Friday, May 8, 2020

একাদশী দেবীর আবির্ভাব

#_একাদশী_দেবীর_আবির্ভাব_মাহাত্ম্য_কথা... 🏵

বহু ভক্তগণ একাদশীর আবির্ভাব ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জানতে চান। সেই কারণে পদ্মপুরাণের চতুর্দশ অধ্যায়ের ''ক্রিয়া সাগর সার'' অংশ থেকে সেই তত্ত্ব উদ্ধৃত করা হল।

এক সময় মহর্ষি জৈমিনি ঋষি নিজ গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হে গুরুদেব! একাদশীর জন্ম কখন হয়েছিল এবং তার জন্মের উৎসই বা কি? শ্রীএকাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা কে? একাদশীর দিন উপবাস পালনের বিধি বা কি? একাদশীর নিয়ম পালন না করার অপরাধ কি? দয়া করে এই ব্রত পালনের কি লাভ এবং কখন এই ব্রত উদযাপন করতে হবে তার বর্ণনা করুন এবং এই বিষয়ে আপনার কৃপা বর্ষণ করুন।"

শ্রীল ব্যাসদেব জৈমিনি ঋষির প্রশ্ন শুনে অপ্রাকৃত আনন্দ ধামে উন্নীত হয়ে বললেন, "হে ব্রহ্মর্ষি জৈমিনি! একাদশী পালনের ফল প্রকৃতরূপে পরমেশ্বর নারায়ণই শুধু শুদ্ধভাবে বর্ণনা করতে সক্ষম। কিন্তু আমি তোমার প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দেবো।"

সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান পঞ্চ মহাভূত দ্বারা স্থাবর ও অস্থাবর জীবগণকে পৃথিবীতে সৃষ্টি করেন। সেইরূপ মানুষকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাপ পুরুষকেও তিনি সৃষ্টি করেন। এই পাপ পুরুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আদি নানা প্রকার পাপ কার্য দ্বারা গঠন করেছিলেন। তার মস্তকটি ছিল ব্রহ্মহত্যার পাপ, চোখ দুটি নেশায় আসক্তি জনিত পাপ, মুখটি ছিল স্বর্ণচৌর্য জনিত পাপ, কান দুটি সদগুরুর পত্নীতে উপগমন, নাসিকা পরপত্নী হত্যা, হাত দুটি গোহত্যা জনিত পাপ, গ্রীবা পরধন চৌর্য জনিত পাপ, বক্ষদেশ ভ্রুণহত্যা জনিত পাপ, নিম্নবক্ষ পরকীয়া উপগমন জনিত পাপ, উদর আত্মীয় হননের পাপ, নাভীমূল অধীনস্থ জনকে হত্যার পাপ, কটিদেশ আত্মস্তুতি পাপ, জংঘা গুরুর প্রতি অপরাধ জনিত পাপ, লিঙ্গ নিজ কন্যা বিক্রয় জনিত পাপ, পশ্চাতদেশ গোপন বিষয় প্রকাশ করার পাপ, পদদ্বয় পিতৃ হত্যার পাপ, তার কেশরাজি অন্যান্য পাপ কর্মাদি। এই প্রকার একটি বীভৎস পাপময় জীব সৃষ্টি করেছিলেন। যার শরীর ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, চোখ দুটি পীতবর্ণ, সে পাপীদের অতীব দুর্দশা দান করে।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু এই পাপ পুরুষকে দেখে নিজ মনে চিন্তা করতে লাগলেন, 'আমিই জীবগণের সুখ ও দুঃখের স্রষ্টা। আমি তাদের প্রভু কারণ আমি পাপ পুরুষ সৃষ্টি করেছি, সে অসাধু, প্রতারক এবং পাপীদের দুঃখ-কষ্ট দেয়। এখন এই পাপ পুরুষের নিয়ন্ত্রক সৃষ্টি করতে হবে।' এই সময় ভগবান যমরাজও নানা প্রকার নরক সৃষ্টি করলেন। মৃত্যুর পর পাপীদের যমরাজের নিকট পাঠান হবে এবং তিনি তাদের পাপ অনুসারে বিভিন্ন নরকে যন্ত্রণা ভোগের জন্য পাঠাবেন।

এইরূপ ব্যবস্থা করে পরমেশ্বর ভগবান পক্ষীরাজ গরুড়ে.চড়ে যমরাজের গৃহে উপস্থিত হলেন। যমরাজ বিষ্ণুকে দেখেই পাদ্য-অর্ঘ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করলেন ও তাঁকে স্বর্ণ সিংহাসনে বসালেন। পরমেশ্বর বিষ্ণু বসেই দক্ষিণ দিকে বিভিন্ন প্রকার পাপকর্মজনিত শাস্তিপ্রাপ্ত পাপীদের উচ্চ চিৎকার শুনতে পেলেন। আশ্চর্য হয়ে তিনি যমরাজকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'কোথায় এই চিৎকার হচ্ছে।'

যমরাজ উত্তরে বললেন, "হে দেব! পৃথিবীর বিভিন্ন জীবগণ
বিভিন্ন নরকে পতিত হয়েছে। তারা দুষ্কর্ম জনিত ফল ভোগ করছে।' এই বিভৎস চিৎকার তাদের অতিব দুষ্কর্ম জনিত শাস্তির ফল।

এই শুনে বিষ্ণু দক্ষিণ দিকের নরকে উপস্থিত হলেন। তাঁকে.দেখে নরকবাসীগণ অধিক উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করল। পরমেশ্বর বিষ্ণুর হৃদয় তাদের দুর্দশায় বিচলিত হল। ভগবান বিষ্ণু ভাবলেন, 'এদের সৃষ্টি আমিই করেছি এবং আমার কারণে তারা কষ্ট ভোগ করছে!'

ব্যাসদেব বলতে লাগলেন, "হে জৈমিনি! পরমেশ্বর ভগবান
তারপর কি করলেন, শোন।

করুণাময় পরমেশ্বর পূর্বের বিচার ধারা পুনঃচিন্তা.করলেন। তিনি হঠাৎ একাদশীরূপে আবির্ভূত হলেন। নরকে জীবগণ একাদশী পালনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পাপমুক্ত হল ও বৈকুণ্ঠধামে গমন করল। হে জৈমিনি! একাদশী, পরমেশ্বর বিষ্ণু ও পরমাত্মার বিগ্রহে প্রভেদ নাই।

শ্রীএকাদশী পালন অতীব শ্রেষ্ঠ কর্ম ও সকল ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

শ্রীএকাদশী আবির্ভাবের সাথে সাথে পাপ পুরুষ একাদশীর প্রতিকূল প্রভাব অনুভব করল। সে বিষ্ণুর স্তুতি করতে লাগল। বিষ্ণু প্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিতে চাইলেন।

পাপ পুরুষ বলল, "আমি আপনার সৃষ্ট। পাপীর শাস্তি আমার মাধ্যমে দিতে আপনি ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু এখন শ্রীএকাদশীর প্রভাবে আমার অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হে প্রভু! আমার মৃত্যুর পর আপনার অংশগুলি যারা জড়দেহ ধারণ করেছে তারা সবাই মুক্তিলাভ করে বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্ত হবে। সবাই মুক্ত হয়ে গেলে আপনার লীলায় কে অংশ গ্রহণ করবে। হে কেশব! আপনি যদি শাশ্বত লীলার প্রকাশ চান তা হলে একাদশীর ভয় থেকে আমায় বাঁচান। একাদশী তো আপনার বিগ্রহেরই বিস্তৃতি।

একাদশীর ভয়ে আমি পালিয়ে মানুষ, পশু, কীট, পাহাড়, বৃক্ষ স্থাবর ও অস্থাবর, জীবগণ, নদী, সমুদ্র, জঙ্গল, স্বর্গ, মর্ত, নরক, দেবতা ও গন্ধর্বগণের নিকটে যাই। কিন্তু শ্রীএকাদশীর প্রভাবে মুক্ত স্থান খুঁজে পাই না। হে প্রভু! আপনি আমায় সৃষ্টি করেছেন। আমাকে এমন একটি বাসস্থান দিন যেখানে থাকলে একাদশীর ভয় থেকে মুক্ত হতে পারব।

ব্যাসদেব জৈমিনিকে বললেন, "এইরূপ প্রার্থনা করে পাপ পুরুষ পরমেশ্বর বিষ্ণুর পাদপদ্মে নিপাতিত হয়ে কাঁদতে লাগল।

অতঃপর বিষ্ণু পাপ পুরুষের দুর্দশা দেখে সহাস্যে বললেন, হে পাপ পুরুষ ওঠ, আর কেঁদ না। একাদশীর দিন তোমার আশ্রয় কোথায় হবে, মন দিয়ে শোন। একাদশীর দিন তুমি খাদ্যশস্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে। আর ভাবনা করো না, কারণ শ্রীএকাদশী সেখানে বাধা সৃষ্টি করবে না।' পাপ পুরুষকে এইরূপ বলে পরমেশ্বর বিষ্ণু অন্তর্ধান করলেন এবং পাপ পুরুষ নিজের কাজে লিপ্ত হল।

সুতরাং সেই থেকে পরম লাভে চেষ্টাবান ব্যক্তিগণ একাদশীর দিন শস্য গ্রহণ করে না। বিষ্ণুর আদেশে জড়-জগতে সকল প্রকার পাপকর্ম একাদশীর দিন খাদ্যশস্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। একাদশী পালন করলে সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যায় এবং কখনো নরকগামী হতে হয় না। এক মুষ্ঠি শস্য খেলে কোটি ব্রাহ্মণ হত্যার পাপ হয়। একাদশী যারা পালন না করে তারা তো পাপীর অধম।

সেই কারণে আমি বার বার বলছি যে, একাদশীতে কখনও
শস্য ভক্ষণ করো না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র নির্বিশেষে একাদশী পালন করা অবশ্য করণীয়। ইহাই শুদ্ধ বর্ণাশ্রমের ভিত্তি। একাদশী পালন করলেই সর্বপাপ নাশ হয় ও অবশ্যই বৈকুণ্ঠধাম লাভ করা

No comments:

Post a Comment