Sunday, May 3, 2020

একাদশীর_তত্ত্ব

♥#শ্রী_শ্রী_লক্ষ্মী_নারায়ন_শরণম্♥
+++++++++++++++++++++++++
♦#একাদশীর_তত্ত্ব♦
-------------------------------
সকলকে মোহিনী একাদশী ব্রতের প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
পদ্মপূরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। একসময় জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন,
 হে গুরুদেব! একাদশী কি ? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয় ? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? 
এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।

মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্হাবর জঙ্গম সৃষ্টি ...করলেন।
মর্ত্যলোকবাসী মানূষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গণ্ডলি বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষু দুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-ণ্ডরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যার, দুই বাছ-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন পাপ, মন উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই ঊরু-ণ্ডরুনিন্দা, শিশুকন্যা বিক্রি, মলদ্বার-ণ্ডপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক। এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল।

পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখ মোচন কর বার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়বাহন  পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের, মন্দিরে। ভগবান কে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য ইত্যাদি দিয়ে যথা বিধি পূজা করলেন।
যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। 
প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন ?

যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের ,পাপী মানূষেরা নিজ কর্মদোষে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণা কাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন--আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্ম দোষে দুষ্ট হয়ে নরক যান্ত্রণা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্হা করব।

ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদের কে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকূণ্ঠ ধামে গমন করল।

শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত।
কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপ পুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থণা জানাতে লাগল-হে ভগবান ! আমি আপনার প্রজা। আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনূযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকূণ্ঠের বাসিন্দা হযে যাচ্ছে। হে ভগবান, এখন আমার কি হবে ? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব ? সবাই যদি বৈকূণ্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে ? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন ? 

পাপ পুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল-হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশণ,আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানূষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জলত-স্হল, বনপ্রান্তর, পর্বত-সমূদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্ত একাদশীর প্রভাবে কোথা ও নির্ভয় স্হান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেই জন্য আমি কোথা ও আশ্রয় পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্হান প্রদান করুন।

পাপ পুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন-হে -পাপ পুরুষ ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করবে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।

→একাদশী কিভাবে পালন করবেন ?
কোন মতে পালন করবেন ?
সকল সনাতনীকে জানার জন্য কৃপাপূর্বক শেয়ার করুণ।
□ সবাইকে নমস্কার, শাস্ত্রের পাশাপাশি অনেকে মহাপুরুষকে মেনে বা আর ও অনেক মত পথে একাদশী পালন করেন । যা মূল সাত্ত্বিক নিয়ম
হতে কিছুটা ব্যতিক্রম । পালনের নিয়মের পাশাপাশি সময়েও পার্থক্য স্পষ্ট লক্ষ্যণীয় । একাদশীর মূল কাজ হল– নিরন্তর
ভগবানকে স্মরণ করা । তাই আপনারা যে নিয়মে,
যে সময়ে পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয় । আমরা একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মটি
 উল্লেখ করছি । এটি পালন করা সবার উচিত ।

□ ১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন ।
□ ২। তা হতে অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।
□ ৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করতঃ ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রহিয়াছে ।
□ সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি আছে ,গোড়ীয় ধারায় বা মহান আচার্য্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা ( জল ব্যতীত ) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন ।
সেগুলি সে মতে করলে সর্বোওম হয় ।
নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু — সবজি , ফলমূলাদি গ্রহণ করতে পারেন । যেমন — গোল আলু , মিষ্টি আলু , চাল কুমড়ো , পেঁপে , টমেটো, , ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তৈল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন । হলুদ, মরিচ, ও লবণ ব্যবহার্য । 
আবার অন্যান্য আহায্য যেমন — দুধ ,কলা , আপেল , আঙ্গুর, আনারস, আখঁ, আমড়া শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু , বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদি খেতে পারেন ।

□ একাদশীতে পাচঁ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ—-
□ ১। ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল,মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েশ, খিচুড়ি, চাউলের পিঠা, খৈ ইত্যাদি
□ ২। গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা,ময়দা, সুজি , বেকারীর রূটি , বা সকল প্রকার বিস্কুট ,হরলিকস্ জাতীয় ইত্যাদি ।
□ ৩। যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু , খই , রূটি ইত্যাদি ।
□ ৪। ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — মুগ মাসকলাই , খেসারী , মসুরী, ছোলা অড়রহ , ফেলন, মটরশুটি, বরবঢী ও সিম ইত্যাদি ।
□ ৫। সরিষার তৈল , সয়াবিন তৈল, তিল তৈল ইত্যাদি । উপরোক্ত পঞ্চ রবিশস্য যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয় ।
□ উল্লেখ্য যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা , বিড়ি / সিগারেট পান কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো ।
□ একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবনের সদ্গতি হবে তা নয় । একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা / মাতা নিজ কর্ম
দোষে নরকবাসী হন , তবে সেই পুত্র ই (একাদশী ব্রত ) পিতা – মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে । একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নরকবাসী হবে , অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে । কাজেই একাদশী পালন করা আমাদের সকলেরই কর্তব্য ।

□ একাদশী পারণঃ (একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙ্গার পর নিয়ম )পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের ( উপবাসের পরদিন সকালে ) যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে , সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে, প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার । নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হবে না । একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয় , নিরন্তর শ্রীভগবানের নাম স্মরণ , মনন , ওশ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয় ।
এদিন যতটুকু সম্ভব উচিত । একাদশী পালনের
পরনিন্দা , পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষণ, ক্রোধ দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ।

□ বিঃ দ্রঃ নিমোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়ঃ — একাদশী ব্রতের আগের দিন রাত ১২ টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোওম । ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাঁশ
□ করে দাঁত ও মুখ গহব্বরে লেগে থাকা সব অন্ন পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোওম । সকালে উঠে শুধু মুখ কুলি ও স্নান করতে হয়।
□ একাদশীতে সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায় ।
একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। দাঁত ব্রাশঁ করার সময় অনেকের রক্ত ক্ষরণ হয়ে থাকে । তাই একাদশীর আগের দিন রাতেই দাঁত ভালো ভাবে ব্রাশঁ করে নেওয়াই সর্বোওম ।
□ একাদশীতে চলমান একাদশীর মাহাত্ন্য ভগবদ্ভক্তের শ্রীমুখ হতে শ্রবণ অথবা সম্ভব না হলে নিজেই ভক্তি সহকারে পাঠ করতে হয় ।
□ যারা একাদশীতে একাদশীর প্রসাদ রান্না করেন , তাদের পাচঁ ফোড়ঁন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিৎ । কারণ পাঁচ ফোড়ঁনে সরিষার তৈল ও তিল থাকতে পারে যা বর্জনীয় ।
□ একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ । তৈল ( শরীরে ও মাথায় ) সুগন্ধি সাবান শেম্পু ইত্যাদি বর্জনীয় ।
□ সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম — শেভ করা এবং চুল ও নক কাটা নিষিদ্ধ ।

#একাদশীর_পারণ_মন্ত্রঃ-
————————————
• ”একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।
#সংগ্রহকৃতঃ

No comments:

Post a Comment