#হনুমান:-
======
হনুমান কোন লেজওয়ালা বানর নন,তিনি Vanara(Van-Forest,Nara-Human) অর্থাৎ বনমানুষ, তাদের Hanuman বলা হত কারন তাদের Hanu-Jaw,Man-Prominent অর্থাৎ বড় চোয়াল ছিল।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতেই হনুমান, সুগ্রীব, বালি এরা ছিলেন উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ।এদের চোয়ালের অস্থি বড় ছিল এবং এরা বন্য এলাকায় বাস করতেন।
Dr G. Ramdas তাঁর রামায়ণ গবেষনায় এবং Catherine Ludvik তাঁর Hanuman in the Valmiki Ramayana and Tulsidasa Ramacharitamans বইয়ে এই মতামত ব্যাক্ত করেছেন যে বাল্মিকী রামায়ণ অনুযায়ী বালি,সুগ্রিবের স্ত্রীসহ অন্যান্য যে বানর গোত্রের মহিলাদের বর্ণনা দেখা যায় তাতে তাদের লেজ নেই।আবার সুন্দর কান্ডে রাবণ হনুমানের বর্ণনায় হনুমানের লেজকে অলংকার বলে অভিহিত করেছেন।এ থেকে ধারনা করা যায় যে হনুমান,সুগ্রীব, বালি মূলত সাবর গোত্রের লোক ছিলেন যারা হনুমানের মত কৃত্রিম লেজ পরিধান করতেন।আবার কিছু বিশেষজ্ঞের মতে হনুমান কানওয়ার গোত্রের লোক ছিলেন যে আদিবাসী গোত্রটি তাদের তুলনামূলক বড় চোয়ালের অস্থির জন্য বিখ্যাত।
বাল্মিকী রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্র বলছেন-
ন অন ঋগবেদ বিনীতস্য ন অ যজুর্বেদ- ধারিন।
ন অ সামবেদ বিদুষ শক্যম এবম বিভাষিতু মদম।।
( বাল্মীকি রামায়ন ৪।৩।২৮)
"ঋগবেদ অধ্যয়নে অনভিজ্ঞ এবং যজুর্বেদে যার বোধ নেই তথা যার সামবেদ অধ্যয়ন নেই , সেই ব্যক্তি এইরূপ পরিস্কৃত বাক্য বলতে পারবে না। নিশ্চয় তাহার সম্পূর্ণ ব্যকরন অনেকবার অধ্যয়ন করা হয়েছে। কারন তার সাথে কথা বলার সময় সে কোন অশুদ্ধ শব্দের উচ্চারন করে নি। সংস্কার সম্পন্ন শাস্ত্রীয় পদ্ধতি দ্বারা উচ্চারন তাহার বাণী হৃদয়কে হর্ষিত করে দেয়।"
বুদ্ধিমান পাঠকমাত্রেই ভেবে দেখুন একজন পশু কি কখনো ঋক্,সাম,যজুর্বেদে অভিজ্ঞ হতে পারেন ?
কিষ্কিন্ধা কান্ড (২৫।৩০) এ বালির অন্তিম সৎকারের সময় সুগ্রীব আজ্ঞা করে যে, আমার জেষ্ঠ ভ্রাতা আর্যের সৎকার রাজকীয় নিয়ম অনুসারে করা হবে।
একটা পশুর সৎকার কি আর্য তথা সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়মে,রাজকীয় ভাবে হতে পারে?
সুন্দর কান্ড (৩০।১৮,২০) এ বলা আছে
হনুমান যখন অশোকবনে মা সীতাকে নিজ পরিচয় দিতে যান তখন মনে মনে ভাবছিলেন-
"যদি দ্বিজাতিদের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য) উন্নত পরিমার্জিত সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগে কথা বলি তো সীতা আমাকে রাবন ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে যাবে।আবার আমার এই বনবাসী রূপে সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগ করলে আমাকে রাক্ষস ভেবে ভয়ে ভীত হয়ে যাবে। আমাকে কামরূপী রাবন ভেবে ভয়াতুর বিশালাক্ষী সীতা কোলাহল আরম্ভ করে দেবে। এইজন্য আমাকে সাধারন নাগরিকের মত অল্প পরিমার্জিত ভাষার প্রয়োগ করতে হবে।"
এই শ্লোকগুলোর মাধ্যমেই স্পষ্ট বুঝা যায় হনুমান,বালি,সুগ্রীব এরা জ্ঞানীগুণী মানুষ ছিলেন,বুদ্ধিমান ব্যাক্তিত্ব ছিলেন,পশু নয়।তাই বিজ্ঞানসম্মতভাবে সনাতন বৈদিক ধর্মকে এর সত্যরুপে জানুন,অন্ধভক্তি দিয়ে নয়।
পঞ্চমুখী শ্রীহনুমানের এই রূপের রহস্য কী ?
কী বলছে ‘রামায়ণ’ ?
তাঁর এই পঞ্চমুখী রূপটি প্রায় সর্বজনীন। কী এই রূপের রহস্য, জানতে গেলে আশ্রয় খুঁজতে হবে রামায়ণ-এই।
কী রহস্যএই পঞ্চমুখের ?
মহাকাব্য রামায়ণ-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র শ্রীহনুমানের পঞ্চমুখী রূপটির সঙ্গে কমবেশি পরিচয় রয়েছে ভারতীয় মাত্রেই। পবনপুত্রের এই বিচিত্র রূপের অর্থ কী, এটা কিন্তু অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। দেবতা হিসেবে ভারতে শ্রীহনুমানের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি বিভিন্ন রূপে পূজিতও হন। কিন্তু তাঁর এই পঞ্চমুখী রূপটি প্রায় সর্বজনীন। কী এই রূপের রহস্য, জানতে গেলে আশ্রয় খুঁজতে হবে রামায়ণ-এই।
রামায়ণ অনুযায়ী, রাম-রাবণের যুদ্ধের সময়ে রাবণ পাতালরাজ অহিরাবণের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ওদিকে রাম ও লক্ষ্মণকে সুরক্ষিত রাখতে হনুমান তাঁর লেজ দিয়ে এক অবরোধ তৈরি করেন। মায়ায় দক্ষ অহিরাবণ বিভীষণের রূপ ধরে রাম-লক্ষ্মণকে অপহরণ করে পাতালে নিয়ে যান। হনুমান পাতালে প্রবেশ করে রাম-লক্ষ্মণের সন্ধান শুরু করেন। তিনি অহিরাবণের প্রাসাদে প্রবেশ করে দেখতে পান, সর্বত্র উজ্জ্বল আলো জ্বলছে। এই আলোগুলি না নেবালে অহিরাবণকে বধ করা সম্ভব নয়। তিনি তখনই পঞ্চমুখী রূপ গ্রহণ করেন এবং পাঁচ মুখে ফুঁ দিয়ে সমস্ত আলো নিবিয়ে দেন এবং অহিরাবণকে বধ করেন।
হনুমানের এই পাঁচটি মুখের স্বতন্ত্র নাম রয়েছে। সেগুলি এই— হনুমান, হয়গ্রীব, নরসিংহ, গরুড় এবং বরাহ। এই পঞ্চমুখ অবশ্যই প্রতীকী। হনুমান পবনপুত্র। পবন বা বায়ু পঞ্চভূতের অন্যতম। পাঁচটি ভৌতজগৎকে পেরিয়ে সীতা অর্থাৎ ভূমিকে স্পর্শ করতে হয়। সার্বিকভাবে রামায়ণের এই ব্যাখ্যা দক্ষিণ ভারতে বেশ জনপ্রিয়। পাঁচ— এই সংখ্যাটির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিপুল। প্রার্থনার পাঁচটি রূপ— নমন, স্মরণ, কীর্তন, যাচন, অর্পণ। হনুমানের পঞ্চমুখকে এই পাঁচটির প্রতীক বলে মনে করেন অনেকে।
পঞ্চমুখী হনুমানের উপাসনা উপাসককে জগতের সঙ্গে যুক্ত করে, মোক্ষের পথ উন্মুক্ত করে বলেই বিশ্বাস করেন ভক্তজন।
শনির দৃষ্টি রুখতে হনুমান সহায়।
শনিদেবের দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে কেন হনুমানের শরণ নেন হিন্দুরা :-
‘হনুমান চল্লিশা’ পাঠ এবং শ্রীহনুমানের পূজা নিয়মিত করলে শনির প্রকোপ কমে আসে। এই বিশ্বাসের মূলেও কিন্তু রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি।
শনির দৃষ্টি রুখতে হনুমান সহায়।
‘শনির দৃষ্টি’ শব্দবন্ধটি মোটেই শ্রুতিসুখকর কিছু নয়। সাধারণত, এর দ্বারা দুর্ভাগ্যের এক বিশেষ পর্বকে বোঝায়। অথচ পুরাণ অনুযায়ী শনিদেব কারোর উপরে বিনা কারণে রুষ্ট হন না। আলস্য, কর্মবিমুখতা প্রভৃতি কারণেই শনিদেবের দৃষ্টি পড়ে কারোর উপরে। প্রতিকারের উপায় হিসেবে সেই পুরাণেরই শরণ নেন বিশেষজ্ঞরা। ‘হনুমান চল্লিশা’ পাঠ এবং শ্রীহনুমানের পূজা নিয়মিত করলে শনির প্রকোপ কমে আসে। এই বিশ্বাসের মূলেও কিন্তু রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি।
দেখা যাক ঠিক কী কী কারণে বজ্রাঙ্গবলী প্রতিরোধ করতে পারেন শনির প্রকোপকে।
• শনিদেব এবং হনুমান দু’জনেরই একটা যোগসূত্র রয়েছে। হনুমান শিবের অবতার। আর শনিদেব শিবভক্ত। তিনি শিবের কৃপাতেই তাঁর ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছেন।
• ‘সূর্য সংহিতা’ অনুসারে, হনুমান জন্মেছিলেন শনিবারেই। বহু শাস্ত্রেই উল্লিখিত রয়েছে, হনুমানের গাত্রবর্ণ শনিদেবের অনুরূপ।
• শনিদেবের পিতা সূর্যদেব হনুমানের শিক্ষাগুরু। শনিদেবের সঙ্গে পিতা সূর্যদেবের একবার যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছিল। সূর্যদেব হনুমানকে বিপুল ক্ষমতা দান করেন। তিনি শনিদেবকে প্রতিহত করতে পারেন।
• শনিদেবের আচরণ নিষ্ঠুর বলে প্রতিভাত হয়। কিন্তু, হনুমা সেই তুলনায় দয়ালু, প্রেমময়।
• শনিদেবের জন্ম অগ্নি থেকে। আর হনুমান পবনপুত্র। হুতাশনকে স্তিমিত করতে পারে পবনই।
• কথিত রয়েছে, হনুমান শনিদেবকে রাবণের কবল থেকে মুক্ত করেন। সে কারণে শনিদেব হনুমানের প্রতি কৃতজ্ঞ।
• হনুমান ও শনিদেবের আর একটি দ্বন্বের কথাও জানা যায়। একবার শনিদেব হনুমানকে তাঁর প্রভাবগ্রস্ত করার জন্য তাঁর স্কন্ধে আরোহণ করেন। হনুমান তাঁর দেহকে এতটাই বাড়িয়ে নেন যে, শনি বিপর্যস্ত বোধ করেন। শেষে শনিদেবকে হনুমান রেহাই দেন।
• শনিদেব ও হনুমানের মধ্যে একটা একটা আধ্যাত্মিক যোগও রয়েছে। হনুমান আত্মত্যাগের প্রতীক। আর শনিদেবে অহংবোধকে চিহ্নিত করেন। সুতারং অহং থেকে জাত কর্মকে খণ্ডণ করতে পারে একমাত্র বিনয় ও আত্মবিলোপ। সেটা হনুমানের ছাড়া আর কেই বা করতে পারেন!
হনুমান জীর প্রনাম মন্ত্রে বলা হয় –
ওঁ মনোজবং মারুততুল্যবেগং
জিতেন্দ্রিয়ং বুদ্ধিমতাং বরিষ্ঠম্ ।
বাতাত্মজং বানরযূথমুখ্যং
শ্রীরামদূতং শিরসা নমামি ।।
অর্থাৎ- যিনি মন ও বায়ূর ন্যায় দ্রুতগামী, বুদ্ধিমান, ব্যাক্তি দিগের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বানর বাহিনীর অধিনায়ক, সেই শ্রীরামের দূত, জিতেন্দ্রিয় পবন নন্দনকে অবনত মস্তকে নমস্কার করি ।
স্বামী বিবেকানন্দ মহাবীর প্রসঙ্গে বলেছেন- " মহাবীরের চরিত্রকেই তোদের এখন আদর্শ করতে হবে। দেখ্ না রামের আজ্ঞায় সাগর ডিঙ্গিয়ে চলে গেল। জীবনে- মরণে দৃক্পাত নেই- মহা জিতেন্দ্রিয় , মহাবুদ্ধিমান ! দাস্যভাবের ঐ মহান্ আদর্শে তোদের জীবন গঠিত করতে হবে। দ্বিধাশূন্য হয়ে গুরুর আজ্ঞা পালন আর ব্রহ্মচর্যরক্ষা - এই হচ্ছে Secret of Success 'নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায়'। হনুমানের একদিকে যেমন সেবাভাব- অন্যদিকে তেমনি ত্রিলোকসন্ত্রাসী সিংহবিক্রম । রামের হিতার্থে জীবনপাত করতে কিছুমাত্র দ্বিধা রাখে না। ... এরূপ একাগ্রনিষ্ঠ হওয়া চাই।" ( স্বামী শিষ্য সংবাদ )
সংগৃহীত।
No comments:
Post a Comment