Friday, May 1, 2020

আমরা কি সত্যিই সর্বশ্রেষ্ঠ জীব

আমরা কি সত্যিই সর্বশ্রেষ্ঠ জীব ????

যদি তাই হয় তাহলে একটি পাখি যেটি পারে আমরা তা পারি না কেন??

🙏এক চড়ুই পাখির পরম বিশ্বাসের গল্প🙏

️কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হবে। কুরু পাণ্ডবদের বিশাল অশ্বারোহী বাহিনী সহজে যাতে চলাচল করতে পারে তার জন্য বহু গাছ উপড়ে ফেলার কাজ চলছে । হাতির সাহায্যে এখন সেই গাছ সরিয়ে জমি পরিষ্কার করা হচ্ছে । চারিদিকে সাজো সাজো রব! এই রকম একটি গাছে পরম নিশ্চিন্তে এক চড়ুই পাখি ও তার চারটি ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে বাস করত । যুদ্ধের খবর নিয়ে তাদের কি দরকার । ছাপোষা । কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, রাজ পরিবারের এক হাতি, চড়ুই ও তার চার সন্তানদের ঠিকানা ঐ গাছটিকে উপড়ে ফেলল! উড়তে শেখে নি তখনও চড়ুইয়ের বাচ্চাগুলি , বাসা সমেত মাটিতে আছড়ে পড়ল কিন্তু অলৌকিকভাবে তারা বেঁচে গেল! দুর্বল ও ভীত চড়ুই তার সন্তানদের জীবন বিপন্ন বুঝতে পেরে চারপাশে সাহায্যের জন্য তাকাল । রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলু খাগরাদের প্রাণ যায়! কেউ কি তাদের এই সমূহ বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে ? ঠিক তখনই অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণের সেখানে আবির্ভাব ঘটলো ! ওরা যুদ্ধক্ষেত্রটি পরীক্ষা করতে বেড়িয়ে ছিল । সেই সঙ্গে যুদ্ধের রণকৌশল আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া । ভীত চড়ুই প্রাণপণে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে কৃষ্ণের রথের কাছে উড়ে এসে বসল । "হে প্রভু, আমার সন্তানদের আপনি বাঁচান । এই যুদ্ধ শুরু হওয়া মাত্রই তারা পিষ্ট হবে ।" প্রভুর কাছে সন্তানদের জন্য আকুতি ঝরে পড়লো মায়ের । প্রভু বললেন, "তোমার কথা শুনলাম, কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে তো আমি যেতে পারি না ।"
চড়ুই তার উত্তরে বলল ,"হে প্রভু, আপনি আমার ত্রাণকর্তা, আমার বাচ্চাদের ভাগ্য আপনার হাতে , তাদের জীবন, মৃত্যুর নিয়ন্তা আপনি ।" সাধারণ মানুষ যেমন সবকিছুই তার নিয়তির উপর ছেড়ে সময়ের অপেক্ষায় হাতে হাত রেখে বসে থাকে অনেকটা সেই মতো কৃষ্ণ বললেন, "কালচক্র নিরন্তর তার নিজের নিয়ম মেনে ঘুরে চলেছে, তাঁর এই ব্যাপারে কিছুই করার নেই ।" কিন্তু চড়ুই ছাড়বার পাত্রী নন চুড়ান্ত বিহ্বল হয়ে কৃষ্ণকে তার কাতর নিবেদন , "হে জগন্নাথ, আপনিই তো সেই কালচক্র, আমি আপনার শ্রী চরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করলাম ।" ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শুধু বললেন, "তুমি তিন হপ্তার খাবার মজুত কর ।" চড়ুই ও কৃষ্ণের এই বাক্যালাপ একেবারেই অবগত ছিলেন না অর্জুন। তিনি এসে হাতের ইশারায় উড়িয়ে দিলেন চড়ুইকে । স্মিতহাস্য কেশব দেখলেন চড়ুই কয়েক মিনিট মাথা নিচু করে থেকে উড়ে গেল আপন বাসায় ।
আজ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রথম দিন । কুরু, পাণ্ডব একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাল ঠুকছে । পার্থসারথি রথটিকে নিয়ে ঠিক দুইয়ের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। শঙ্খ ধ্বনি দিয়ে যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে কৃষ্ণ অর্জুনের থেকে তার তীর ধনুক চেয়ে নিলেন । অর্জুন তো অবাক ! কেশব তো প্রতিজ্ঞাবধ্যে এই যুদ্ধে তিনি কোন অস্ত্রে হাত দেবেন না, কারোর উপর অস্ত্র প্রয়োগ করবেন না! পাশাপাশি অর্জুনের নিজের ধনুর্বিদ্যার প্রতি শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সুপ্ত অহংকারও ছিল । অর্জুন বললেন, "প্রভু, আমাকে আপনি আদেশ করুন, আমি লক্ষ্য ভেদ করছি।" কৃষ্ণ অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভাবে অর্জুনের ধনুক থেকে তীর ছুঁড়লেন সেই হাতিটিকে লক্ষ্য করে যে চড়ুইকে তার ঠিকানা ছাড়া করেছিল । হাতিটির গলায় বাঁধা ঘন্টায় তীর এসে লাগলো, হাতিটি অক্ষত রইল কিন্তু তার ঘন্টা গলা থেকে খোসে মাটিতে পড়ে গেল । কি আশ্চর্য, স্বয়ং প্রভুর লক্ষ্য চ্যুতি ঘটলো! অর্জুন বিস্ময় প্রকাশ করলেন ! হে কেশব, আমি চেষ্টা করবো ? কৃষ্ণ যথারীতি শান্ত ভাবে অর্জুনের কথার কোন উত্তর না দিয়ে তীর ধনুক অর্জুনকে ফিরিয়ে দিলেন । বললেন, "শঙ্খ ধ্বনি করো"। কুরুক্ষেত্রে সেই ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হল । আঠারো দিন ধরে চললো যুদ্ধ । বহু প্রাণহানির মধ্যে দিয়ে অবশেষে পাণ্ডবদের জয় হলো । চারিদিকে মৃত্যু মিছিল তাদের অন্তেষ্টির  অপেক্ষায় পড়ে আছে। এদিকে অর্জুনকে নিয়ে কৃষ্ণের রথ এগিয়ে চলেছে । কোথায় চলেছেন ভগবান? কৃষ্ণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে এসে থামলেন । তাঁরই তূণের আঘাতে হাতির সেই মাটিতে পড়ে থাকা ঘন্টার দিকে অর্জুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। "অর্জুন, তুমি আমার জন্য এই ঘন্টাটা সরিয়ে দিতে পার?" বিস্মিত অর্জুন ভাবছেন, প্রভু আমাকে কি আদেশ করলেন! এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে কত কি পড়ে রয়েছে, সব ছেড়ে এই অতি নগন্য ঘন্টাটা সরাতে বলছেন! কৃষ্ণ আবারো অর্জুনকে ঘন্টাটা সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন । অর্জুন আর কোনো প্রশ্ন না করে, ঘন্টাটা সরাতে উদ্যোগী হলেন । যে মূহুর্তে ঘন্টাটা তিনি সরালেন এই নিখিল ব্রহ্মাণ্ড ভগবানের এক অপারI  করুণা প্রত্যক্ষ করল : এক এক করে চারটে চড়ুইয়ের বাচ্চা ও তাদের মা ঐ ঘন্টার আড়াল থেকে বেরিয়ে প্রভুকে ঘিরে অপার্থিব আনন্দে আকাশে ঘুরতে লাগলো । আঠারো দিন ধরে ঐ ঘন্টা চড়ুই পরিবারের রক্ষা কবচ হয়ে ছিল!

একটি চড়ুই পাখি ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজের ও তার সন্তানদের জীবন রক্ষা করতে পারে , আর আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হয়েও তা পারছি না ।
কারণ আমরা ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করতেই পারি না বা চেষ্টাই করি না ।যদি তা পারতাম আমাদের এতো দুশ্চিন্তা থাকতো না ।

এখন আপনি স্বয়ং বিচার করুন ।

হরে কৃষ্ণ ।
জয় শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ ।

No comments:

Post a Comment