গরুড় পাখী ভগবান বিষ্ণুর বাহন। কিন্তু আমরা জীব জগতে এমন কোনো পাখীর অস্তিত্ব পাই না । কেউ কেউ বাজ বা ঈগল জাতীয় প্রানীকে গরুড় বলে থাকেন । গরুড়ের আহার্য হোলো ভুজঙ্গ বা সাপ। অপরদিকে বাজ, ঈগল প্রানী তাদের তীক্ষ্ণ চঞ্চু দ্বারা সর্প ভক্ষণ করে । রামায়ন, মহাভারত, গরুড় পুরান, বিষ্ণু পুরাণে ভগবান নারায়নের বাহন গরুড় পাখীর বিরবন পাওয়া যায় । গরুড় পক্ষী পিতা হলেন মহর্ষি কশ্যপ, মাতার নাম বিনতা । বিনতা আবার দক্ষ প্রজপাতির কন্যা ছিলেন । উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব নিয়ে একদা গরুড়ের মাতা বিনতা ও কশ্যাপের দ্বিতীয় পত্নী কদ্রুর মধ্যে বিবাদ হয় । বিবাদে বিনতা পরাজিত হলে কদ্রুর দাসী হন । মহাভারতের এই ঘটনা মতে এরপর গরুড় পক্ষী স্বর্গ থেকে অমৃত নিয়ে এসে নিজ মাতার দাস্যবৃত্তি মোচন করেন ।
গরুড় যেমন বিষ্ণু ভক্ত তেমনি মাতৃ আজ্ঞাবহ বটে । মাতা বিনতার দুঃখ মোচনের জন্য নিজ জীবনের পরোয়া না করে অমৃত আনতে গিয়ে দেবতাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন । ইন্দ্র দেবতার বজ্র অস্ত্রের আঘাতে মাত্র একটি পালক হারাতে হয় তাঁকে। পুরাণকার এইভাবেই গরুড় চরিত্র নির্মাণ করেছেন- যাতে সমাজে সকলে স্বীয় স্বীয় গর্ভধারিণীকে শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা দিতে পারে । গরুড় আবার নির্লোভ । অমৃত কলস পাহাড়া দিলেও অমৃত লাভে তিনি মোটেই আগ্রহী ছিলেন না। এই নির্লোভী চরিত্র দেখে ভগবান বিষ্ণু তাঁকে বরদান দিতে চাইলে তিনি চাইলেন না। তখন ভগবান শ্রীবিষ্ণু খুশী হয়ে আশীর্বাদ দিলেন - অমৃত পান ছাড়াই অমরহবে , দ্বিতীয় তিনি যেনো ভগবান বিষ্ণুর উপরে থাকেন । ভগবান শ্রীহরি এতটাই ভক্তবৎসল যে তিনি ভক্তকে এতটা শ্রদ্ধা সম্মান দিলেন। গরুড় একদিকে তাঁর বাহন হোলো অপরদিকে ভগবান হরির রথের পতাকায় শোভা পেলো । সেই থেকে ভগবান বিষ্ণুর এক নাম “গরুড়ধ্বজ”। সেই থেকে ভগবান বিষ্ণুর মন্দির গুলিতে এমনকি ভগবান বিষ্ণুর অনান্য অবতার, ভগবান রাম, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে “গরুড়স্তম্ভ” দেখা যায়। ভগবানের সাথে তাঁর পূজা হয় ।
ভগবান বিষ্ণু অসুর বধের সময় শার্ঙ্গ ধনুক হস্তে গরুড়ে আসীন হন। এমনকি ভগবান মর্তে অবতার গ্রহণ করলেও গরুড় পাখী ভগবানের সেবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন । রামায়নে আছে ইন্দ্রজিতের নাগপাশে ভগবান রাম, লক্ষণ সর্পবদ্ধ হলে গরুড় এসে সেই সর্প বন্ধন উন্মোচন করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে কালীয় দমন করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment