🌺🌺মহাপ্রসাদ🌺🌺
নীচের মাংস ভোগের ছবি ও ওপরের মহাপ্রসাদ শব্দ লেখা দেখে সাধারণ লোক হতচকিত হবে.. তার কারণ যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে মহাপ্রসাদ শব্দ শুনলে যা মনে হয় তা হল পূণ্য এক ক্ষেত্র পুরীধাম যা শ্রীক্ষেত্র নামে প্রসিদ্ধ.. এবং সেখানে নিত্য বিরাজ করছেন স্বয়ং বিষ্ণু কলির উদ্ধারক জগন্নাথ রুপে.. বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের আরাধ্য তিনি.. সেই শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ গ্রহণ হলে তা যায় পার্শ্ববর্তী মহাদেবী সতীপীঠ বিমলা দেবীর নিকট.. জগন্নাথ প্রসাদ গ্রহণ করলেই তা মহাপ্রসাদ হয়না.. যতক্ষণ না মহাদেবী বিমলা সেই ভোগ গ্রহণ করেন..
তো এই শ্রীক্ষেত্রের মহাপ্রসাদ ব্যাতীত অন্য কোন প্রসাদকে মহাপ্রসাদ বলা যায়না.. তবে মহাবিদ্যাগণের মাংস, মৎস্য ও মদ্য এই ত্রয়কে মহাপ্রসাদ ও বলা হয়.. তার প্রমাণ স্বরুপ স্বয়ং সদাশিব মহাদেবী পার্বতীকে নিজমুখে বর্ণণ করেছেন..
আমরা প্রাচীনকাল থেকেই এক অদৃশ্য শক্তির ওপর বিশ্বাসী.. যিনি কারণের কারণ.. সকল সৃষ্টির কারণ যিনি.. এ জগতের সকল কিছুই তাঁর সৃষ্টি. আর আমরা মানুষ, যারা নিজেদের রসনা তৃপ্তির জন্য যা কিছুই ভোজন করি তাও সব কিন্তু তাঁরই সৃষ্টি.. শাক, সব্জি, ফল-ফুল, শস্য, দুগ্ধ, মৎস্য, মাংস যা কিছুই খাইনা কেন, সবই তাঁরই রচনা. যেহেতু সকল কিছুই তাঁরই রচনা, তাই আমাদের কোন সামর্থ্য নেই তাঁকে কিছু দেওয়া.. কেবল আমরা উৎসর্গ করি মাত্র.. প্রাচীনকাল থেকেই এই রীতি.. আমরা যা সকল কিছু খাই তা আমরা পরমব্রহ্মের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে নিজেরা গ্রহণ করি.. তাই আমরা যারা মাংসাশী প্রাণী তারাও মৎস্য মাংসাদি তাঁর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেই গ্রহণ করি.. এটাও কিন্তু নিয়মের অন্যথা নয়..
বামাচার তন্ত্রারাধনায় পঞ্চতত্বের মাংস মৎস্য সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ দ্রব্যদানই যথাবিহিত নিয়ম.. এখানে অনুকল্প চলেনা.. তাই মহাবিদ্যাগণের ভোগে প্রত্যক্ষ মৎস্য মাংসাদি দানের নিয়ম..
তো চলুন শাস্ত্রে মহাপ্রসাদ সম্পর্কে সদাশিব কি বলেছেন তা দেখা যাক.. ও কোন ধরণের মৎস্য বা মাংস মহাদেবীকে নিবেদন করলে তা মহাপ্রসাদ হয়, তা দেখা যাক..
🙏🏻🌼🌼শ্রী সদাশিব উবাচ🌼🌼🙏🏻
"মাংসন্তু ত্রিবিধং প্রোক্তং জলভূচরখেচরম্|
যস্মাৎ তস্মাৎ সমানীতং যেন তেন বিখাতিতম্|
তৎ সর্ব্বং দেবতাপ্রীত্যৈ ভবেদেব ন সংশয়ঃ||
সাধকেচ্ছা বলবতী দেয়ে বস্তুনি দৈবতে|
যদ্যতাত্ত প্রিয়ং দ্রব্যং তত্তদিষ্টায় কল্পয়েৎ ||"
এর অর্থ হল- শক্তি আরাধনায় মাংস সম্পর্কে তিন ধরণের মাংস নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলি হল জলচর, ভূচর আর খেচর.. এগুলি যেকোন লোকের দ্বারা আনা হোক বা বলিদান করা হোক না কেন, নিঃসন্দেহে তা দেবগণের তৃপ্তিদায়ক হয়ে থাকে.. দেবতাকে কোন মাংস দেবে বা কোন দ্রব্য দেবে তা সাধকের ইচ্ছা.. যে বস্তু বা মাংস নিজের তৃপ্তিদায়ক তাহাই ইষ্টদেবতাকে প্রদান করা কর্তব্য..
এবার বলিদান সম্পর্কে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব পার্বতীকে বলেছেন যে স্ত্রী জীবঘাত শিব আজ্ঞার বিরুদ্ধ.. তাই পুং জীবই বলিদান ক্ষেত্রে প্রযোজ্য..
মহানির্বাণ তন্ত্রে এর প্রমাণ হল..
সদাশিব উবাচ:-
"বলিদানবিধৌ দেবি বিহিতঃ পুরুষঃ পশু|
স্ত্রীপশুর্ন চ হন্তব্যন্তত্র শান্তবশাসনাৎ||"
এর অর্থ হল- হে দেবী! পুংপশুই বলিদানক্ষেত্রে বিহিত হইয়াছে.. স্ত্রীপশু বলি দেওয়া শিবের আজ্ঞার বিরুদ্ধ, সুতরাং তা দিতে নাই..
অতএব এ বোঝা গেল স্ত্রী পশু বলি দিতে নাই.. পাখির মধ্যে হংসী ও জলচরের মধ্যে স্ত্রী কচ্ছপ বলি দেওয়া যায় না..
তন্ত্রান্তরে আরো লেখা আছে মাংসাশী প্রাণীর মধ্যে বায়স, কুম্ভীর, ব্যাঘ্র ইত্যাদি এবং কীট-পতঙ্গ ও কৃমি জাতীয় জীব ত্যাজ্য...
আবার কোন কোন তন্ত্রে মতভেদ স্বরুপ উল্লেখ আছে যে-
"শক্তিমাংসং ন গৃহ্নীয়াৎ অন্ডজং জলজং বিনা||"
অন্ডজ ও জলজ জীব ব্যাতীত অন্য কোন স্ত্রী জাতীয় জীবের মাংস অগ্রাহ্য..
এই হল মাংস নিবেদনের প্রকার..
এরপর মৎস্য সম্পর্কে সদাশিব নির্দেশ দিয়েছেন-
🌼🌼 শ্রী সদাশিব উবাচ🌼🌼
"উত্তমা স্ত্রিবিধামৎস্যাঃ শালপাঠীনোরোহিতাঃ|
মধ্যমাঃ কন্টকৈর্হীনা অধমা বহুকন্টকাঃ|
তেহপি দ্রব্যৈ প্রদাতব্যা যদি সুষ্ঠুবিভর্জ্জিতাঃ||"
এর অর্থ হল- শাল, বোয়াল আর রুই এই তিন প্রকার মাছ উত্তম বলে প্রশস্ত হয়েছে.. তথাপি কন্টকহীন মাছ মধ্যম, ও বহুকাঁটাযুক্ত মাছকে অধম বলা হয়েছে.. তাও বহু কাঁটাযুক্ত মাছ যদি সুন্দর ভাবে ভর্জিত হয় বা ভাজা হয় তবে তা দেবীকে নিবেদন করা যেতে পারে....
এই হল শক্তিপূজায় ব্যাবহৃত মাছের বর্ণন.....
এরপর এইসব দ্রব্যকে যে মহাপ্রসাদ বলা হয়েছে, তার প্রমাণ স্বরুপ সদাশিব মহাদেবী পার্বতীকে নিজমুখে বলেছেন-
🌼🌼 শ্রী সদাশিব উবাচ🌼🌼
"আধারোপরি সংস্থাপ্য শুদ্ধিপাত্রস্য দক্ষিণে
মহাপ্রসাদমানীয় পাত্রেষু পরিবেশয়েৎ"
এর অর্থ হল- শুদ্ধিপাত্রের দক্ষিণে আধারের উপর স্থাপন পূর্বক, মহাপ্রসাদ পাত্রের মধ্যে পরিবেশন করবে...
অতএব শিববাক্য স্বরুপ শাক্তদের নিকট মান্যতা এই যে, মহাদেবীর পূজাতে উৎসর্গীকৃত মাছ-মাংসাদি মহাপ্রসাদ হয়..
No comments:
Post a Comment