লিখেছেনঃ দেবাশিস দাস
সম্পাদনাঃ নির্ঝর রুথ
পৃথিবীর কিছু পৌরাণিক চরিত্র, বিশেষত প্রাণিগুলো দেশ, জাতি স্থান,কাল ভেদ করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মন জয় করে নিয়েছে। মিশরের স্ফিংক্স-এর কথাই ধরুন না! এই অর্ধেক নারী আর অর্ধেক সিংহের মূর্তিটি প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান সাম্রাজ্য হতে মেসোপটেমিয়া, এমনকি ভারতবর্ষ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এই যুগে এসেও এটা লাস ভেগাসের মতো শহর-সহ বিভিন্ন আধুনিক শিল্পকলায় নিজ উপস্থিতির ছাপ রেখে চলেছে। মোদ্দা কথা, স্ফিংক্স হয়ে উঠেছে মিশরের গ্লোবাল ব্র্যান্ড!
ঠিক তেমনি, ভারতীয় পুরাণেরও একটি পৌরাণিক পাখি চরিত্র উপমহাদেশের গণ্ডি পার হয়ে অন্যান্য দেশেও সমান কদর লাভ করেছে। বলছি, মহা বলশালী "গরুড়" পাখির কথা!
ঠিক তেমনি, ভারতীয় পুরাণেরও একটি পৌরাণিক পাখি চরিত্র উপমহাদেশের গণ্ডি পার হয়ে অন্যান্য দেশেও সমান কদর লাভ করেছে। বলছি, মহা বলশালী "গরুড়" পাখির কথা!

বিষ্ণুর বাহন হিসেবে গরুড়
অধিকাংশ বর্ণনা ও প্রাচীনকালের চিত্রকলা থেকে দেখা যায়, গরুড়ের মধ্যে বাজপাখির মতো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পুরাণ আমাদের সাথে গরুড়কে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর বাহন হিসেবে। পৌরাণিক শাস্ত্রে, গরুড়ের রূপকে প্রায়ই বাজপাখির কাঠামোর মাঝে সুঠাম মনুষ্য দেহের মাঝামাঝি পর্যায়ে কল্পনা করা হয়েছে।
বর্ণনা অনুসারে, গরুড়ের দেহ স্বর্ণের মতো, মুখমণ্ডল সাদা বর্ণের, দুটো বিশাল বিস্তৃত ডানার রঙ লাল। তার আছে ঈগলের মতোই বিশাল ঠোঁট, মাথায় মুকুট পরা, এবং পা দুটোও ঈগলের মতো। পুরাণ মতে, তার ডানা দু'খানি এতই বিশাল ছিলো যে, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার সূর্যালোককে ঢেকে ফেলতে পারতো। গরুড় যে শুধু বাজপাখির মতো বৈশিষ্ট্যময় ছিলো তা নয়, বাজপাখির মতোই সাপের সাথে তার দা-কুমড়া সম্বন্ধ ছিলো। বুঝাই যাচ্ছে, পুরাণ রচয়িতারা বাজপাখির ধারণা নিয়েই এই প্রাণির সৃষ্টি করেছিলো!
মহাভারতে গরুড়ের জন্মের একটি আকর্ষণীয় কাহিনি আছে। সেটাই আজ আপনাদেরকে বলবো।
প্রজাপতি দক্ষের দুই কন্যা, বিনতা ও কদ্রুর সাথে বিবাহ হলো ঋষি "কশ্যপ" মুনির। কশ্যপ মুনি দেবতা এবং দৈত্যকুলের পিতা হিসেবে স্বীকৃত। বিনতা ও কদ্রু ছাড়াও তার আরো দু'জন পত্নী ছিলো। তাদের নাম যথাক্রমে দিতি ও অদিতি। দিতির পুত্রদের নাম ছিলো দৈত্য, আর অদিতির সন্তানদের বলা হতো দেবতা। এবার নিশ্চয় বুঝা গেলো দেব-দানবের উৎপত্তির কাহিনি?
বর্ণনা অনুসারে, গরুড়ের দেহ স্বর্ণের মতো, মুখমণ্ডল সাদা বর্ণের, দুটো বিশাল বিস্তৃত ডানার রঙ লাল। তার আছে ঈগলের মতোই বিশাল ঠোঁট, মাথায় মুকুট পরা, এবং পা দুটোও ঈগলের মতো। পুরাণ মতে, তার ডানা দু'খানি এতই বিশাল ছিলো যে, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার সূর্যালোককে ঢেকে ফেলতে পারতো। গরুড় যে শুধু বাজপাখির মতো বৈশিষ্ট্যময় ছিলো তা নয়, বাজপাখির মতোই সাপের সাথে তার দা-কুমড়া সম্বন্ধ ছিলো। বুঝাই যাচ্ছে, পুরাণ রচয়িতারা বাজপাখির ধারণা নিয়েই এই প্রাণির সৃষ্টি করেছিলো!
মহাভারতে গরুড়ের জন্মের একটি আকর্ষণীয় কাহিনি আছে। সেটাই আজ আপনাদেরকে বলবো।
প্রজাপতি দক্ষের দুই কন্যা, বিনতা ও কদ্রুর সাথে বিবাহ হলো ঋষি "কশ্যপ" মুনির। কশ্যপ মুনি দেবতা এবং দৈত্যকুলের পিতা হিসেবে স্বীকৃত। বিনতা ও কদ্রু ছাড়াও তার আরো দু'জন পত্নী ছিলো। তাদের নাম যথাক্রমে দিতি ও অদিতি। দিতির পুত্রদের নাম ছিলো দৈত্য, আর অদিতির সন্তানদের বলা হতো দেবতা। এবার নিশ্চয় বুঝা গেলো দেব-দানবের উৎপত্তির কাহিনি?
বিয়ের পর বিনতা ও কদ্রু সন্তান প্রার্থনা করলেন কশ্যপের কাছ হতে। কদ্রু মা হতে চাইলেন হাজার নাগ সন্তানের, এবং বিনতা দুই পক্ষী সন্তানের মাতৃত্ব পেতে চাইলেন। ঋষি কশ্যপ তাদের বর মঞ্জুর করলেন। যথাসময়ে তারা দু'জন ডিম (!) প্রসব করলেন।
ডিম প্রসবের পর কদ্রুর হাজার নাগ সন্তানের জন্ম হয়ে গেলো। কিন্তু বিনতার দুটি ডিম ফুটে বাচ্চাদের দুনিয়াতে আসার কোনো সংবাদই নেই! বছরের পর বছর এমনি চলে যেতে লাগলো, আর বিনতার মাতৃমন উতলা হয়ে উঠতে লাগলো।
ডিম প্রসবের পর কদ্রুর হাজার নাগ সন্তানের জন্ম হয়ে গেলো। কিন্তু বিনতার দুটি ডিম ফুটে বাচ্চাদের দুনিয়াতে আসার কোনো সংবাদই নেই! বছরের পর বছর এমনি চলে যেতে লাগলো, আর বিনতার মাতৃমন উতলা হয়ে উঠতে লাগলো।
একদিন বিনতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। তিনি তার একটি ডিম ফাটিয়ে ফেললেন। তারপর দেখতে পেলেন, ঐ ডিমের ভেতরে অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক পাখির মতো বৈশিষ্ট্যের এক অপরিপক্ক সন্তান রয়েছে। অকালে ডিম ভেঙ্গে তার জন্ম সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়ার জন্য সন্তানটি বিনতাকে অভিশাপ দিয়ে বললো, "যতদিন পর্যন্ত না তোমার দ্বিতীয় ডিম থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, ততদিন তুমি তোমার বোনের দাসত্ব করবে।" এই বলে সে হঠাৎ সূর্যের দিকে উড়ে চলে গেলো। তার নাম হলো অরুণ। সে সূর্যের রথের অন্যতম সারথি হলো। প্রতিদিন ভোরে উদিত হওয়া সূর্যের আলোকে আমরা "অরুণালো" বলে অভিহিত করি। এই ঘটনা থেকেই সেই নামের সার্থকতা এসেছে (প্রিয় পাঠক, উর্বশী আর পুরুরবার কাহিনিতে বলেছিলাম না, ভারতীয় পুরাণে প্রাকৃতিক ঘটনার পট পরিবর্তন নিয়ে বহু পৌরাণিক কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে?)।
পরবর্তীতে দেখা গেলো, বিনতা একদিন তার বোন কদ্রুর সাথে পাশা খেলায় হেরে যান, এবং শর্তানুসারে তাকে কদ্রুর দাসী হয়ে থাকতে হয়। এভাবেই বিনতার প্রতি দেওয়া তার সন্তানের অভিশাপ ফললো।
পরবর্তীতে দেখা গেলো, বিনতা একদিন তার বোন কদ্রুর সাথে পাশা খেলায় হেরে যান, এবং শর্তানুসারে তাকে কদ্রুর দাসী হয়ে থাকতে হয়। এভাবেই বিনতার প্রতি দেওয়া তার সন্তানের অভিশাপ ফললো।
এরপর বহু বছর কেটে গেলে বিনতার দ্বিতীয় ডিম হতে গরুড়ের জন্ম হয়। একেবারে তেড়েফুঁড়ে ডিম ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে গরুড় ক্রোধন্মত্ত হয়ে মহাবিশ্বে ধ্বংসের তাণ্ডব চালাতে থাকলেন। তার এই বিপুল ধ্বংসলীলা দেবতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারলো না। কিন্তু গরুড়ের বিশাল আকৃতি ও শক্তি দেখে তার প্রতি দেবতাদের ভয় জন্মালো। তারা গরুড়ের কাছে শান্তির জন্য প্রার্থনা করলে, সন্তুষ্ট হয়ে গরুড় তার আকার ও শক্তির পরিমাণ কমিয়ে আনলেন। এতে দেবতারাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এটাই হলো গরুড়ের জন্ম কাহিনি!

বিষ্ণুর বাহন হিসেবে গরুড়
গরুড় কী করে তার মা বিনতাকে অভিশাপের ফলে বরণ করে নেওয়া দাসত্ব হতে উদ্ধার করলেন, সে কথা না হয় আরেকদিন শোনাবো। তার আগে এই মহা বলশালী সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরি।
গরুড় যখনই কোথাও সাপ দেখতেন, নির্দ্বিধায় সেটাকে হত্যা করে তা দিয়েই উদরপূর্তি করে ফেলতেন। বলা চলে, সর্পভূক হিসেবে বেশ "সুখ্যাতি"ই আছে এর। সাপ হত্যা এবং দমনের জন্যে প্রাচীন যুগ হতেই গরুড় সাপ ও সর্পবিষ নিবারক হিসেবে পূজিত।
গরুড় যখনই কোথাও সাপ দেখতেন, নির্দ্বিধায় সেটাকে হত্যা করে তা দিয়েই উদরপূর্তি করে ফেলতেন। বলা চলে, সর্পভূক হিসেবে বেশ "সুখ্যাতি"ই আছে এর। সাপ হত্যা এবং দমনের জন্যে প্রাচীন যুগ হতেই গরুড় সাপ ও সর্পবিষ নিবারক হিসেবে পূজিত।
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে প্রাচীন সৌম্য কেশব মন্দিরে গরুড় দু'পাশে তার সঙ্গী রুদ্র ও সুকীর্তি-সহ পূজিত হয়ে থাকেন।
গরুড়ের পোশাক আশাক আর অলংকারগুলো বেশ বিস্ময়কর! কারণ, যে নাগকূলের তিনি চরম বিদ্বেষী, সেই নাগকূলেরই বাঘা বাঘা নাগেরা তার অলঙ্কার! পুরাণে তার সাজসজ্জার চিত্রটি ঠিক এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে, "গরুড় অধিশেষ (বিষ্ণুকে যে নাগের উপর শয়ন করে থাকতে দেখা যায়, সে "অনন্ত" বা শেষনাগের অপর নাম) নাগকে বাম পায়ের নখড়ের উপরে এবং গুলিকা সর্পকে মস্তকের অলঙ্কার হিসেবে পরিধান করেন। নাগরাজ বাসুকি তার গলার মালা। তক্ষক (এক প্রকার বিষাক্ত গোখরো সাপ) তার কোমরবন্ধনী, কর্কোটকা সর্প তার কণ্ঠহার! পদ্ম ও মহাপদ্ম সর্পদ্বয় তার দু'কর্ণের দুল। শঙ্খচূড় তার ঐশ্বরিক চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।।"
গরুড়ের বহু নামের কথা বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো - চিরদা, গগণেশ্বর, কামায়ুশা, কাশ্যপী (ঋষি কশ্যপের সন্তান বলে), খগেশ্বর, নাগাতঙ্ক, সীতানন, সুধাধর, সুপর্ণ, তর্ক্ষ্য, বৈনাতেয়, বিষ্ণুরথ ইত্যাদি।
গরুড়ের পোশাক আশাক আর অলংকারগুলো বেশ বিস্ময়কর! কারণ, যে নাগকূলের তিনি চরম বিদ্বেষী, সেই নাগকূলেরই বাঘা বাঘা নাগেরা তার অলঙ্কার! পুরাণে তার সাজসজ্জার চিত্রটি ঠিক এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে, "গরুড় অধিশেষ (বিষ্ণুকে যে নাগের উপর শয়ন করে থাকতে দেখা যায়, সে "অনন্ত" বা শেষনাগের অপর নাম) নাগকে বাম পায়ের নখড়ের উপরে এবং গুলিকা সর্পকে মস্তকের অলঙ্কার হিসেবে পরিধান করেন। নাগরাজ বাসুকি তার গলার মালা। তক্ষক (এক প্রকার বিষাক্ত গোখরো সাপ) তার কোমরবন্ধনী, কর্কোটকা সর্প তার কণ্ঠহার! পদ্ম ও মহাপদ্ম সর্পদ্বয় তার দু'কর্ণের দুল। শঙ্খচূড় তার ঐশ্বরিক চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।।"
গরুড়ের বহু নামের কথা বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো - চিরদা, গগণেশ্বর, কামায়ুশা, কাশ্যপী (ঋষি কশ্যপের সন্তান বলে), খগেশ্বর, নাগাতঙ্ক, সীতানন, সুধাধর, সুপর্ণ, তর্ক্ষ্য, বৈনাতেয়, বিষ্ণুরথ ইত্যাদি।
বেদে সর্বপ্রথম এই বিশেষ পাখির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই কাহিনি থেকে আমরা জানতে পারি, কী করে গরুড় স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে "অমৃত" নিয়ে এসেছিলেন।
...
...
উৎসঃ উইকিপিডিয়া।
No comments:
Post a Comment