনাশ ঘটানোর জন্য আবির্ভূত হন। ইনিই গৌতম বুদ্ধ-বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা।

#দশম অবতার হচ্ছে কল্কি। তিনি এখনও অবতীর্ণ হননি।হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

#কল্কি অবতারঃ কল্কি বিষ্ণুর ভবিষ্যৎ অবতার মানা হয়। পুরাণকথা অনুসারে কলিযুগ পাপে পূর্ণ হলে বিষ্ণু দুষ্টের দমনের জন্য কল্কি অবতারে আবির্ভূত হবেন। কল্কি অবতার কলিযুগ অবসানের জন্য হবে। যখন কলিযুগে মানুষ
ধর্মপথ ত্যাগ করবে তখন ইনি প্রকাশ পাবেন।

#হরে কৃষ্ণ কৃপা করে আমাদের এই পেইজে লাইক এবং শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন।
হরে কৃষ্ণ।।

ভগবান ভক্তের অধিন

★★★ভগবান ভক্তের অধিন

  #শ্রীখন্ড নিবাসী মুকুন্দ দাসের একমাত্র পুত্রের বয়স মাত্র বারো বছর। এই বারো বছরের শিশু, মুকুন্দ দাস আর ঘরের বিগ্রহ গোপীনাথ, এই হলো মুকুন্দের সংসার।
মুকন্দ দাস একজন কবিরাজ।
বাবা আগেকার সময়ে তো ডাক্তার ছিল না, গ্রামের কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে কবিরাজকে ডাকা হতো।
একদিন গ্রামে একজন অসুস্থ হওয়ায় মুকুন্দ দাসের ডাক পড়ে গেল। মুকুন্দ দাস গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে যে আমি একা মানুষ কোন দিকে যাব!!!
একদিকে আমার ঘরে গোপিনাথের সেবা আরেকদিকে আমার গ্রামের একজন অসুস্থ। গালে হাত দিয়ে ভাবছে। তখন বাবাকে চিন্তিত দেখে বারো বছরের শিশু বলছে বাবা তুমি বসে বসে কি ভাবছ? ছেলের কথা শুনে বাবা বলছে, দেখ বাবা আমি একটা চিন্তায় পড়েছি একদিকে আমার ঘরে গোপিনাথের সেবা ঠিক দুপুর বেলায়, আবার এইদিকে গ্রামের একজন অসুস্থ, আমার ডাক পড়েছে সেখানে যেতে হবে।

#আমি যে কি করবো এটাই ভাবছি, ছোট্ট পুত্র বলছে বাবা তুমি এক কাজ করো-গ্রামের কাজটা তো আর আমি করতে পারব না, ঔ কবিরাজি তো আমি পারব না ,তুমি চলে যাও গ্রামের কাজে আর আমি ঘরে বিগ্রহ সেবা ,গোপিনাথের সেবা আমি দিয়ে দেবো। এই কথা শুনে বাবা বলছে ওরে খোকা ভগবানের সেবা বললেই তো আর সেবা দেওয়া যায় না, তাকে সেবা দিতে গেলে অনেক মন্ত্র তন্ত্র জানতে হয় ,সেবা দেবার সময় নিবেদন মন্ত্র, সেবার পরে আসমানী মন্ত্র। তুই তো কোন মন্ত্র তন্ত্র জানিস না কি করে পূজা দিবি বল?

#ছোট্ট বালক বলছে বাবা আমি না হয় তোমার মতো মন্ত্র তন্ত্র জানিনা ,কিন্তু বাবা আমি যদি ভক্তিভরে ভালোবেসে গোপিনাথের সেবা দিই তিনি কি আমার সেবা নেবেন না? 
মুকন্দ দাস চিন্তা করছে কথাটা তো ঠিক ,মন্ত্র নাইবা জানলো যদি হৃদয়ে ভক্তি থাকে ,ভক্তিভরে যদি সেবা দেয় ভগবান নিশ্চয়ই সেবা নেবেন। বাবা বলছে যাক বাবা তুই আমাকে বাঁচালি। শোন আমি না রান্নাটা করতে পারি নি, রান্নাঘরের সব কিছু গোছানো আছে তুই একটু কোন রকম রান্না করে আজকের সেবা টা দিয়ে দিস।
ঠিক আছে বাবা আমি গোপিনাথের সেবা দিয়ে দেবো। তুমি কোন চিন্তা করোনা। তুমি চলে যাও গ্রামের কাজে। বাবাকে পাঠিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গেছে গোপীনাথ এর জন্য রান্না করতে।

কিন্তু ছোট্ট বার বছরের শিশু সে তো রান্না করতে জানে না,রন্ধনশালায় গিয়ে দেখে সব কিছু গোছানো আছে কিন্তু রান্না হয়নি। তাই সমস্ত কিছু একসাথে এক পাত্রে দিয়ে রান্না বসিয়ে দিয়েছে। রান্না বসিয়ে দিয়ে বলছে, শুনো গোপীনাথ আজ কিন্তু বাবা ঘরে নেই, আমি যেমন করে রান্না করবো সেই ভাবেই তোমাকে সেবা নিতে হবে। রান্না শেষ করে একটা পাত্রের মধ্যে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেছে,মন্দিরে প্রবেশ করে গোপীনাথ কে ডাকছে গোপীনাথ ওগো গোপীনাথ রান্না কেমন হয়েছে?
জানিনা আজ বাবা ঘরে নেই আজ আমি রান্না করেছি তোমার জন্য। তুমি কিন্তু একটু কষ্ট করে সেবা করে নেবে। কারন আমি তো কোনদিন রান্না করিনি জানিনা কেমন হয়েছে আজ একটু কষ্ট করে সেবা করে নাও, কালকে বাবা এসে তোমায় ভালো করে রান্না করে সেবা দেবে।

ডাকছে- কিন্তু গোপীনাথ তো আর আসছে না। ডাকছে ও গোপীনাথ দাঁড়িয়ে আছো যে, তাড়াতাড়ি এসো তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। কত কষ্ট হয়েছে জানো রান্না করতে আমার। আমি তো কোনদিন রান্না করিনি, এস শিগগির এসে সেবা করে নাও।এত ডাকছে তবুও গোপীনাথ আসছে না।

#হে ভক্তগণ,
#আমরাও তো ভগবানের সেবা দিই, গোবিন্দ আসেকি? তিনি সেবা নেন কি?

বালক চিন্তা করছে কি হলো প্রতিদিন তো বাবা সেবা দেয়, কই আজ কেন আসছে না?
কি হলো দেখিতো!!!
চারদিকে খুঁজতে খুঁজতে দেখল মন্দিরের দরোজাটা খোলা।
ও এইতো বাবা প্রতিদিন সেবা দেবার সময় দরজা বন্ধ করে সেবা দেয়, আজকে দরজা খোলা তাই তুমি আসছো না... তাই মনে হয়। গোপীনাথ ,ঔ দেখো দরজা বন্ধ করে দিয়েছি আর এসে সেবা করে নাও।
ওগো কখন থেকে ডাকছি তোমায় তুমি কি শুনতে পাও না? আমার কি কষ্ট হয় না? কখন থেকে তোমায় ডাকছি এসো গোপীনাথ, তুমি জানো কত কষ্ট করে তোমার জন্য রান্না করেছি?

 এসো তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। গোপীনাথ ওগো একবার এসে সেবা  নিয়ে যাও গোপীনাথ। গোপীনাথ গোপীনাথ গোপীনাথ বলে কাঁদছে আর গোপীনাথ কে ডাকছে।
ছোট্ট ছেলেটি বলছে কি মনে করছো ,আমি কখন থেকে তোমায় ডাকছি, শুনো গোপীনাথ আমি যখন না সেবা নিই, তখন আমার বাবা আমাকে জোর করে খাওয়ায়। আজ তুমি আসবে নাতো দাড়াও। মন্দির থেকে বাহিরে গিয়ে খুঁজে খুঁজেএকটা লাঠি যোগাড় করলো।

লাঠিটা হাতে করে নিয়ে মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করে বলছে গোপীনাথ দেখতে পারছ আমার হাতে কি আছে?
আমি যখন না খাই আমার বাবা আমায় মেরে মেরে খাওয়ায়। যদি তুমি ভালো চাও তবে চলে এসো। কি ভেবেছ আজ বাবা ঘরে নেই তাই আসবে না!!! আমার কি কষ্ট হয় না? যদি ভালো চাও চলে এসো। তা না হলে এই লাঠি দিয়ে তোমার মেরে মেরে নিয়ে আসবো। ভক্ত যেইনা লাঠির ভয় দেখিয়েছে মা ভগবান কি আর দূরে থাকতে পারে।হরিবল হরিবল।

পাথরের মূর্তি ভগবান মনে মনে বলছে ভক্ত তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো? আমাকে লাঠির ভয় দেখাচ্ছ? আর তোমাকে লাঠির ভয় দেখাতে হবে না, এইতো চলে আসছি।
পাথর থেকে সচল মূর্তি ধারণ করে এক পা দু পা করে পাতা আসনে বসেছে। রঘুনন্দন মনে মনে চিন্তা করছে দেখেছো এত সময় ডাকছি তখন আর আসছিলেনা যেইনা লাঠির ভয় দেখেছি তখনই চলে আসছে। রঘুনন্দন বলছে শিগগিরই সেবা করে নাও। আজ আমি রান্না করেছি জানিনা কেমন হয়েছে?

তাড়াতাড়ি সেবা করে নাও। ভগবান এক মুষ্টি হাতে নিয়ে বলছে ভক্ত তুমি জানোনা ভক্ত এতদিন তোমাদের ঘরে আমি আছি ,কিন্তু এমন অমৃত এর আগে কখনো সেবা করিনি। আমার ভক্ত আমার জন্য রান্না করেছে সে কি কখনো খারাপ হতে পারে?
ভগবান বলছে এ তো অমৃত। এমন খাবার আমি আগে কখনো সেবা করিনি।  ভগবানের সেবা করছে, রঘুনন্দন পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেবা করতে করতে প্রায় শেষ হয়ে গেছে আর নেই। একটুখানি গোপীনাথের হাতে আছে ঠিক তখন রঘুনন্দন দেখে গোপিনাথের হাতটা চেপে ধরেছে। গোপীনাথ তুমি কেমন বলতো আগে তো আসছিলে না। আগে তো আসছিলে না ,এসেছো ঠিক আছে, সেবা করছো করো, কিন্তু তাই বলে সবটুকু সেবা করে নেবে!!!
এখনো তো আমি আর আমার বাবা বাকি আছি,  রান্না করে সবটুকু যে তোমায় ধরে দিয়েছি ,আমাদের জন্য একটু রেখে দাও।

ভগবান বলছেন জানো আজ না তোমার হাতের রান্না পেয়ে আমার কারো কথা মনে ছিলনা। ঠিক আছে যতটুকু আছে ততটুকু তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি।

ওমা আনমান করে বিগ্রহে গিয়ে মিলিত হয়েছে গোপীনাথ। পাত্রে তো বেশি ছিল না যতটুকু ছিল রঘুনন্দন সেইটুকু সেবা করে পাত্রটি ধৌত করে তুলে রেখেছে।

যথাসময়ে মুকন্দ দাস বাড়ি  ফিরেছে। ছেলেকে ডাকছে রঘুনন্দন আমি যে বলে গিয়েছিলাম গোপীনাথের সেবা দিতে দিয়েছিস বাবা? হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা সেবা দিয়েছি। তোমার কোন চিন্তা করতে হবে না বাবা। আমি সেবা দিয়ে দিয়েছি তোমার গোপীনাথের।

এবার আমাকে একটু প্রসাদ দেতো বাবা।
 #প্রসাদ?? #প্রসাদ নেই বাবা। কেন? কোন বন্ধু বা আত্মীয় এসেছিল? নাকি কোন ভক্ত এসেছিল? কেউ আসেনি বাবা। কে আসবে? তোমার গোপীনাথ তো সব সেবা করে ফেলেছিল। ভাগ্যিস আমি হাতটা চেপে ধরেছিলাম বলে আমার জন্য একটুকু রেখে দিয়েছিল। যেটুকু রেখেছিল সেইটুকুই আমি সেবা করে নিয়েছি বাবা।

#মুকুন্দদাস মনে মনে ভাবছে যে এতদিন আমি সেবা দিই ,কোনদিন গোপীনাথ সেবা করে না, আর আজ আমি ঘরে নাই আজ সেবা করে নিল? মিথ্যে কথা!!! আমার পুত্র মিথ্যে কথা বলছে। কারণ সে তো পাথরের মূর্তি / বিগ্রহ সে তো এসে বলবে না ও মুকুন্দ আমি সেবা করিনি তোমার ছেলেই প্রসাদ সবটুকু সেবা করেছে। সে তো পাথর সে তো কথা বলতে পারেনা।

হে ভক্তগন,
   #যার যেমন ভাগ্য মা। মুকুন্দ দাস সারাজীবন পাথর এর বিগ্রহ ভেবে চিরকাল সেবা দিয়েছে। আর তার ছেলে ররঘুনন্দন দাস সেবা দিয়েছে আপনজন/ নিজের জন ভেবে। সে জানে আমি যেমন বাবার সন্তান এই গোপীনাথ ও আমার বাবার সন্তান। তাইতো সে দেখা পেল মুকন্দদাস দেখা পেল না।

#মুকন্দ দাসের মনের সন্দেহ মনেই থেকে গেল। পরেরদিন মুকন্দ দাস ছেলেকে পরীক্ষা করার জন্য বলছে রঘুনন্দন তুইতো ভালো পূজা দিতে শিখেছিস বাবা, জানিস বাবা গ্রামে আজও যেতে হবে। তাই তুই এক কাজ করিস। আজ আর রান্না করতে হবে না ঘরে নাড়ু তৈরি করা আছে গোপীনাথ নাড়ু সেবা করতে ভালোবাসে। তুই একটু নাড়ুটা দিয়ে সেবা দিয়ে দিস। রঘুনন্দন বলছে ঠিক আছে বাবা তুমি কোন চিন্তা করো না, আমি ঠিক সময় মতো গোপিনাথের সেবা দিয়ে দিব।

একটা পাত্রে নাড়ু সাজিয়ে দিয়ে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করছে। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করে গোপীনাথ কে ডাকছে গোপীনাথ ও গোপিনাথ আমাকে চিনতে পারছ তো? কালকে এসেছিলাম আজ কিন্তু এত ডাকতে পারবো না। শিগগিরি চলে এসো। বাবা বলেছে তুমি নাকি নাড়ু সেবা করতে ভালোবাসো। তাই বাবা তোমার জন্য নাড়ু করে রেখেছিল সেটাই এনেছি তাড়াতাড়ি এসে সেবা করে নাও।

ওমা ভগবান পাথরের ভিগ্রহ থেকে সচল মূর্তি ধারণ করে বলছে, ভক্ত আর তোমাকে ডাকতে হবে না। কোন ভক্ত যদি আমাকে একবার ডাকার মত ডাকে আমি এক ডাকেই সারা দিই। সারা জনম ডাকা লাগেনা গো। কোন  ভক্তের ডাক যদি আমার কানে একবার পৌঁছায় আমি জনম জনম তাকে ভুলি না। আর তোমাকে ডাকতে হবে না। এইতো আমি চলে এসেছি।

পাতা আসনে বসে বলছে ভক্ত তুমি আমার জন্য নাড়ু করেছ? না না আমি করিনি। আমার বাবা তৈরি করেছে। গোপিনাথ মনে মনে বলছে বাবাই তৈরি করুক আর যেই তৈরি করুক আমার ভক্তের তো হাতের ছোঁয়া লেগে আছে।
একটা নাড়ু নিয়ে যেইনা বদনে দিয়েছে গোপীনাথ ঠিক সেইসময় রঘুনন্দন পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কালকের মত আজও আমি দাঁড়িয়ে থাকি আর একটু একটু করে গোপীনাথ সব সেবা করে নেবে। আজ আর তা হতে দেব না। আজ গোপীনাথ ও সেবা করবে আমিও সেবা করব। সেই না বললে গোপিনাথের পাত্র থেকে একটা নাড়ু তুলে নিয়েছে আর তুলে নিয়ে বদনে দিয়েছে। যেই না ভালো লেগেছে অর্ধেকটা সেবা করেছে আর অর্ধেকটা এঠু নাড়ু গোপীনাথের বদনে  ধরেছে, আর রঘুনন্দন বলছে সেবা করে দেখো গোপীনাথ, আমার বাবা তৈরি করেছে তোমার জন্য ,কত সুন্দর হয়েছে কত সুস্বাদু হয়েছে।

 ওমা অন্ধ ভালোবাসা। এই মধুর প্রেম। ভগবান অঝোর নয়নে কাঁদছে আর মনে মনে বলছে-আর ভগবানকে কাঁদতে দেখে রঘুনন্দন মনে মনে ভাবছে আমি মনে হয় এঠো নাড়ু দিয়েছি বলে গোপীনাথ কাঁদছে?

ও গোপীনাথ তুমি কাঁদছো ,আমি এঠো নাড়ু দিয়েছি তাই তুমি কাঁদছো? ঠিক আছে তুমি কেঁদোনা আমি আর তোমাকে আমার এঠো নাড়ু দেবো না। কেন জানো আমি তোমাকে আমার এঠো নাড়ু দিয়েছিলাম? আমার যে ভালো লেগেছিল। তাই তোমায় আমি আমার এঠু নাড়ু দিয়েছিলাম। তুমি কেঁদোনা গোপীনাথ।

   ভগবান বলছে ভক্ত তুমি আমাকে এঠো নাড়ু দিয়েছো বলে আমি কাঁদছি না। আমি কাঁদছি কেন জানো ভক্ত? তুমি যদি আমায় তোমার এঠো নাড়ু খাইয়ে দিতে পারো, আমি কি  আমার প্রসাদি নাড়ু তোমাকে খাইয়ে দিতে পারি না ? রঘুনন্দন বলছে নিশ্চয়ই,ভগবান বলছে তুমি আমাকে খাইয়ে দাও, আর আমি তোমাকে খাইয়ে দিই। ভক্ত ভগবানের মধুর মিলন, মধুর ভালোবাসা, মধুর প্রেম।

মুকুন্দ দাস মন্দিরের আড়ালে চুপিচুপি লুকিয়ে আছে সে আর সহ্য করতে পারছে না।

হঠাৎ সে শুনতে পেল মন্দিরের ভিতরে আমার পুত্র ছাড়াও একজনের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, তবে কে সে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেছে, আর যেই না দরজা খুলেছে ভগবান অর্ধনাড়ু রেখেই পাথরের মূর্তিতে অবস্থান নেন। মুকুন্দ দাস ছুটে গিয়ে সন্তানকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলছে, ওরে রঘুনন্দন এতদিনে সেবা আমার অযোগ্য হলো বাবা। আমি ভগবান কে সেবা দিয়েছি পাথরের মূর্তি / বিগ্রহ ভেবে আর তুই সেবা দিয়েছিস আপনজন ভেবে। তাইতো তুই তার দেখা পেলি আমি পেলাম না। আয় বাবা আমার বুকে আয়। এতদিনের আমার অযোগ্য দেহ যোগ্য করি।

 হে ভক্তগণ,----
আমিও তো ভগবান কে ভালবাসি, সেবা দেই। কিন্তু আমার যে গোবিন্দ কে দর্শন করার প্রেমের নয়ন/ জ্ঞানের নয়ন/ ভক্তির নয়ন নেই। আমিতো তার যুগল চরণ দেখতে পেলাম না। আমি তো তার কোনদিন রুপখানি দর্শন করি নি। আমি তো কখনো তার চরণে নূপুরের শব্দ শুনতে পারি নি, আমিতো তার মুখের বাঁশীর ধ্বনি শুনতে পারিনি । আমার অন্তরে কৃষ্ণ চরণে সেবা করার অনুরাগ নেই।
                                         হরে কৃষ্ণ,,,,,,,,,,,,

প্রভূ জগন্নাথ দেবের মহিমা

🔺প্রভূ জগন্নাথ দেবের মহিমা 🔺
            সব ভক্তদের অনুরোধ করি , গল্পো টা একটু মনোযোগ দিয়ে পরবেন, আশা করি খুব ভালো লাগবে । আমার পরে চোখে জল এসে গেল তাই পোষ্ট করলাম ।।
🔸অনেক আগের কথা 🔸
✔গৌরিদাসী নামে একটি মেয়ে ছিল
✔মেয়েটি জগন্নাথ দেব কে খুব ভালবাসতেন
✔মেয়েটির যখন পূর্ণ যৌবন তখন তার বিবাহ হল
✔গৌরিদাসী তার স্বামী কে বললো
✔আমাকে একদিন প্রভু জগন্নাথের কাছে নিয়ে যাবে?
✔তার স্বামী বললো এখন না পরে একদিন যাব।
✔কিন্তু দিন যেতে যেতে অনেক দিন চলে গেল কিন্তু ✔তার স্বামী গৌরিদাসী কে নিয়ে জগন্নাথ ধামে গেলনা।
✔এদিকে গৌরিদাসী সন্তান সম্ভবা হলেন ।
✔একদিন রাতে গৌরিদাসী সকলকে বল্লেন
✔আমাকে তো ঠাকুরের ধামে নিয়ে গেলে না
✔একনদিন আমি একাই চলে যাব।
✔সেই রাতে গৌরিদাসী একা একা ঠাকুর এর ধামের
✔উদ্দেশ্যে বাহীর হলেন ।
✔যেতে যেতে একটা গভীর বনের মাঝে পৌছে গেলেন ।
✔সেই বনে কত বাঘ ভাল্লুক সাপ আরও কত জীব ছিল
🚩মাঝে মধ্যে বাঘের গর্জন শোনা যাচ্ছিল ।
🚩গৌরিদাসীর কোনদিকে খেয়াল ছিল না ।
🚩তার একটাই লক্ষ ছিল জগন্নাথ ধামে পৌছান।
🚩জগন্নাথ ঠাকুর কে সে দু নয়ন ভরে দেখবে এই ছিল
🚩তার একমাত্র উদ্দেশ্য ।
সেই গভীর বনের মাঝে
🔯গৌরিদাসী সন্তান প্রসব করলেন
🔯কিন্তু তার সদ্যজাত সন্তান কে ফেলে তিনি পুরি ধামে 🔯পৌছে গেলেন ।
🔯কিছু দিন পর তার বাড়ির কথা মনে পরল
🔯বাড়ি র উদ্দেশ্য যাত্রা করল।
🌷সেই  বনে পৌছে তার সন্তান এর কথা মনে পরল ।
🌷ভাবল সেকি আর বেচে আছে।
🌷যাকে ভূমিষ্ঠ হবার সঙ্গে ই এই বনে ফেলে চলে গিয়েছিলাম ।
🍁এই ভাবতে ভাবতে সামনে দেখে তো অবাক ।
দেখে এক বৃদ্ধা মহিলা একটি সন্তান কে কোলে নিয়ে বসে আছে ।
গৌরিদাসী তো অবাক ।
এ কি করে সম্ভভব?
বৃদ্ধা মহিলা বল্লেন মা এই নে তোর ছেলেকে একটি বার কোলে নে মা।
গৌরিদাসী চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো কে তুমি মা।
এই গভীরে বনে তুমি কি করছ।
বুরিমা বললেন আমি এই বনের পাশাপাশি থাকি তোমার ছেলের কন্না শুনে এখানে এসেছি।
গৌরিদাসী বললো
তুমি কে সত্য পরিচয় দাও।
তা না হলে ছেলেকে কোলে নেবনা।
তখন বুরিমা
আসল পরিচয় দিলেন
গৌরিদাসী দেখলেন জগন্নাথ দেব তার সামনে দাঁড়িয়ে ।
গৌরিদাসী বল্লেন ঠাকুর তুমি ।
এই গভীর বনে আমার সন্তান কে কোলে নিয়ে বসে আছ?
প্রভু বল্লেন মা তোর ত্যাগ আর ভক্তিতে আমি খুব প্রসন্ন হয়েছি তুই কি চাস বল।
গৌরিদাসী বল্লেন ঠাকুর কৃপা করে আমায় দেখা যখন দিয়ে ছ তোমার ঐ চরনে আমাকে আর আমার সন্তান কে ঠাই দাও প্রভু।
প্রভু ঠিক তাই করলেন গৌরিদাসী কে আলিঙ্গন করলেন আর তাকে   আর তাঁর  সন্তান কে চরনে ঠাই দিলেন
ঠাকুর বল্লেন কে বলেছে আমি ভক্তের ডাকে সারা দিই না।
👉জগতে তোর মত যে ত্যাগ করতে পারে।
👉আর আমাকে ভালবাসতে পারে ।
👉আমি তার হয়ে যাই।
🍀🍀জয় জগন্নাথ 🍀🍀
🌹🌹ঠাকুর তুমি সবার মঙ্গল কর।🌹🌹

শ্রী_শ্রী_লক্ষ্মী_মাতা_শরণম্

♥#শ্রী_শ্রী_লক্ষ্মী_মাতা_শরণম্♥
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

♦আজ লক্ষ্মী বার। আসুন মায়ের মহিমা পাঠ করি।♦ লক্ষ্মী হলেন একজন হিন্দু দেবী। তিনি ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। তিনি বিষ্ণুর পত্নী। তার অপর নাম মহালক্ষ্মী।
 লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। লক্ষ্মী ছয়টি বিশেষ গুণের দেবী। তিনি বিষ্ণুর শক্তিরও উৎস। বিষ্ণু রাম ও কৃষ্ণ রূপে অবতার গ্রহণ করলে, লক্ষ্মী সীতা ও রাধা রূপে তাদের সঙ্গিনী হন। কৃষ্ণের স্ত্রীদের কেও লক্ষ্মীর অবতার রূপে কল্পিত হন।♦

🌼#লক্ষ্মী_পূজো🌼
লক্ষ্মীর পূজা অধিকাংশ হিন্দুর গৃহেই অনুষ্ঠিত হয়। দীপাবলি ও কোজাগরী পূর্ণিমার দিন তার বিশেষ পূজা হয়। এটি কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নামে খ্যাত। বাঙালি হিন্দুরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করে থাকেন।

🌼#পৌরাণিক_ও_লৌকিক_গল্প🌼
🌼#লক্ষ্মী_দেবীর_ব্রতকথা🌼

♦লক্ষ্মীকে নিয়ে বাংলার জনসমাজে বিভিন্ন জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। এই গল্পগুলি পাঁচালির আকারে লক্ষ্মীপূজার দিন পাঠ করা হয়। একে লক্ষ্মীর পাঁচালি বলে। লক্ষ্মীর ব্রতকথাগুলির মধ্যে "বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা" সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও "বারোমাসের পাঁচালি"-তেও লক্ষ্মীকে নিয়ে অনেক লৌকিক গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়।

♦বাঙালি হিন্দুরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর সাপ্তাহিক পূজা করে থাকেন। এই পূজা সাধারণত বাড়ির সধবা স্ত্রীলোকেরাই করে থাকেন।

 "#বৃহস্পতিবারের_ব্রতকথা"- এই বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীব্রত ও পূজা প্রচলন সম্পর্কে একটি যে লৌকিক গল্পটি রয়েছে, তা এইরকমঃ-
♦ এক দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখকষ্টের কথা বললেন। লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এই সব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন।. কিন্তু নারদের অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে তিনি মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন।

♦ অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া চলছিল। ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন। লক্ষ্মী তাকে লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল।

♦ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল। একদিন অবন্তীর সধবারা লক্ষ্মীপূজা করছেন, এমন সময় শ্রীনগরের এক যুবক বণিক এসে তাদের ব্রতকে ব্যঙ্গ করল। ফলে লক্ষ্মী তার উপর কুপিত হলেন। সেও সমস্ত ধনসম্পত্তি হারিয়ে অবন্তী নগরে ভিক্ষা করতে লাগল। তারপর একদিন সধবাদের লক্ষ্মীপূজা করতে দেখে সে অনুতপ্ত হয়ে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমা চাইল। লক্ষ্মী তাকে ক্ষমা করে তার সব ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন। এইভাবে সমাজে লক্ষ্মীব্রত প্রচলিত হল।

🌼#লক্ষ্মী_দেবী_ধ্যানমন্ত্র🌼
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্।রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।

🌼#অর্থ🌼
 দক্ষিণহস্তে পাশ, অক্ষমালা এবং বামহস্তে পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপা, ত্রিলোকমাতা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা, ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণহস্তে বরদাত্রী দেবীকে ধ্যান করি।

🌼#গায়ত্রী_মন্ত্র🌼
ওঁ মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রীয়ৈ ধীমহি তন্নোঃ শ্রী প্রচোদয়াৎ।

🌼প্রনাম মন্ত্র🌼
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সর্ব্বত পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমহস্তুতে।।

♥#শ্রী_শ্রী_রাজ_কালী_বাড়ী_চান্দিনা♥

তারাপীঠের মা

তারাপীঠের মা তারা, বশিষ্ঠের আরাধিতা দেবী। এছাড়াও দত্তাত্রেয়, দুর্বাসা, পরশুরাম, ভৃগূ, বামদেব অনেক সাধকগন তারাপীঠে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন।

মা তারা আট রূপে বিরাজমানঃ তারা, উগ্রতারা, মহোগ্রতারা, বজ্রা, নীলা, স্বরসতী, কামেশ্বরী ও ভদ্রকালী। 🌺

তারাপীঠ মহাশ্মশানে বশিষ্ঠদেব শ্বেতশিমূল তলায় দেবীর শিলামূর্তি সাধনার বলে আবিষ্কার করেন। সেই শিলামূর্তি পরে মা এর আদেশে জয় দত্ত নামে এক বনিক খুঁজে পান এবং মূর্তি মন্দিরে প্রতীষ্ঠা করেন। পরে রামজীবন চৌধূরী ,নাটোরের রাজা রামকৃষ্ণ রায় মন্দির সংস্কার করেন। পরে মল্লারপুরের জগন্নাথ রায় ভগ্ন মন্দির সংস্কার করেন।

হবর্তমানে শিলামূর্তির উপর রূপোর যে ধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে সেটি নাটোরের রাজা রামকৃষ্ণ রায় স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে তৈরি করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে যারা তারাপীঠে পূন্য অর্জন করতে যান তারা কেউ যেন শিলামূর্তি দর্শন না করেন বা পূজা না করেন। পূজারী, পান্ডা, সাধু ছাড়া এই শিলামূর্তি দর্শন নিষেধ।

পূজা দিতে গেলে রাজ বেশে অধিষ্ঠীতা দেবীকেই পূজা করুন। তারা পীঠে পূর্ন ভাবে পূন্য অর্জন করতে গেলে প্রথমে তারাপীঠে ঢোকার মুখে হনূমানজীর স্মরন করুন, কারন দেব ও দেবী স্থানের অধিষ্ঠীত দেবতা হলেন হনূমানজী স্বয়ং।

তারপর তারাপীঠের লাগোয়া মল্লারপুরে যান, মল্লেশ্বর ভগবান শিব কে পূজা দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করুন।

মা বলেন,-“বাবা সন্তুষ্ট হলে আমি সন্তুষ্ট”। আসার পথে আটলা গ্রামে বামদেবের জন্মভীটাতে ফুল দিয়ে আসুন। পরের দিন দ্বারকা নদীতে স্নান করে মা এর পূজা করুন।মনে রাখবেন মনের ভক্তি, বিশ্বাস, প্রার্থনাই মূল। অবশ্যই মহা শ্মশানে মা এর চরণ পদ্মে ও বামদেবের সমাধী মন্দিরে পূজা করবেন। মা কখনো ভেট চাননা, পারলে গরীব ভীখারী, সাধূদের সাহায্য করুন, তাদের ভোজন করান।

যারা যশ, প্রতিপত্তি, সন্মান, খ্যতি চান তারা রবি বারে পূজা করুন।

যারা গান,বাজনা,অভিনয়,নৃত্যে সাফল্য চান তারা সোমবারে।

যারা শত্রু বীনাশ চান ও অঘটন থেকে রেহাই চান তারা মঙ্গল বারে।

যারা বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান কামনা করেন তারা বুধ বারে।

যারা ব্যবসা, অর্থ, ধন কামনা করেন তারা বৃহস্পতি বারে।

যারা দাম্পত্য জীবনে শান্তি, প্রেম-ভালোবাসা,
সন্তান চান তারা শুক্র বারে পূজা করবেন।

মূখ্য লাভের জন্য তন্ত্র-মন্ত্র-সাধনা লাভের জন্য শনি বারে পূজা করবেন।

মনে রাখবেন এটা তন্ত্র পীঠ। এখানে মা জাগ্রত বলেই বিশ্বাস।
🌺 কামরূপ কামাখ্যা নামের মাহাত্ম্যঃ

যোগিনীতন্ত্রে বলা হয়েছে, " হে সুরেশ্বরি! মানব এই পীঠে কোনো কামনা করে জপ ও পূজাকার্য করলে তার কামনা সিদ্ধ হয় বলে মর্তবাসীরা এই দেশের নাম কামরূপ হিসাবে অভিহিত করেছে।"

এছাড়া বৃহম্নীলতন্ত্রে উল্লেখ আছে," সকল পীঠের মধ্যে শ্রেষ্ঠপীঠ কামরূপ, এখানে পূজা করলে অনুত্তমা সিদ্ধিলাভ হয়। এই পীঠে যে ভক্তিভাবে স্থিরচিত্তে পূজা করে, সমস্ত পীঠ অবকাশ করে আমি (শিব) তাহার হৃদয়ে অবস্থান করি।"


|| কালী ||

" ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভূজাম ।
কালীকাং দক্ষিণাং দিব‍্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম ।।"

দশমহাবিদ‍্যাগণের প্রথমা দেবী হলেন কালী ।
ইনি আদ‍্যাশক্তি অপরাজিতা।
মহাভাগবত পুরাণমতে ইনার বিধ্বংসী রূপ মহাকালী নামে খ‍্যাতা । মহাকালের মহাশক্তি ইনি ।
'কালী' হলো 'কাল' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ । 'কাল' শব্দের অর্থ 'সময়' এবং অপর অর্থে 'মৃত্যু'
কালকে কলন (রচনা) করেন যিনি , তিনিই কালী । ঘোর কৃষ্ণবর্ণা ত্রিনয়নী এই দেবীর উগ্র ও সৌম্য , দুই রূপই সিদ্ধিপ্রদায়িনী । কালী মহামায়ার আদিরূপ । তিনি রূপে রূপান্তরে সহস্রনরূপা হন ।
দেবী কালীকার বুৎপত্তি নানাভাবে প্রসিদ্ধ ।

শম্ভ-নিশুম্ভ বধের জন্য পার্বতী ছলনাশ্রয়ী হলেন । ধারণ করলেন দেবী কৌশিকীর অপার লাবণ‍্যময়ী রূপ । সেই রূপে মোহিত হয়ে অসুরদ্বয় তাকে বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণ করলে দেবী তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যে পুরুষ তাকে সন্মুখসমরে পরাজিত করতে পারবে তাকেই তিনি বরমাল‍্য প্রদান করবেন।
অতঃপর এমন আপ্তবাক‍্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অসুর নৃপতিদ্বয় যুদ্ধ সূচনা করলেন । সেই যুদ্ধের সেনাপতি নির্বাচিত হলেন মহাক্রূর রক্তবীজ ! যার অলৌকিক ক্ষমতা এই যে, তার রক্তবিন্দু ভূমিষ্ঠ হলেই জন্ম নেবে সমান শক্তিশালী অপর একটি রক্তবীজ। এই দৈত্য দলনে অক্ষম চন্ডিকা (কৌশিকী) মহাক্রোধে তৃতীয় নয়ন উন্মীলিত করলেন এবং সেখান থেকে নিগর্ত হতে থাকা ত‍্যেজঃজ‍্যোতিপুঞ্জ  থেকে আবির্ভূতা হলেন কালীকা । করালবদনা কৃষ্ণাঙ্গী মুন্ডমালাবিভূষিতা এই দেবীর রূপে দানবসেনা সন্ত্রস্ত হলো । তিনি ভয়ালরূপা দৈত‍্যদলনী হয়ে অবতীর্ণা হলেন রণভূমে । তার রক্ত পিপাসু জিহ্বা দ্বারা শত শত অসুর সেনা ভক্ষণ করতে শুরু করলেন তিনি। একেকটা ফুৎকারে নিশ্চিহ্ন হতে লাগলো অগণিত অসুর।

অবশেষে তিনি পৌঁছালেন রক্তবীজের নিকট। তার মুখ‍্য আয়ুধ খড়্গ দ্বারা বারংবার রক্তবীজের মুন্ডচ্ছেদ করলেও রক্ত মাটিতে পরা মাত্র জন্ম নিতে থাকলো নবজীবনপ্রাপ্ত হাজার হাজার রক্তবীজ । অতঃপর কালী রক্ত পান করার সিদ্ধান্ত নিলেন । একের পর এক রক্তবীজকে হত‍্যা করে তাদের শরীরের সমস্ত রক্ত পান করে চললে দেবী ।
অন্তীম রক্তবীজ দমন করে তিনি উন্মাদিনী হয়ে উঠলেন। তার জিঘাংসা বর্ধিত হলো । এবং রক্তের অঞ্জলী প্রাপ্তির আশায় তিনি মহাপ্রলয় শুরু করে দিলেন।

শুরু হলো ত্রিলোক কাপানো মহাকালীর লাস‍্য । অর্থাৎ দেবী যে ভঙ্গিতে নৃত্যপ্রদর্শন করেন তাকে বলা হয় লাস‍্য । যেমন পরমপুরুষের নৃত্য তান্ডব, তেমনি পরমাপ্রকৃতির নৃত্য হলো লাস‍্য।
এই লাস‍্যরতা আলুলায়িতকুন্তলা দেবীকে শান্ত না করা হলে সংসার রসাতলে যাবে , সেই আশঙ্কায় মহাদেব রণভূমে অবতীর্ণ হলেন । এবং দেবীর নৃত‍্য-কক্ষপথে শয়ন করলেন । দেবী নাচ করতে করতে অখেয়ালে শিবের বুকে তার ডান পা স্থাপন করলেন লজ্জায় তার লোলজিহ্বা বাহির করলেন । এই সর্বজনবিদিত সর্বজনীন রূপটি দক্ষিণাকালী রূপে পূজিত ।

কালীকাপুরাণের অপর একটি উপাখ্যানে পাওয়া যায় ভিন্ন একটি কাহিনী ।
সংসারযাপনে দাম্পত্যকলহ হরগৌরীর নিত‍্য সাথী । একদা শিবের প্রতি ভীষণ অভিমানে দেবী নদীর তীরে নিরালায় চলে যান ।শিব খুঁজতে খুঁজতে দেবীর কাছে এলে , দেবীর দুই আয়তাক্ষীর কাজল থেকে জন্ম নিলেন কালী । এবং বারংবার শিবের গতিরোধ করতে থাকলেন নানান ছলনায়। মহাদেব নিরুপায় হয়ে কালীর সামনে আত্মসমর্পণ করলেন এবং দেবীর আত্মপরিচয় ব‍্যক্ত করতে বললেন। দেবী কালী পতির আত্মসমর্পণে তুষ্ট হয়ে মেঘবর্ণা রূপ ত‍্যাগ করে গৌরী রূপে প্রত‍্যাবর্তন করলেন এবং যুগলের পূণর্মিলন ঘটলো ।

ইনি মূলত অনার্য দেবী এবং প্রধান তান্ত্রিক দেবী । সপ্তদশ শতকে নবদ্বীপ এলাকায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম এই দক্ষিণাকালী রূপে পুজোর প্রচলন করেন বঙ্গদেশে ।
এবং আগমশাস্ত্রীয় মতে নিষ্ক্রিয় পুরুষ ও সক্রিয় প্রকৃতি, তাই দেবীর পদতলে ভোলার অবস্থান ।

মহামায়ার এই ভয়ংকর রূপ মাতৃস্নেহে পরিপূর্ণা । তিনি সৃষ্টি, তিনি স্থিতি আবার তিনিই লয় । তিনি ধাত্রী । তিনি বিধ্বংসী । অর্থাৎ সময়ের সমস্ত ধারাবাহিকতা এনার অঙ্গুলি নির্দেশনায় চলে । তাই তিনি আদ‍্যাশক্তি দেবী কালী ।।
বৌদ্ধ ধর্মের তন্ত্র, সাধনা ও দেবদেবীর অজানা দিক এবং হিন্দুধর্মের সাথে এর মিল

আমাদের আজকের বিষয়টি গুহ্য তন্ত্র সম্বন্ধীয় যেখানে হিন্দু তন্ত্র ও বৌদ্ধ তন্ত্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। হিন্দু দেবদেবী ও বৌদ্ধ দেবদেবী সম্পর্কে তথ্যবহুল এই খবরটি শুধু যে দুই ধর্মের দেবদেবীর সম্পৃক্ততা বর্ণনা করে তা নয়, বরং বৌদ্ধ ধর্মের তন্ত্র ও আচার সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের গুহ্য দিকটির দিকেও আমরা আলোকপাত করছি।

তন্ত্র অর্থ কল্পিত দেবীসাধনা বা দেবীপূজা। একই নামের এবং বৈশিষ্ট্যের দেবীর হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় তান্ত্রিক ধর্মে উপস্থিতি হিন্দু তন্ত্রের বহু দেবীকে বৌদ্ধ দেবী হিসাবে ধারণাকে দৃঢ় করে। হিন্দু দেবী তারাকে হিন্দু তন্ত্রে পাওয়া যায়। এই তারা দেবীই যে বৌদ্ধ তারা বা উগ্রতারা বা একজটা দেবী, সে কথাও আজ প্রমাণিত।

হিন্দু এবং বৌদ্ধ তন্ত্রে এই দেবীর বর্ণনার সাদৃশ্য প্রচুর। সরস্বতী হিন্দুধর্মে পূজিতা, কিন্তু বৌদ্ধ-তন্ত্রেও এই দেবীর বিভিন্ন বর্ণনা দেখা যায়।

সুবন্ধুর ‘বাসবদত্তা’ বেতালা দেবীর মন্দিরের উল্লেখ করে। বৌদ্ধ তন্ত্রেও বজ্র বেতালীর কথা রয়েছে। মার্কণ্ডেয় ‘চণ্ডী’তে শক্তির মায়ূরী, কৌবেরী, অপরাজিতা, কপালিনী, বারাহী, ভীমা, প্রভৃতি রয়েছে। তেমনি বৌদ্ধ মতেও ভীমা, অপরাজিতা, বজ্রবারাহী, কপালিনী, কৌবেরী, মায়ুরী দেবীর উল্লেখ পাই।

দেবী চন্ডী শিবকে দূতরূপে পাঠিয়েছিলেন বলে দেবীকে ‘শিবদূতী’ বলা হয়। বৌদ্ধ তন্ত্রে দেবীকে ‘কালদূতী’ নামে দেখা যায়। পর্ণশবরী দেবী দুর্গার একটি প্রসিদ্ধ নাম। পর্ণ পরিহিতা পর্ণশবরীর কথা বৌদ্ধ ‘সাধনমালাতেও পাওয়া যায়। কালী ও ছিন্নমস্তা যা দশমহাবিদ্যার অংশ, আমরা বৌদ্ধ ধর্মেও এঁর দেখা পাই। বর্ণনায় দেখা যায়, ইনি ভয়ঙ্করী, দুই হস্ত বিশিষ্টা, অগ্নিকোণস্থিতা, নীলবর্ণা একহাতে কঙ্কাল ও অন্যহাতে অস্ত্র এবং শবের উপর অবস্থিতা।

বৌদ্ধতন্ত্রের রচনা হিন্দু ধর্মের তুলনায় প্রাচীন হওয়ায় বৌদ্ধতন্ত্রে যেসব দেবীর নাম পাওয়া যায়, হিন্দুধর্মে তাঁদেরকে দেখে ধারণা হতে পারে যে এই দেবীরা মূলতঃ বৌদ্ধ দেবী এবং বৌদ্ধধর্ম থেকেই হিন্দুধর্মে স্থানান্তরিত হয়েছেন।

কিন্তু আসলে হিন্দু বা বৌদ্ধ তন্ত্র বলে আলাদা কিছু নেই। মূল দর্শন, সাধনা ও বিষয়ের মধ্যে কোন তফাত নেই। তন্ত্র একটি স্বতন্ত্র সাধনা পদ্ধতি এবং এই সাধনা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হিন্দু তত্ত্বের সাথে যুক্ত হয়ে একে হিন্দু তন্ত্রের রূপ দান করেছে। আবার বৌদ্ধ তত্ত্বের সাথে যুক্ত হয়ে এটি বৌদ্ধতন্ত্রের রূপ দান করেছে। উভয়ক্ষেত্রেই দেবদেবী, উপদেবী, ডাকিনী-যোগিনী, যক্ষ-রক্ষ প্রভৃতির বর্ণনা, পূজা-বিধি বা ধ্যান-অর্চনাবিধি সবই প্রায় এক। উভয়ক্ষেত্রেই সমাজের বিভিন্ন স্তর প্রবণতায় পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় দেবদেবীর মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। বৌদ্ধ দেবী হিসাবে বজ্র, শূন্যতা, করুণা, বোধিচিত্ত, প্রজ্ঞা প্রভৃতির নামোল্লেখ আছে। সাধনার ক্ষেত্রে সকল মন্ত্র ও তন্ত্রযোগ একই। আসলে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবীর উৎপত্তির ইতিহাসে বিশেষ পার্থক্য নেই

বৌদ্ধতন্ত্রগ্রন্থ সাধনমালায় উড্ডিয়ান, কামাখ্যা, শ্রীহট্ট ও পূর্ণগিরি এই চারটি তন্ত্র পীঠস্থান বলে উল্লেখ আছে, যা বৌদ্ধদেবী বজ্রযোগিনীর পূজার জন্য বিখ্যাত ছিলো। তাছাড়া নালন্দা,সারনাথ বিক্রমশিলা, ওদন্তপুরী, জগদ্দল ইত্যাদি প্রাচীন বৌদ্ধ বিদ্যাপীঠস্থান বজ্রযান অর্থাৎ বৌদ্ধ তন্ত্র অনুশীলনের জন্য বিখ্যাত। পূর্ববঙ্গ ও আসামই তন্ত্রের আদি স্থান। এই স্থানে তান্ত্রিক বজ্রযানের উৎপত্তি হয় এবং এই স্থান থেকেই নিকটবর্তী প্রদেশগুলিতে ছড়িয়ে পরে। এইসব স্থানে তন্ত্র ও যোগমার্গের উপদেশ দেওয়া হত এবং ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া হত। বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যায় বজ্রযানের প্রভাব অত্যধিক ছিল এবং এইসকল স্থানেই বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি সর্বাপেক্ষা বেশি দেখা যেত।

বৌদ্ধ তান্ত্রিক দেবদেবীর সাধনার কথা গুহ্যসমাজতন্ত্রে উল্লিখিত হয়েছে। লামা তারানাথ নামক এক তিব্বতীয় বৌদ্ধ পণ্ডিতের মতে তন্ত্রের উৎপত্তি আগেই হয়েছিল, কিন্তু প্রায় তিন শত বৎসর সুপ্ত অবস্থায় ছিল এবং গোপনভাবে গুরুশিষ্য পরম্পরায় ছিল। পাল রাজত্বের সময় সিদ্ধাচার্যদের দ্বারা তা জনপ্রিয় হইয়া ওঠে।

শক্তির ধারণার ফলে আদিম তান্ত্রিক আচার-অনুষ্ঠান মহাযান বৌদ্ধধর্মে সম্পৃক্ত হয়। বৌদ্ধ গুহ্যতন্ত্রে মুদ্রা, মাংস ও মৈথুনকে সাধনার অঙ্গ বলা হয়েছে। নারীপুরুষের সম্মিলিত মিথুনমূর্তির দ্বারা বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব ও তাঁদের শক্তিসমূহ উপস্থাপিত হতে শুরু করে। এই সব গুহ্য, রহস্যময়, গূঢ়ার্থক মন্ত্র, যন্ত্র, ধারণী বীজ, ম প্রভৃতি সমস্ত আদিম কৌম সমাজের যাদুশক্তিতে বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত।

বৌদ্ধতন্ত্রে আচার্য অসঙ্গ সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, পর্বত কান্তারবাসী সুবৃহৎ কৌম-সমাজকে বৌদ্ধধর্মের সীমার মধ্যে আকর্ষণ করার জন্য ভূত, প্রেত, যক্ষ, রক্ষ, যোগিনী, ডাকিনী, পিশাচ ও মাতৃকাতন্ত্রের নানা দেবী প্রভৃতিকে অসঙ্গ মহাযান দেবায়তনে স্থান দান করেছিলেন। নানা গুহ্য, মন্ত্র, যন্ত্র, ধারণী প্রভৃতিও প্রবেশ করেছিল মহাযান ধ্যান-কল্পনায়, পূজাচারে, আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকর্মে এবং তাহাও অসঙ্গেরই অনুমোদনে।

এই সব গুহ্য, রহস্যময়, গূঢ়ার্থক মন্ত্র, যন্ত্র, ধারণী বীজ, মণ্ডল প্রভৃতি সমস্তই আদিম কৌম সমাজের যাদুশক্তি থেকে উদ্ভুত। বৌদ্ধ-দোহা ও গীতিগুলির মধ্যে আমরা এক ‘দেবী’র উল্লেখ দেখিতে পাই। এই দেবী নৈরাত্মা, নৈরামণি, ডোম্বী, চণ্ডালী, মাগঙ্গী, শবরী প্রভৃতি নানা নাম

আদিবুদ্ধের পঞ্চ প্রকারের ধ্যান আছে, যার প্রত্যেকটি ধ্যান থেকে এক জন ধ্যানিবুদ্ধর উদ্ভব।এঁরা হলেন বৈরোচন, রত্নসম্ভব, অমিতাভ, অমোঘসিদ্ধি এবং অক্ষোভ্য। এই পঞ্চ ধ্যানিবুদ্ধই যথাক্রমে রূপ-বেদনা-সংজ্ঞা-সংস্কার-বিজ্ঞান এই পঞ্চস্কন্ধের দেবতা। সৃষ্টি এই পঞ্চস্কন্ধাত্মক। এই পঞ্চ ধ্যানিবুদ্ধের পঞ্চশক্তি তারা বা বজ্রধাত্বীশ্বরী, মামকী, পাণ্ডরা, আর্যতারা এবং লোচনা। বহুকাল অবধি তাঁহারা যন্ত্রে থাকতেন। তাঁদের মূর্তি ছিল না।ক্রমে তাঁদেরও মূর্তি হল। পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের পঞ্চ শক্তিতে পাঁচ জন ‘বোধিসত্ত্ব’ হলেন। তাঁহাদের মধ্যে ‘মঞ্জুশ্রী’ ও ‘অবলোকিতেশ্বর’ প্রধান। বর্তমান কল্পে অর্থাৎ ভদ্রকল্পে ‘অমিতাভ’ প্রধান ধ্যানীবুদ্ধ। তাঁর বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বর– প্রধান বোধিসত্ত্ব।পঞ্চ-তথাগত মনুষ্যদেহের মস্তক, মুখ, হৃদয়, নাভী ও পাদদেশ এই পঞ্চস্থানে অধিষ্ঠান করেন

বৌদ্ধতন্ত্রে বলে সাধনা করলে প্রথমে শূন্যতার বোধ হয়, দ্বিতীয়ে বীজমন্ত্রের দর্শন হয়, তৃতীয়ে বীজমন্ত্র হইতে বিম্ব অর্থাৎ দেবতার অস্পষ্ট আকার দেখা যায় এবং অবশেষে দেবতার সুস্পষ্ট মূর্তি দর্শন হয়। সে মূর্তি অতি রমনীয়, সর্বাঙ্গসুন্দর কল্পনার অতীত, স্বর্গীয় বর্ণে রঞ্জিত এবং নানাপ্রকার দিব্য বস্ত্র অলংকার ও অস্ত্রশস্ত্রে শোভিত। একবার দেখিলে তাহা আর জীবনে বিস্মৃত হওয়া যায় না।’( বৌদ্ধদের দেবদেবী, উপোদ্ঘাত, পৃষ্ঠা ১৮-২১)

অনেক ডাকিনী, যোগিনী, পিশাচী, যক্ষিণী, ভৈরব, বুদ্ধগণের উপাস্য হইয়া দাঁড়ায়। এক ‘অভিধ্যানাত্তরতন্ত্রে’ ‘সম্বরবজ্র’ ‘পীঠপর্ব’ ‘বজ্রসত্ত্ব’ ‘পীঠদেবতা’ ‘ভেরুক’ ‘যোগবীর’ ‘পীঠমালা’ ‘বজ্রবীর-ষড়যোগসম্বর’ ‘অমৃতসঞ্জীবনী’ ‘যোগিনী’ ‘কুলডাক’ ‘যোগিনী যোগ-হৃদয়’ ‘বুদ্ধকাপালিকযোগ’ ‘মঞ্জুবজ্র’ ‘নবাক্ষরালীডাক’ ‘বজ্রডাক’ ‘চোমক’ প্রভৃতি অনেক ভৈরব ও যোগিনীর পূজাপদ্ধতি আছে। বোধিসত্ত্ব ও যোগিনীগণের ধ্যানকে সাধন বলে। যে পুস্তকে অনেক ধ্যান লেখা আছে তাহাকে ‘সাধনমালা’ বলে। একখানি ‘সাধনমালা’য় দুই শত ছাপ্পান্নটি সাধন আছে। ‘বজ্রবারাহী’, ‘বজ্রযোগিনী’, ‘কুরুকুল্লা’, ‘মহাপ্রতিসরা’, ‘মহামায়ূরী’, ‘মহাসাহস্র প্রমর্দ্দিনী’ প্রভৃতি অনেক যোগিনীর ধ্যান এতে আছে।

হিন্দু-তন্ত্রে যেমন শিব ও শক্তিকে অবলম্বন করে মিথুন তন্ত্র সাধনা গড়ে উঠেছে, তেমনই বৌদ্ধ-তন্ত্রেও করুণারূপী ভগবান্ ও প্রজ্ঞারূপিণী দেবী ভগবতীকে নিয়ে তান্ত্রিক মিথুন-সাধনা গড়ে উঠেছে। যোগ-সাধনায় এই ভগবতী এবং ভগবান্ ইড়া-পিঙ্গলা, গঙ্গা-যমুনা, বাম-দক্ষিণের রূপ গ্রহণ করেছেন।

অদ্বয়তত্ত্বই অর্ধনারীশ্বর তত্ত্ব– বামে দেবী ভগবতী, দক্ষিণে ভগবান্, দুই মিলে এক। তন্ত্রসাধনার এই ভগবান্ এবং ভগবতী পূর্বে বর্ণিত আদিবুদ্ধ ও আদিদেবীর সাথে সম্পৃক্ত হবার ফলে বৌদ্ধ তন্ত্রেও আমরা এক সর্বেশ্বর ভগবান্ এবং সর্বেশ্বরী ভগবতীর কথা পাই যিনি সাধারণতঃ শ্রীহেবজ্র, শ্রীহেরুক, শ্রীবজ্রধর, শ্রীবজ্রেশ্বর, শ্রীবজ্রসত্ত্ব, মহাসত্ত্ব, শ্রীমন্মহাসুখ, শ্রীচণ্ডরোষণ প্রভৃতি রূপ ধারণ করেছেন। সর্বেশ্বরী দেবী তাঁর অঙ্কবিহারিণীরূপে অথবা মিথুনাবস্থায় তাঁর সাথে যুক্ত। তিনি কোথাও বজ্রধাত্বীশ্বরী, বজ্রবারাহী, কোথাও ভগবতীপ্রজ্ঞা বা প্রজ্ঞাপারমিতা অথবা দেবী নৈরাত্মা। স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু মহেশ্বর-মহেশ্বরী এবং বৌদ্ধ সর্বেশ্বর-সর্বেশ্বরী বহু স্থানে একাকার হয়ে আছেন।

বৌদ্ধতন্ত্রের পরিণতি সম্পর্কে অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়ের পর্যবেক্ষণ হলো–
‘বজ্রযান ও কালচক্রযানে ব্যবহারিক ধর্মানুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্ষীণ হইলেও শ্রাবকযান ও মহাযান বৌদ্ধধর্মের কিছু আভাস তবু বিদ্যমান ছিল, কিন্তু ক্রমশ এই ধর্মের ব্যবহারিক অনুষ্ঠান কমে আসতে থাকে এবং সাথে সাথে গুহ্য সাধনা বাড়তে আরম্ভ করে অবশেষে গুহ্য সাধনটাই প্রবল ও প্রধান হয়ে দেখা দেয়।

নাথপন্থার চরম আদর্শ হচ্ছে নিজের মধ্যে অদ্বয়ের উপলব্ধি যা সম্ভব অমরত্ব অর্জন ও দিব্য দেহের দ্বারা। কায়সাধনের দ্বারা দিব্যদেহ লাভ করা যায়। চন্দ্র হচ্ছেন সোম বা অমৃতের উৎস যিনি মানবদেহে অবস্থিত সহস্রা অঞ্চলের (মস্তিষ্ক প্রদেশ) নীচে থাকেন। যে নির্যাস পরিদৃশ্যমান মানবদেহকে টিকিয়ে রাখে তা উৎপন্ন হয় ওই সোম বা অমৃত থেকে। একে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলেই অমরত্ব অর্জন করা যায়। কিন্তু এখানে একটি বিরাট অসুবিধা আছে। দেহের মধ্যে অবস্থিত চন্দ্র বা সোম থেকে ক্ষরিত অমৃতবিন্দু সূর্য শুষে নেন, যে সূর্য বাস করেন মানবদেহের নাভিমূলে। কাজেই এই অমৃতকে সূর্যের হাত থেকে রক্ষা করা দরকার। সেটা একটি উপায়ে করা সম্ভব। দেহের মধ্যে একটি আঁকাবাঁকা সর্পাকার নালী আছে যার দুটি মুখ এবং যা শঙ্খিনী নামেও পরিচিত। এই নালীর মুখটি, যা দিয়ে সোম ক্ষরিত হয়, দশম দ্বার নামে পরিচিত। এই মুখটি বন্ধ করতে পারলেই কাল বা মৃত্যুরূপী সূর্যের গ্রাস থেকে সোম বা অমৃতকে রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য কায়সাধন দরকার। কোন কোন গ্রন্থে তান্ত্রিক কুলকুণ্ডলিনীকে জাগানোর পদ্ধতির দ্বারাই অমৃতক্ষরণ রোধ করা যাবে এমন কথাও বলা হয়েছে।’- (নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস)। বৌদ্ধ-তন্ত্রের চক্রভেদ যোগমার্গে যে তিনটি প্রধান নাড়ীর উপর সিদ্ধাচার্যদের যোগ-সাধন প্রক্রিয়ার নির্ভর, তার প্রধানতমটির নাম অবধূতী। অবধূত-যোগ এই অবধূতী নাড়ীর গতি-প্রকৃতির উপর নির্ভর করতো।

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত । ।

। ।       শ্রী  শ্রী  রামকৃষ্ণ  কথামৃত      । ।

" তেল হাতে মেখে তবে কাঁঠাল ভাঙতে হয় ! তা না হলে হাতে আঠা জড়িয়ে যায়। ঈশ্বরে ভক্তিরূপ তেল লাভ করে তবে সংসারের কাজে হাত দিতে হয়।

" কিন্তু এই ভক্তিলাভ করতে হলে নির্জন হওয়া চাই। মাখন তুলতে গেলে নির্জনে দই পাততে হয়। দইকে নাড়ানাড়ি করলে দই বসে না। তারপর নির্জনে বসে, সব কাজ ফেলে দই মন্থন করতে হয়। তবে মাখন তোলা যায়।

" আবার দেখ, এই মনে নির্জনে ঈশ্বরচিন্তা করলে জ্ঞান বৈরাগ্য ভক্তি লাভ হয়। কিন্তু সংসারে ফেলে রাখলে ওই মন নীচ হয়ে যায়। সংসারে কেবল কামিনী-কাঞ্চন চিন্তা।"

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী !!

কলির জীবের কল্যাণ আর উদ্ধারের জন্য সচ্চিদানন্দঘন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধরায় আবির্ভূত হন নিমাই রুপে।সময়ের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন ভগবানের অবতারী গৌর সুন্দর ,, গৌরহরি ,, গৌরাঙ্গ ইত্যাদি নামে মহাপ্রভু রুপে। শ্রীচৈতন্যভাগবত থেকে আমরা মহাপ্রভুর অনেক বাণী পাই।যার মধ্যে প্রধান তেত্রিশটি বাণী।সেই বাণী সমূহ'ই ভগবদ্ভক্তদের জন্য আজ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।সবাই ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন করবেন।

০১/ শান্তি নয় ,, যজ্ঞ নয় ,, যোগ তপস্যা নয় ,, ত্রিতাপ ক্লিষ্ট কলির জীবের পক্ষে শুধু নাম ,, কৃষ্ণনাম।কৃষ্ণনাম উচ্চারণ ও কৃষ্ণনাম কীর্ত্তন সর্ব্ব সাধনার সার।নামেই তৃপ্তি ,, নামেই মুক্তি ,, নামেই যত শান্তি ,,নামেই সর্ব্বোচ আনন্দ।🌾

০২/ শ্রীকৃষ্ণের তিনটি শক্তি।চিৎশক্তি ,, বহিরঙ্গা শক্তি
আর জীবশক্তি।চিৎশক্তি হলো অন্তরঙ্গা নামে স্বরুপ
শক্তি।মায়াতন্ত্রোক্ত হলো জগৎ কারণ বহিরঙ্গা শক্তি।
আর জীবশক্তি হলো তটস্হা শক্তি।এই তিন শক্তিরই
আশ্রয় হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।🌾

০৩/ বুদ্ধি যেমন আত্মার আশ্রয় থেকেও তার গুনের সাথে যুক্ত হন না ,, তেমনি ঈশ্বর মায়াতে থেকেও তাঁর সুখ দুঃখাদি গুনের সাথে যুক্ত হন না।এটাই হলো তাঁর
ঐশ্বরিক শক্তি।🌾

০৪/ শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর।তাঁর বিগ্রহ সচ্চিদানন্দ-ময়। তিনি অনাদির আদি গোবিন্দ ,, তিনি সকলের আদি।তিনি সমস্ত কারণের কারণ অর্থাৎ মূলের মূল। 🌾

০৫/ একটি মাত্র তুলসী পত্র ও এক গন্ডুস জল দিলেই
ভক্ত বৎসল ভগবান ভক্তদের কাছে আত্মবিক্রয় করে
থাকেন।যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণকে তুলসী ও জল দেয় ,,তাঁর ঋণ শোধ করার কথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিন্তা করেন।🌾

০৬/ গোপীগণের যে প্রেম ,, তা হলো আত্মসুখ হীন ,, শ্রীকৃষ্ণের তৃপ্তিতেই তাঁদের তৃপ্তি ,, শ্রীকৃষ্ণের আনন্দে তাঁদের আনন্দ।এই প্রেম কামগন্ধ হীন।🌾

০৭/ প্রকৃতির উপরে পরব্যোম নামে যে ধাম ,,সেখানেই শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ বিভূতি আদি গুনে গুনবান।আর শ্রীকৃষ্ণ
অবতারের স্থিতি হলো তিন স্থানে ,, দ্বারকা ,, মথুরা ও
গোকুলে।তার মধ্যে সবার উপরে হলো ব্রহ্মলোক ধাম
শ্রীগোকুল।🌾

০৮/ যে মহাবিষ্ণুর একটি মাত্র নিঃশ্বাস কালকে অবলম্বন করে তাঁর লোমকুপ জাত ব্রহ্মা ,, বিষ্ণু ,, মহেশ্বর প্রমুখ ব্রহ্মান্ডনাথ গন জীবন ধারণ করেন, সেই মহাবিষ্ণু গোবিন্দের অংশ কণা।🌾

০৯/ শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের স্বভাব এই যে ,, লঘুর মতো গুরুর মনে ও সমান দাস ভাব এনে দেয়।তার প্রমাণ হলো শ্রীনন্দ মহারাজ।শ্রীকৃষ্ণের পিতা তিনি পরম গুরু।তবু তিনি শ্রীকৃষ্ণের চরণে আশ্রয় কামনা করেন।🌾

১০/ ভক্তগণের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি পিতা ,, মাতা ,, গুরু ,, সখা যে যে অভাবই থাক না কেন, শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের স্বভাবে তাঁদের মধ্যে দাস্য ভাবের স্ফুরণ হয়।🌾

১১/ বেদান্ত হলো ঈশ্বরের বাক্য।ব্যাসরুপে নারায়ণ নিজেই তা প্রকাশ করেছেন।ঈশ্বরের বাক্যে প্রেম প্রমাদ লালসা এসব নেই।🌾

১২/ ব্রহ্ম নিরাকার হবেন কেন ?? বেদ পুরাণে যে ব্রহ্মের কথা বলা হয়েছে,তিনি তো ঐশ্বর্যময় সাক্ষাৎ ঈশ্বর।যার থেকে জগতের উৎপত্তি ,, যার দ্বারা জগত প্রতিপালিত ,, যাতে সব লয়প্রাপ্ত হয় ,, তিনিই তো ব্রহ্ম।অপাদান, করণ ও অধিকরণ কারক।এই তিনটি ব্রহ্মের চিহ্ন।ব্রহ্ম যদি সাকার না হন,তিনি এসব কাজ করবেন কেন ??🌾

১৩/ ঈশ্বরের স্বরুপ সৎ ,, চিৎ ,, আনন্দময়।তিন অংশে তিন রুপ চিৎ শক্তি।আনন্দাংশে হ্লাদিনী শক্তি ,, সৎ অংশে সন্ধিনী শক্তি আর চিৎ অংশে সংবিৎ শক্তি।অন্তরঙ্গা চিৎশক্তি ,, তটস্হা জীবশক্তি ,, বহিরঙ্গা মায়া ,, এই তিনে করে প্রেমভক্তি !! ষড়বিধ ঐশ্বর্য প্রভুর চিৎশক্তির বিলাস।এমন শক্তি তোমরা মান না ,, এতো স্পর্ধা তোমাদের ?? ঈশ্বর জীবে ভেদ থাকে না ,,জীবকে ঈশ্বরের সাথে অভেদ কর কোন সাহসে ??🌾

১৪/ ভগবানে ভক্তিই হলো পরম পুরুষার্থ।ভগবানের গুনগান ,, তাঁর ভজনই কলির জীবের শ্রেষ্ঠ পথ।🌾

১৫/ গৃহহারা ধর্ম হলো ,, নিরন্তর শ্রীকৃষ্ণ সেবা আর শ্রীকৃষ্ণে নাম সংকীর্তন করা।🌾

১৬/ যার মুখে একবার কৃষ্ণনাম শুনবে ,, তাঁকেই জানবে বৈষ্ণব।একবার কৃষ্ণনাম করলে সর্বপাপ ক্ষয় হয়।হৃদয়ে নববিধা ভক্তির উদয় হয়।🌾

১৭/ কৃষ্ণ সম্পতি দারু ও জল রুপে প্রকট।সার্বভৌম, তুমি দারুব্রহ্ম জগন্নাথের আরাধনা কর।আর বচস্পতি, তুমি জলব্রহ্ম ভাগীরথীর সেবা কর।🌾

১৮/ নিরন্তর যার মুখে কৃষ্ণনাম ,, তিনিই হলেন বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ।তাঁর চরণ বন্দনা করবে।🌾

১৯/ যারা মায়াবাদী ,, তারা শ্রীকৃষ্ণ অপরাধী।তাদের মুখে কৃষ্ণনাম আসে না।🌾

২০/ কেশাগ্রের শতভাগের যে একভাগ ,, সেই একভাগের শতাংশের মতো সুক্ষ্ম হলো জীবের স্বরুপ।তাই জীব হলো চৈতন্যের স্বরুপের কলাতুল্য।সংখ্যায় তার অন্ত নেই।এই অসংখ্য জীবদের মধ্যে কোন ভাগ্যবান জীব গুরু শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে ভক্তি লতার বীজ লাভ করে।মালী হয়ে সেই বীজ রোপণ করে।শ্রবণ ,, কীর্ত্তন স্বরুপ জল সেচন করে।এই বীজ মহীরুহ হতে পারে যদি উপশাখায় বাধা না পায়।এই উপশাখা হলো মুক্তিবাঞ্ছা ,, নিষিদ্ধাচার ,, জীব হিংসা প্রভৃতি।এইসব উপশাখা বাড়লে মূল শাখা বাড়তে পারে না।🌾

২১/ শ্রদ্ধা ভক্তি থেকেই আসে প্রেম।অন্যান্য বাঞ্ছা ,, ঞ্জান ,, কর্ম ছেড়ে জীবের শ্রেষ্ঠ পথ হলো শ্রদ্ধাভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনুশীলন।🌾

২২/ সাধন ভক্তি থেকে রতির উদয়।রতি গাঢ় হলে হয় প্রেম।প্রেম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে স্নেহ ,, মান ,, প্রনয় ,, রাগ, অনুরাগ ,, ভাব ,, মহাভাব ইত্যাদি হয়।🌾

২৩/ জীবের স্বরুপ এই যে নিত্য শ্রীকৃষ্ণ দাস।কিন্তু জীব তা ভুলে যায় বলে মায়ার বন্ধনে সে কষ্ট পায়।🌾

২৪/ শ্রীকৃষ্ণ পরম ঈশ্বর ,, তিনি সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ ,, অনাদির আদি গোবিন্দ।অখন্ড মূলের মূল স্বরুপ।তিনি জ্ঞানযোগ ও ভক্তি এরুপ সাধনের বশে ব্রহ্ম ,, আত্মা ,, ভগবান এই তিন রুপে প্রকাশ হন।🌾

২৫/ অনন্ত শক্তি শ্রীকৃষ্ণের।তাঁর অসংখ্য শক্তির মধ্যে
তিনটি প্রধান শক্তি ,, চিৎশক্তি ,, জীবশক্তি ও মায়াশক্তি।🌾

২৬/ সর্ব্বস্বরুপের ধাম হলো পরব্যোম ধাম।তাতে পৃথক পৃথক বৈকুন্ঠ।এক একটি বৈকুন্ঠ চিন্তায় শত ,, সহস্র লক্ষযোজন। সব বৈকুন্ঠেই আবদ্ধ চিন্ময় ও ষড়ঐশ্বর্য্য পুর্ণ।🌾

২৭/ কর্ম ,, যোগ ,, ঞ্জান এসবের ফল অতি তুচ্ছ। শ্রীকৃষ্ণ ভক্তি ছাড়া তাতে আর অন্য কোনো ফল হয় না।কেবল জ্ঞানাদি ভক্তি দ্বারা মুক্তি দিতে পারে না।🌾

২৮/ শ্রীকৃষ্ণ সূর্যসম দিপ্যমান ,, মায়া অন্ধকার।যেখানে
শ্রীকৃষ্ণ ,, সেখানে মায়ার কোনো অধিকার নেই।🌾

২৯/ নাম সংকীর্ত্তনই কলি যুগের শ্রেষ্ঠ সাধনা।শরণ নিয়ে যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণে আত্মসমর্পণ করে ,, শ্রীকৃষ্ণ সে সময় তাকে আত্মসম জ্ঞান করেন।তারপর ভক্তির কথা।ভক্তি দু'রকম ,, বৈধী ও রাগানুগা ভক্তি।শাস্ত্রের নির্দেশে রাগহীন ব্যক্তি যে ভজনা করে,তাহলো বৈধী ভক্তি। ঈষ্টে গাঢ় তৃষ্ণা রাগের স্বরুপ লক্ষণ।ঈষ্টে আবিষ্টতা তার তটস্হ লক্ষণ।রগময়ী ভক্তির নামই রাগানুগা ভক্তি।যা হলে ভাগ্যবান ব্যক্তিরা ও প্রলুব্ধ হয়।🌾🌾🌴🌴

৩০/ আত্মা শব্দের অর্থ সাতটি।যেমন ব্রহ্ম ,, দেহ ,, মন ,, যত্ন ,, ধৃতি ,, বুদ্ধি ও স্বভাব।এই সাতটি কে যে লাভ করেন সেই হলো আত্মারাম।🌾

৩১/ কলিকালে ভক্তি ছাড়া পথ নেই।ব্রহ্ম শব্দের অর্থ
ষড় ঐশ্বর্য্য পূর্ণ ভগবান।তাঁকে নির্বিশেষ বললেই তাঁর
পূর্ণতায় হানি হয়।🌾

৩২/ প্রত্যহ যিনি কৃষ্ণ শব্দটি উচ্চারণ করেন তার কোনো দিন কোনো অভাব থাকে না।কেউ তার কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।মন প্রাণ শ্রীকৃষ্ণে অবস্থান করলে ,, শ্রীকৃষ্ণই তাকে সকল বিষয়ে লক্ষ করে রক্ষা করবেন।🌾

৩৩/ মায়ায় আবৃত হয়ে জীব আমি-আমরা বাক্য বলে থাকে।কিন্ত মায়া তাকে আবৃত করে কেন ?? শ্রীকৃষ্ণ ভজন না করলে বা শ্রীকৃষ্ণে ভক্তিমন না থাকলে মায়া তো সুযোগ পেয়ে ঝাপটে ধরবেই।🌾

   কৃষ্ণ সূর্য্যসম মায়া হয় অন্ধকার ,,
যথা কৃষ্ণ তথা নাহি মায়ার অধিকার !!

হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণকৃষ্ণ হরেহরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে

কৃষ্ণকালী

॥ কৃষ্ণকালী ॥

একবার কৈলাশ শিখরে ভগবান শঙ্কর দেবী পার্বতী কে বললেন " হে পরমেশানি যদি আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহ হয়ে থাকে তবে আমার একটি ইচ্ছা পূর্ন করো । দেবী আমি যেমন তোমার প্রিয়ভর্তা ও তুমি যেমন আমার প্রিয়পত্নী তদ্রুপ কোন এক মূর্তিতে তুমি পুরুষ আকার ধারন করে আমার প্রিয়তম হও ও আমি স্বয়ং নারী রূপে তোমার প্রেয়সী হব । " দেবী বললেন " আমার যে নবীনজলদপ্রভা কালী মূর্তি , সেই রূপেই পৃথিবীতলে পুরুষ রূপে আবির্ভূত হব ; তখন আমার মুণ্ডমালা পরিণত হবে বনমালায় , খড়্গ হবে বংশী , ঘোর অট্টহাস্য হয়ে উঠবে সুধাতরঙ্গিত রসের আকার । তখন তুমিও নিজাংশে স্ত্রী রূপে অবতীর্ণ হয়ে আমার সঙ্গে যুক্ত হবে লীলাসঙ্গিনী রূপে । " এই বলে ভগবতী কালিকা জন্ম নিলেন মায়াপুরুষ বিগ্রহা হয়ে বসুদেব ও দেবকীর তনয় শ্রীকৃষ্ণ রূপে ও সদাশিব অবতীর্ণা হলেন তার চির অনূরাগিণী রাধিকা তনু ধারন করে । মর্ত্যলোকে প্রকাশিত হলো পার্বতী পরমেশ্বরের আরেক যুগল মূর্তি ।

( লেখা সংগৃহীত - মহাভাগবত পুরাণ , অধ্যায় ৫০ , শ্লোক ১০ - ১৭ )

স্বামী বিবেকানন্দ

🌞 শুভ অপরাহ্ন🌻

একদিন স্বামী বিবেকানন্দ নিজের জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে গুরু রামকৃষ্ণের কাছে গেলেন। তিনি গুরুকে জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন।

স্বামী বিবেকানন্দ: আমি অবসর সময় খুঁজে পাচ্ছি না। জীবন আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  কাজ তোমাকে ব্যাস্ত করবে কিন্তু সৃজনশীলতা তোমাকে অবসর দেবে।

স্বামী বিবেকানন্দ:  জীবন এখন কেন এত জটিল ?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  জীবনের বিশ্লেষণ বন্ধ করো। .. এটা জীবনকে আরও জটিল করে তোলে।

স্বামী বিবেকানন্দ:  কেন আমরা অসুখী?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  উদ্বেগ তোমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই তুমি অসুখী।

স্বামী বিবেকানন্দ:  কেন ভাল মানুষ সবসময় কষ্ট পায়?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  ঘর্ষণ ছাড়া হীরা মসৃণ করা যায় না। আগুন ছাড়া সোনা বিশুদ্ধ হয় না। ভাল মানুষ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়, এটা তাদের ভোগান্তি নয়। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে তাদের জীবন আরও সুন্দর হয়ে যায়, তিক্ত নয়।

স্বামী বিবেকানন্দ:  আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে এইরকম অভিজ্ঞতা উপকারী?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  হ্যাঁ। সবসময় অভিজ্ঞতা হলো কঠিন শিক্ষকের মত। যে শিক্ষক তোমাকে আগে পরীক্ষার সম্মুখীন করে এবং পরে শিক্ষা দেয়।

স্বামী বিবেকানন্দ:  অনেক সমস্যার কারণে আমরা জানি না আমরা কোথায় যাচ্ছি …
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  যদি তুমি বাইরে তাকাও তাহলে বুঝবে না কোথায় যাচ্ছো। যদি ভেতরটা দেখো তুমি বুঝতে পারবে তুমি কোথায় যাচ্ছো। চোখ আমাদের দৃষ্টি দেয় আর হৃদয় আমাদের উপায় দেখায়।

স্বামী বিবেকানন্দ:  অসফলতা কি সফল পথে চলার চেয়েও বেশি কষ্টদায়ক ?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  সফলতা অন্যদের দ্বারা নির্ধারিত একটি পরিমাপ। সন্তুষ্টি নিজের দ্বারা নির্ধারিত একটি পরিমাপ।

স্বামী বিবেকানন্দ:  কঠিন সময়ে, কীভাবে আপনি অনুপ্রাণিত থাকেন?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  সর্বদা তুমি কতদূর যেতে পেরেছো তা দেখো, তুমি কতদূর যেতে পারো নি তা হিসাব করতে যেয়ো না। সবসময় তোমাকে কারা ভালোবাসে তা দেখো, কে ভালোবাসে না তা হিসাব করতে যেয়ো না।

স্বামী বিবেকানন্দ: মানুষ সম্পর্কে আপনার কী অবাক লাগে?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  যখন তারা কষ্ট করে তখন তারা অভিযোগ করে ‘এই কষ্ট কেনো আমাকে দেয়া হলো’। কিন্তু যখন তারা সফল হয় তখন তারা বলে না, ‘এই সফলতা কেনো আমাকে দেয়া হল?’

স্বামী বিবেকানন্দ:  কীভাবে আমি জীবন থেকে সেরাটা পেতে পারি?
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  তোমার অতীতকে অনুশোচনা ছাড়াই মেনে নাও। আস্থার সঙ্গে তোমার বর্তমান পরিচালনা কর। ভয় ছাড়াই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হও।

স্বামী বিবেকানন্দ:  একটি শেষ প্রশ্ন। কখনো কখনো আমি মনে করি আমার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয় না।
রামকৃষ্ণ পরমহংস:  সব প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়। বিশ্বাস রাখো এবং ভয় ছেড়ে দাও। জীবন কোন সমস্যা নয় যে সমস্যার সমাধান করতে হবে, জীবন একটি রহস্য যার সমাধান করতে হবে। বিশ্বাস কর, যদি তুমি জানো কিভাবে বাঁচতে হয় তবে জীবন বিস্ময়কর সুন্দর।

পৃথিবী কত সুন্দর এটা তোমাকে যে কেউ বোঝাতে পারবে কিন্তু এর মধ্যে খুব কম মানুষই তোমাকে বোঝাতে পারবে যে, তুমি পৃথিবীতে কত সুন্দর।।

কলি যুগ

কলি যুগ (দেবনাগরী: कलियुग [kəli juɡə], আক্ষরিকভাবে "কলির যুগ", বা "পাপের যুগ") হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, ও দ্বাপর যুগ।

মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ৪,৩২,০০০ বছর। পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। অবতার কল্কি। মানুষের আয়ু একশ বিশ বছর প্রায়। নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত নিজের শরীরের আয়তন। প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। তারক ব্রহ্মনাম- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

'''বিষ্ণু পুরাণ''' অনুযায়ী ব্রহ্মা সত্যযুগে সমস্ত সৃষ্টিকর্ম করেন এবং কলিতে সমস্ত সৃষ্টি উপসংহার করেন।[৬] বিষ্ণু পুরাণ মতে কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে বেশি গর্ব করবে। ধর্মের জন্য অর্থ খরচ করবে না। ধর্মগ্রন্থের প্রতি মানুষের আর্কষন থাকবে না। মাতাপিতাকে মানবে না। পুত্র পিতৃহত্যা বা পিতা পুত্র হত্যা করতে কুন্ঠিত হবে না। মানুষ বৈদিক ক্রিয়া আচার সমূহ করবে না। ধর্মানুসারে কেউ বিবাহিত থাকবে না। ধনহীন পতিকে স্ত্রীরা ত্যাগ করবে। আর ধনবান পুরুষরা সেই স্ত্রীগণের স্বামী হবে। কলিযুগে ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবে। মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবে। কলিযুগে নারীরা সাধারনতঃ স্বেচ্ছাচারিণী ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবে এবং পুরুষরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবে। সুহ্বদদের প্রার্থনাতে মানুষ নিজের অনুমাত্র স্বার্থ পরিত্যাগ করবেনা। অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর দুর্ভিক্ষ ও ক্লেশ ভোগ করবে। কলিকালে মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে। কলিকালে স্ত্রীলোকরা নিতান্তই লোভী হবে, বহু ভোজনশীল হবে। স্ত্রীরা দুহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অনায়াসে পতি আজ্ঞা অবহেলা করবে। নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবে, নিরন্তন কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবে। আচারহীন ব্রাহ্মণপুত্ররা ব্রহ্মচারীর বেশ ধারণ বেদ অধ্যয়ন করবে। গৃহস্থরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন না। মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবে। কলিকালে ৮ থেকে ১০বছরের বালকেরা সহবাসে ৫ থেকে ৭বছর বয়সের বালিকারা সন্তান প্রসব করবে। মানুষের বুদ্ধি অতি অল্প ,তাঁদের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি অতিশয় কুৎসিত, তাদের অন্তঃকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে। আর অল্প কালেই বিনাশ লাভ করবে। যখন পাষন্ড লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে, তখন সমাজের ভালো লোক কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবে না। সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে। অল্প বৃষ্টি হবে, কলিকালে ফসল কম হবে। মানুষ শ্বশুরের অনুগত হয়ে, কার মাতা কার পিতা এরকম কথা বলবে। সুন্দরী স্ত্রী যার তার সাথে বন্ধুত্ব হবে, নিজ ভাইয়ের সাথে শত্রুভাব পোষন করবে।[৭] ভাগবতে বলা আছে ছলনা মিথ্যা আলস্য নিদ্রা হিংসা দুঃখ শোক ভয় দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট্য। এই কলিযুগে কৃষ্ণনাম জপ ও কালীনাম ভজনাই সকলকে উদ্ধার করতে পারে। মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা, ত্রেতায়ুগে জ্ঞান, দ্বাপরয়ুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হয়।[৮]

কলিযুগের অবতারসম্পাদনা

বুদ্ধ অবতার আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন । কল্কি অবতার কলিযুগের শেষের দিকে আর্বিভাব ঘটবে ।শম্ভল গ্রামে সুমতি নামে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে , বিষ্ণুযশা নামে ব্রাহ্মণের বাড়িতে , কল্কি নামে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতারের আর্বিভাব ঘটবে । কল্কি হবে বিষ্ণুযশা-সুমতির চতুর্থ সন্তান । বিষ্ণুযশা-সুমতির প্রথম তিন সন্তানের নাম হবে যথাক্রমে কবি, প্রাজ্ঞ আর সুমন্তক ।[৯]
উচ্ছিষ্ট গণপতি

উচ্ছিষ্ট অর্থাৎ দেহে আবদ্ধ পরম ব্রহ্মের অংশকে ভোগ স্বরূপ যা নিবেদনের পর অবশিষ্ট থাকে তাই উচ্ছ এবং ইষ্ট অথাৎ আরাধ্য। ইনি তান্ত্রিক গনেশ নামেও বিখ্যাত।মহার্নব মন্ত্রে ইনি লোহিত বর্ণ এবং উত্তর কামীগকাগামায় কৃষ্ণ বর্ন হিসেবে বর্ণিত। ইনি চতুর্ভূজ মতান্তরে ষড়ভূজ পদ্মাসনে স্থিত।উত্তর কামিকগণ অনুসারে ইনি রত্ন মুকুট এবং ত্রিনয়নে শোভিত। কৃষ্ণকর্মদুতি অনুসারে 6 টা হাতে একটিতে পদ্ম মতান্তরে দন্তিকা(বেদানা)আরেকটিতে বীনা, অন্যগুলিতে অক্ষ মালা, ও ধানের ছড়া। মন্ত্র মাহর্ণব অনুসারে, তিনি তির ধনুক, পাশ এবং অঙ্কুশ ধারণ করে আছেন।

গণেশের এই রূপের সঙ্গিনী স্বয়ং শক্তি, যিনি এনার ক্রোড়ে স্থিতা। তিনি অপূর্ব সুন্দরী, অপর নাম বিগ্নেশ্বড়ি। কৌল রূপ অনুযায়ী দিগম্বর রূপে এই দুই রূপ আরাধ্য, পবিত্রতার রূপ কল্পে, এই রূপকে উর্বরতার ও সৌন্দর্যের প্রকাশ হিসেবেও গণ্য করা যায়। গনেশ এবং শক্তি এই রূপে দুজনেই দিগম্বর। তিনি মাতৃঙ্গের অমৃত তাঁর শুর দিয়ে পানে উদ্যত, অপরদিকে দেবী তাঁরই পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করতে উদ্যত। এই মিলনের রূপ শাক্ত ও গণপত্য হিন্দুদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গণেশের অন্য রূপে শক্তি তার সঙ্গিনী হয়ে ক্রোড়ে স্থিতা, এক হস্তে মোদকের পাত্র যা গণপতি গ্রহণ এ উদ্যত। গণেশের শুর এখানে মিলনের একরূপ যা গনেশ ও শক্তিকে মিলিয়েও রাখে। অন্যরূপে মিষ্টান্নর পাত্র সরিয়ে, গণপতি মাতৃ অঙ্গ স্পর্শে উদ্যত, এই রূপ, উর্বরতা, প্রজনন ও প্রেমের ই রূপ স্বরূপ যা যুগলের আনন্দের কারন।
উচ্ছিষ্ট গণপতি, 6টি গণপত্য ধারার মধ্যে অন্যতম, যারা তান্ত্রিক বামাচারী রূপে এনার পুজো করে থাকেন, এটি অনুপ্রেরিত শক্তির কৌলো রূপের আরাধনা থেকে।এই মিলিত রূপ দেবী ও গণেশের এক ও অভিন্ন রূপ, এই মিলিত রূপে তিনি সর্ব সিদ্ধিদায়ী রূপে পূর্ণ। গণেশের এই মিলিত শক্তির রূপের ফলস্বরূপ অন্য দেবতাগণ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন, গনেশ যখন শক্তির ইচ্ছেশক্তিতে তার ক্রোড়ে জন্ম নিয়ে থাকেন। শিশু গণেশের সাথে যুদ্ধ করে শিব স্বয়ং তার মস্তক ছেদন করেন।
এই গণেশ ও শক্তি রূপ অনেকের কাছেই অপবিত্র, কিন্তু বামাচারী সাধকেরা এইরূপ এর আরাধনা করেন।

এই রূপে গণপতি ও শক্তির মিলিত রূপে না আছে কোনো ভেদ না আছে কোন বিচার।শুধু মাত্র ভক্তি দিয়েই ভক্ত একাত্ম হতে পারেন এই রূপের সাথে। শাস্ত্র অনুযায়ী গণপতি এই রূপে সর্বসিদ্ধি প্রদান করেন ও সর্বরিপু সংযমী হতে পথ প্রদর্শন করেন। ইনি সর্বকালে ভক্তের রক্ষা কর্তা।

ওম শ্রী সিদ্ধি বুদ্ধি সহিতায়ে
মহাগানাপাতায়ে নমাহাঃ
ওম শ্রী উসচ্ছিস।