দেবতা বিষ্ণুর রঙ কেন নীল?
হিন্দু ধর্মের প্রধান তিন দেবতাকে একসঙ্গে বলা হয় ‘ত্রিমূর্তি’। তাদের কাজ যথাক্রমে: সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও ধ্বংস। এই তিন দেবতার একজন বিষ্ণু। জগতের সংরক্ষণকারী হিসেবে তিনি বিশ্বব্যবস্থা টিকিয়ে রাখেন ও এর বিধিবিধান সমুন্নত রাখেন।
মানুষ বা ঈশ্বর সবার ক্ষেত্রেই ন্যায়নীতি ও নৈতিক বিধানেরও ত্রাণকর্তা বিষ্ণু। সহিষ্ণুতা, নমনীয়তা ও দয়ার জন্য সবার কাছে পরিচিত এই দেবতা।
বিষ্ণুর রঙ নীল। বলা হয়ে থাকে, আকাশের রঙ ফুটিয়ে তুলতেই এই দেবতা নীল রঙ ধারণ করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে বিষ্ণু আকারহীন, বিমূর্ত। এই দেবতার মূর্ত কোনো রূপ নেই।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস মতে, বিষ্ণুর চার বাহু। এর দুটি দৃষ্টিগোচর হয়। আর দুটি থাক পেছনে, যা তার আধ্যাত্মিক দিককে প্রতিফলিত করে। বিষ্ণুর চার হাতেরই ব্যাখ্যা আছে। একহাতে পদ্ম, যা পবিত্রতা ও সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। আরেক হাতে শামুকের খোলস, যা শব্দের প্রতীক। তৃতীয় হাতে আছে প্রভুত্বের দণ্ড, যা দানবীয় শক্তি ধ্বংসের প্রতীক। আরেক হাতে চক্র, যা বুদ্ধিমত্তার প্রতিনিধিত্ব করে।
বিষ্ণুর মূর্তি সব সময়ই এমনভাবে দেখা যায়, যেনো তিনি বিশাল কোনো সমুদ্রে আছেন। তিনি চারপাশে অসংখ্য গোখরা সাপ বা শীষনাগের ওপর বসে থাকেন। এর দ্বারা মনের অসংখ্য বাসনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়। আর এগুলোর ওপর বিষ্ণুর বসে থাকার মানে, তিনি বাসনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন।
বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মীও একজন দেবী। তিনি সৌন্দর্য ও সম্পদের দেবী। তিনি চড়েন অর্ধপাখি-অর্ধমানব, এমন একটি সৃষ্টির ওপর। হিন্দু বিশ্বাস মতে, অসুরীয় শক্তির দম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিষ্ণু এ পর্যন্ত কমপক্ষে নয়বার দুনিয়ায় এসেছিলেন।
একবার বন্যায় পৃথিবী ধ্বংসের মুখে পড়লে বেদ রক্ষায় মাছের বেশে পৃথিবীতে আসেন এই দেবতা। আরেকবার জগতের মূল্যবান বস্তু সাগরতলে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে দুনিয়াতে কচ্ছপের রূপে আসেন বিষ্ণু।
এছাড়া তিনি কখনো বরাহ, কখনো নরসিংহ, কখনো বামুন আবার কখনো পরশুরাম বেশে এসেছেন দুনিয়ায়। হিন্দু বিশ্বাস মতে, রামের রূপ ধারণ করে দুনিয়ায় এসেছিলেন এই বিষ্ণুই।
হিন্দু ধর্মের কোনো শাখার বিশ্বাস, সর্বশেষ নবমবারের মতো গৌতম বুদ্ধের রূপ নিয়ে আসেন এই দেবতা। তবে কেউ কেউ মনে করেন, কৃষ্ণর ভাই বলরামের বেশে নবমবার এসেছিলেন তিনি।
No comments:
Post a Comment