Monday, May 11, 2020

লক্ষী পাঁচালি

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর ব্রতকথা-পাঁচালি

দোলপূর্ণিমা নিশীথে নির্মল আকাশ।

মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস।।

লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।

কহিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন।।

হেনকালে বীণাযন্ত্রে হরি গুণগান।

উপনীত হইলেন নারদ ধীমান।।

ধীরে ধীরে উভপদে করিয়া প্রণতি।

অতঃপর কহিলেন লক্ষ্মীদেবী প্রতি।।

শুন গো, মা নারায়ণি, চলো মর্ত্যপুরে।

তব আচরণে দুখ পাইনু অন্তরে।।

তব কৃপা বঞ্চিত হইয়া নরনারী।

ভুঞ্জিছে দুর্গতি কত বর্ণিবারে নারি।।

সতত কুকর্মে রত রহিয়া তাহারা।

দুর্ভিক্ষ অকালমৃত্যু রোগে শোকে সারা।।

অন্নাভাবে শীর্ণকায় রোগে মৃতপ্রায়।

আত্মহত্যা কেহ বা করিছে ঠেকে দায়।।

কেহ কেহ প্রাণাধিক পুত্রকন্যা সবে।

বেচে খায় হায় হায় অন্নের অভাবে।।

অন্নপূর্ণা অন্নরূপা ত্রিলোকজননী।

বল দেবি, তবু কেন হাহাকার শুনি।।

কেন লোকে লক্ষ্মীহীন সম্পদ অভাবে।

কেন লোকে লক্ষ্মীছাড়া কুকর্ম প্রভাবে।।

শুনিয়া নারদবাক্য লক্ষ্মী ঠাকুরানি।

সঘনে নিঃশ্বাস ত্যজি কহে মৃদুবাণী।।

সত্য বাছা, ইহা বড় দুঃখের বিষয়।

কারণ ইহার যাহা শোনো সমুদয়।।

আমি লক্ষ্মী কারো তরে নাহি করি রোষ।

মর্ত্যবাসী কষ্ট পায় ভুঞ্জি কর্মদোষ।।

মজাইলে অনাচারে সমস্ত সংসার।

কেমনে থাকিব আমি বল নির্বিকার।।

কামক্রোধ লোভ মোহ মদ অহংকার।

আলস্য কলহ মিথ্যা ঘিরিছে সংসার।।

তাহাতে হইয়া আমি ঘোর জ্বালাতন।

হয়েছি চঞ্চলা তাই ওহে বাছাধন।।

পরিপূর্ণ হিংসা দ্বেষ তাদের হৃদয়।

পরশ্রী হেরিয়া চিত্ত কলুষিত ময়।।

রসনার তৃপ্তি হেতু অখাদ্য ভক্ষণ।

ফল তার হের ঋষি অকাল মরণ।।

ঘরে ঘরে চলিয়াছে এই অবিচার।

অচলা হইয়া রব কোন সে প্রকার।।

এসব ছাড়িয়া যেবা করে সদাচার।

তার গৃহে চিরদিন বসতি আমার।।

এত শুনি ঋষিবর বলে, নারায়ণি।

অনাথের মাতা তুমি বিঘ্নবিনাশিনী।।

কিবা ভাবে পাবে সবে তোমা পদছায়া।

তুমি না রাখিলে ভক্তে কে করিবে দয়া।।

বিষ্ণুপ্রিয়া পদ্মাসনা ত্রিতাপহারিণী।

চঞ্চলা অচলা হও পাপনিবারণী।।

তোমার পদেতে মা মোর এ মিনতি।

দুখ নাশিবার তব আছে গো শকতি।।

কহ দেবি দয়া করে ইহার বিধান।

দুর্গতি হেরিয়া সব কাঁদে মোর প্রাণ।।

দেবর্ষির বাক্য শুনি কমলা উতলা।

তাহারে আশ্বাস দানে বিদায় করিলা।।

জীবের দুঃখ হেরি কাঁদে মাতৃপ্রাণ।

আমি আশু করিব গো ইহার বিধান।।

নারদ চলিয়া গেলে দেবী ভাবে মনে।

এত দুঃখ এত তাপ ঘুচাব কেমনে।।

তুমি মোরে উপদেশ দাও নারায়ণ।

যাহাতে নরের হয় দুঃখ বিমোচন।।

লক্ষ্মীবাণী শুনি প্রভু কহেন উত্তর।

ব্যথিত কি হেতু প্রিয়া বিকল অন্তর।।

যাহা বলি, শুন সতি, বচন আমার।

মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত করহ প্রচার।।

গুরুবারে সন্ধ্যাকালে যত নারীগণ।

পূজা করি ব্রতকথা করিবে শ্রবণ।।

ধন ধান্য যশ মান বাড়িবে সবার।

অশান্তি ঘুচিয়া হবে সুখের সংসার।।

নারায়ণ বাক্যে লক্ষ্মী হরষ মনেতে।

ব্রত প্রচারণে যান ত্বরিত মর্তেতে।।

উপনীত হন দেবী অবন্তী নগরে।

তথায় হেরেন যাহা স্তম্ভিত অন্তরে।।

ধনেশ্বর রায় হয় নগর প্রধান।

অতুল ঐশ্বর্য তার কুবের সমান।।

হিংসা দ্বেষ বিজারিত সোনার সংসার।

নির্বিচারে পালিয়াছে পুত্র পরিবার।

একান্নতে সপ্তপুত্র রাখি ধনেশ্বর।

অবসান নরজন্ম যান লোকান্তর।।

পত্নীর কুচক্রে পড়ি সপ্ত সহোদর।

পৃথগন্ন হল সবে অল্প দিন পর।।

হিংসা দ্বেষ লক্ষ্মী ত্যাজে যত কিছু হয়।

একে একে আসি সবে গৃহে প্রবেশয়।।

এসব দেখিয়া লক্ষ্মী অতি ক্রুদ্ধা হল।

অবিলম্বে সেই গৃহ ত্যজিয়া চলিল।।

বৃদ্ধ রানি মরে হায় নিজ কর্মদোষে।

পুরীতে তিষ্ঠিতে নারে বধূদের রোষে।।

পরান ত্যজিতে যান নিবিড় কাননে।

চলিতে অশক্ত বৃদ্ধা অশ্রু দুনয়নে।।

ছদ্মবেশে লক্ষ্মীদেবী আসি হেন কালে।

উপনীত হইলেন সে ঘোর জঙ্গলে।।

সদয় কমলা তবে জিজ্ঞাসে বৃদ্ধারে।

কিবা হেতু উপনীত এ ঘোর কান্তারে।।

লক্ষ্মীবাক্যে বৃদ্ধা কহে শোন ওগো মাতা।

মন্দভাগ্য পতিহীনা করেছে বিধাতা।।

ধনবান ছিল পিতা মোর পতি আর।

লক্ষ্মী বাঁধা অঙ্গনেতে সতত আমার।।

সোনার সংসার মোর ছিল চারিভিতে।

পুত্র পুত্রবধূ ছিল আমারে সেবিতে।।

পতি হল স্বর্গবাসী সুখৈশ্বর্য যত।

একে একে যাহা কিছু হল তিরোহিত।।

ভিন্ন ভিন্ন হাঁড়ি সব হয়েছে এখন।

অবিরত বধূ যত করে জ্বালাতন।।

অসহ্য হয়েছে এবে তাদের যন্ত্রণা।

এ জীবন বিসর্জিতে করেছি বাসনা।।

বৃদ্ধা বাক্যে নারায়ণী কহেন তখন।

আত্মহত্যা মহাপাপ শাস্ত্রের বচন।।

ফিরে যাও ঘরে তুমি কর লক্ষ্মীব্রত।

সর্ব দুঃখ বিমোচিত পাবে সুখ যত।।

গুরুবারে সন্ধ্যাকালে বধূগণ সাথে।

লক্ষ্মীব্রত কর সবে হরষ মনেতে।।

পূর্ণ ঘটে দিবে শুধু সিঁদুরের ফোঁটা।

আম্রশাখা দিবে তাহে লয়ে এক গোটা।।

গুয়াপান দিবে তাতে আসন সাজায়ে।

সিন্দূর গুলিয়া দিবে ভক্তিযুক্ত হয়ে।।

ধূপ দীপ জ্বালাইয়া সেইখানে দেবে।

দূর্বা লয়ে হাতে সবে কথা যে শুনিবে।।

লক্ষ্মীমূর্তি মানসেতে করিবেক ধ্যান।

ব্রতকথা শ্রবণান্তে শান্ত করে প্রাণ।।

কথা অন্

No comments:

Post a Comment